Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মজুরি আত্মসাতের শোধ নিতে নৃশংস খুন: পিবিআই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুন ২০২৩ ১৫:০৬

অন্তর মিয়া, ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে তালাবদ্ধ ঘর থেকে মুখ ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের সাড়ে তিনমাস পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর যুবককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সূত্রবিহীন ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রহস্য উদঘাটনের দাবি করে পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুন হওয়া ব্যক্তি তাদের মজুরি আত্মসাৎ করেছিলেন। এর প্রতিশোধ নিতে দুই সহকর্মী পরিকল্পিকভাবে তাকে নৃশংসভাবে খুন করেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন অন্তর মিয়া নামে গ্রেফতার ওই যুবক। অন্তর মিয়া‘র (২৫) বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে নগরীর খুলশী থানার টাইগারপাস এলাকায় রেলওয়ে কলোনির পরিত্যক্ত ১১ নম্বর ভবনের সামনে ছেনোয়ারা বেগমের টিনশেড ঘর থেকে ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে সেসময় পুলিশ নিহতের কোনো পরিচয় পায়নি। ছেনোয়ারা বেগম শুধুমাত্র তার নাম ‘সালাহউদ্দিন’ এবং পেশায় টাইলস শ্রমিক বলে জানিয়েছিলেন। এ ঘটনায় খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন।

তদন্তে নেমে পিবিআই লাশের আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করে। এরপর ৩ মার্চ ঢাকার ধানমণ্ডি থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে শনাক্ত হওয়া আব্দুর রহমান (৩২) নামে একজনকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যে ঘটনায় জড়িত স্বপন নামে একজনের বিষয় জানতে পেরেছিল পিবিআই।

সেই ‘স্বপনই’ অন্তর মিয়া বলে জানিয়েছেন পিবিআই মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থেকে গত শনিবার আমরা অন্তর মিয়াকে গ্রেফতার করি। আদালতের নির্দেশে তাকে দুইদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এর আগে গ্রেফতার হওয়া আব্দুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পিবিআইকে যে তথ্য দিয়েছিল, অন্তর মিয়াও প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়েছেন।’

‘তিনজন একইসঙ্গে একই কাজ করতো। সালাহউদ্দিন তাদের কাজ পাইয়ে দিয়েছিল। কিন্তু মজুরির বিষয়ে অসত্য কথা বলে তাদের টাকা আত্মসাৎ করেছিল সালাহউদ্দিন। এজন্য তারা সালাহউদ্দিনকে খুন করেছে বলে জানিয়েছে। অন্তর মিয়া আদালতে জবানবন্দি দিয়ে খুনের কারণ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছে।’

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, জবানবন্দিতে অন্তর মিয়া জানায়, সে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রথমে রিকশা ও পরে অটোরিকশা চালাতো। বছরখানেক আগে অটোরিকশা চুরির চক্রে জড়িয়ে পড়ে। ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে সিএনজি অটোরিকশা চুরির একটি মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ২০ দিন পর জামিনে বেরিয়ে সে সিলেটে চলে যায়। সেখানে কিছুদিন শাহজালালের মাজারে দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে কিছুদিন কাজ করে।

পরে একটি ফুচকার দোকানে কাজ নেয়। ওই দোকানে কাজ করতে গিয়ে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সালাহউদ্দিন তার নাম জানতো- স্বপন। কারণ জেল থেকে বেরিয়ে অন্তর নিজেকে এই নামে সবার কাছে পরিচয় দিত। ‍বেতন কম হওয়ায় সালাহউদ্দিন ও অন্তর মিলে ফুচকার দোকান থেকে একটি ড্রিল মেশিন চুরি করে তারা চট্টগ্রামে চলে আসে। এরপর তারা রবি অপারেটরের অধীনে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ নেয়। আরেক শ্রমিকের সঙ্গে মারামারি করে সালাহউদ্দিনকে চলে যেতে হয়। তার সঙ্গে অন্তরও কাজ ছেড়ে দেয়। তারা মাসিক ২২০০ টাকা ভাড়ায় টাইগারপাসে ছেনোয়ারা বেগমের টিনশেড ঘরে থাকতো। পানি আলাদাভাবে কিনতে হতো।

পরবর্তীতে সালাহউদ্দিন পলোগ্রাউন্ডের বাণিজ্যমেলায় স্টল তৈরি, আসবাবপত্র আনা-নেওয়াসহ দিনমজুর হিসেবে ঠিকাদারের অধীনে কাজ নেয়। অন্তর এবং আব্দুর রহমানও সালাহউদ্দিনের সঙ্গে একই কাজে যোগ দেয়। তারা প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করতো। সালাহউদ্দিন তাদের দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরি দিত। কিন্তু একদিন তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে জানতে পারে, সকাল ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দুই শিফট ধরা হয় এবং প্রতি শিফট ৭০০ টাকা হিসেবে তাদের মজুরি আসে ১৪০০ টাকা। তারা বুঝতে পারে, তাদের এক শিফটের টাকা দিয়ে আরেক শিফটের টাকা সালাহউদ্দিন আত্মসাৎ করে আসছিল।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা সালাহউদ্দিনকে মজুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। পরে টাইগারপাসের জনৈক আলী’র মধ্যস্থতায় সালিশ হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, সালাহউদ্দিন অন্তরকে পাঁচ হাজার ও আব্দুর রহমানকে চার হাজার টাকা করে ফেরত দেবে। কিন্তু সালাহউদ্দিন সেটা না দিয়ে পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে। এমনকি বাসায় পানি কেনা বন্ধ করে দেয়। জিজ্ঞেস করলে গালিগালাজ করে সালাহউদ্দিন জানায়, যেহেতু তারা টাকা দিচ্ছে না, সেজন্য তাদের পানি দেওয়া হবে না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। সালাহউদ্দিন দু’জনের মা-বাবা ধরে গালিগালাজ করেন। সেই ক্ষোভ থেকে দু’জন মিলে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়।

অন্তরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান সারাবাংলাকে জানান, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে অন্তর ও আব্দুর রহমান মিলে সালাহউদ্দিনকে ‘উচিৎ শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করে। তারা একটি ধারালো ছোরা কিনে। লাশ উদ্ধারের তিনদিন আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সালাহউদ্দিন বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। আব্দুর রহমান ও অন্তর কিছুক্ষণ লুডু খেলে শুয়ে পড়েন।

রাত ১টার দিকে দু’জন ঘুম থেকে উঠে। অন্তর প্রথমে ঘুমন্ত সালাহউদ্দিনের গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে। আব্দুর রহমান সালাহউদ্দিনের দুই হাত চেপে ধরে। আব্দুর রহমান তার হাত থেকে ছুরি নিয়ে আবার গলায় আঘাত করে। সালাহউদ্দিন তখন সর্বশক্তি দিয়ে ছুরি কেড়ে নিতে চাইলে হালকা ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় এবং আব্দুর রহমানের হাতের কবজির ওপরে জখম হয়। তবে সালাহউদ্দিন দ্রুত নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায় এবং তার মৃত্যু হয়। তখন আব্দুর রহমান রুমে থাকা গামছা দিয়ে সালাহউদ্দিনের দুই হাত এবং স্বপন দুই পা ওড়না দিয়ে বেঁধে গামছা ও কম্বল দিয়ে লাশের মুখ ঢেকে দেয়। এরপর তারা দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে যায়। সালাহউদ্দিনের মানিব্যাগ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে নিজেরা ভাগ করে নেয়।

অন্তরের তথ্যের ভিত্তিতে ইলিয়াস খান আরও জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে দু’জন বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে অলঙ্কার মোড়ে যায়। সেখান থেকে বাসে ফেনী যায়। ফেনী থেকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট হয়ে সিলেট চলে যায়। সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল, সেখান থেকে আবার নরসিংদী গিয়ে রাত পার করে। পরদিন নরসিংদী থেকে মাধবদী যায়। সেখানে পৌঁছে আব্দুর রহমান তার মামার কাছ থেকে টাকা আনার কথা বলে চলে যায়। আব্দুর রহমান আর না ফেরায় অন্তর সিলেটে চলে যায়। সেখানে ছয় হাজার টাকা বেতনে একটি গরুর ফার্মে কাজ নেয়। ১৫ দিন কাজ করার পর সে আবার মৌলভীবাজারে চলে যায়।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে তরুণের মৃত্যু
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:১০

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর