‘বাঁশখালীর এমপির শরীর থেকে জাতীয় পার্টির গন্ধ যায়নি’
১৩ জুন ২০২৩ ২০:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর শরীর থেকে এখনও জাতীয় পার্টির গন্ধ রয়েছে বলে মন্তব্য এসেছে চট্টগ্রামের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করা হয়। সাংবাদিক ফারুক আবদুল্লাহ বিরুদ্ধে এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিক ফারুক আবদুল্লাহ বড় ভাই জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘এমপি মোস্তাফিজ একসময় জাতীয় পার্টি করতেন। এখনও জাতীয় পার্টির গন্ধ তার শরীর থেকে যায়নি। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারী সাঈদীর পুত্র শামীম-বিন-সাঈদীর অনুষ্ঠানে তার সম্মতিক্রমে প্রধান অতিথি হিসেবে এমপি’র পোস্টার ব্যানার সাঁটানো হয়েছিল।’
‘সেই সময়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদের মুখে পড়ে অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হননি। ২০১৬ সালের ১ জুন ইউপি নির্বাচনে পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন এমপি মোস্তাফিজ, তা করতে না পেরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল কবিরকে মারধর করার অভিযোগ পরবর্তী এ ঘটনায় মামলাও হয়েছিল।’
‘এরপর ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভায় তার বিরুদ্ধে জামায়াতপ্রীতির অভিযোগ আনেন জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও আওয়ামী লীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মুজিবুল হক। এ সময় মুজিবুল হকের দিকে জুতা নিয়ে তেড়ে যান এমপি মোস্তাফিজ।’
‘তাছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধ দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ঘটনায় এমপি মোস্তাফিজের মদদে জামায়াত নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল বাঁশখালীতে। জাতীয় দিবসে জামায়াত নেতাদের নিয়ে শহিদ মিনার পুষ্পস্তবক প্রদান, জামায়াত ঘরানার লোককে কাজী নিয়োগসহ জামায়াত প্রীতির অভিযোগ রয়েছে এমপি মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে এমপি মোস্তাফিজের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী ও বাঁশখালী থানা পুলিশ নিয়মিত আমাদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। আমার ছোট ভাই সাংবাদিক ফারুক আব্দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করছে।’
‘মামলার এজাহারে বাদী মোরশেদুর রহমান নাদিম উল্লেখ করেছে, এমপি মোস্তাফিজের নির্দেশনায় বাঁশখালী থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মামলাটি যখন দায়ের করা হয় তখন বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত)’র দায়িত্বে ছিলেন কামাল উদ্দিন।’
‘বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে হামলা ও মামলাসহ নানা কারণে বদলি হওয়ার পর আবারও ওসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এমপিকে খুশি করতে একতরফাভাবে তড়িঘড়ি করে এই মামলার চার্জশিট প্রদান করেছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ২৬ জুলাই শহিদ মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই ও আমার বাবা বীর মুক্তিযাদ্ধা ডা. আলী আশরাফে মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান গার্ড অব অনার প্রদান না করার পেছনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ইন্ধনদাতা হলেন বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। একই সময়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযাদ্ধা সম্পর্কে অবমাননাকর এবং আপত্তিকর বক্তব্য, বাঁশখালী ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধনে সংসদ সদস্যর প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ন্যাক্কারজনক হামলা করা হয়েছিল। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা নিয়েও বিতর্কিত বক্তব্য দেন তিনি।’
‘এ সব ঘটনায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মুক্তিযাদ্ধারা এমপি মোস্তাফিজের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করাসহ বাংলাদশ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছিল। একইসঙ্গে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পেশাজীবি, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আমার ভাই ফারুক আব্দুল্লাহও সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু এমপি মোস্তাফিজ রাজনৈতিকভাবে এ বিষয়কে মোকাবিলা না করে মামলা, হামলা, জেল-জুলুমের পথ বেছে নেয়।’
‘আমাদের পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে এমপি মোস্তাফিজ তার বাহিনী দিয়ে নানামুখী অত্যাচার, নিপীড়ন চালাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১ আগস্ট বাঁশখালী থানায় ফারুক আব্দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের করে। শুধু তাই নয়, এর আগে তিনি বাংলাদশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সম্পর্কেও কটূক্তি করেছিলেন।’
এ সময় চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা অর্থ কমান্ড বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব রাজিশ ইমরান, যুবলীগ নেতা জহির উদ্দিন বাবর ও ছাত্রলীগ নেতা আবদুল কাদের রিমন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ মে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মিছিল করে বিতর্কে জড়ান চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য, এমপিদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, বাঁশখালীতে নিজ দলের বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনপীড়নসহ নানা কারণে তিনি বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে আসছেন।
সারাবাংলা/আইসি/একে