Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেড় যুগ পর সম্মেলন, ১ বছর পর কমিটি— নেতৃত্বে আগের ২ নেতা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুন ২০২৩ ২১:২৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেড় যুগ পর অনুষ্ঠিত সম্মেলনের এক বছর পর আংশিক কমিটি পেয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ। ১৩১ পদের মধ্যে মাত্র ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের যৌথ সইয়ে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সভাপতি হয়েছেন মাহবুবুল হক সুমন এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে দিদারুল আলমকে।

বুধবার (১৩ জুন) বিকেলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ-দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিষয় জানান। তবে কমিটি নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কমিটিতে যুবলীগের আগের কমিটির নেতাদের আধিক্য, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘বিতর্কিত’ কয়েকজনের নাম থাকা নিয়ে সমালোচনা চলছে। আর কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ-দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনমাসের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে।’

দেড়যুগ পর ২০২২ সালের ৩০ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একইসময়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনও হয়েছিল। দুই সাংগঠনিক জেলায় আগেই কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সম্মেলনের একমাস পরও নগর যুবলীগের কমিটি ঘোষণা না হওয়া নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনরে বলয়ের মধ্যে সমতা তৈরি করতে না পারায় কমিটি ঘোষণা করা যাচ্ছিল না, এমন আলোচনা ছিল।

২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি হয়েছিলেন চন্দন ধর এবং সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান। তাদের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত করে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১০১ সদস্যের কমিটির মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। কিন্তু তারা নয় বছর দায়িত্ব পালন করে। সম্মেলনের দিন ওই কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা ও ফরিদ মাহমুদ যুবলীগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন।

তবে দুই যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম যুবলীগের রাজনীতিতে থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত বিগত কমিটির দুই নেতা সুমন ও দিদারুলকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিল কেন্দ্র। মাহবুবুল হক সুমন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে সরকারি সিটি কলেজকেন্দ্রিক রাজনীতিতে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজনের ‘ভাবশিষ্য’ হিসেবেও পরিচিত।

সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এম এ মান্নানের সন্তান। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বলয়ে থেকে রাজনীতি করেন।

নওফেলের অনুসারী হিসেবে নতুন কমিটিতে সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। কেন্দ্রীয় নেতারা নিশ্চয় উনাদের বিবেচনায় যাদের দক্ষ ও যোগ্য মনে করেছেন তাদের দিয়ে কমিটি করেছেন। আমি নতুন কমিটিকে স্বাগত জানাই। যদিও কমিটিতে পুরনোদের জয় জয়কার হয়েছে। নতুনদের জায়গা তেমন হয়নি। তবুও আমি আশা করি, সবাই মিলে চট্টগ্রামে যুবলীগ শক্তিশালী হয়ে এগিয়ে যাবে।’

নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন নগর যুবলীগের আগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল আনোয়ার, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন। তিনজনের মধ্যে শুধুমাত্র নুরুল আনোয়ার এক নম্বর সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন।

নুরুল আনোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ১৯৮৫ সালে স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগ করেছি। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ছাত্রলীগের লিয়াকত শিকদার-নজরুল ইসলাম বাবু কমিটির সদস্য ছিলাম। মহিউদ্দিন ভাইয়ের নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। জেল খেটেছি। যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল, সাধারণ সম্পাদক পদ পেলে আমি আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নেব। কিন্তু যে পদ আমাকে দেওয়া হয়েছে সেটি আমার কাঙ্ক্ষিত পদ নয়।’

নুরুল আজিম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমিটি দেখে আমি প্রথমে অট্টহাসি দিয়েছি। এখনও হাসছি। এটাই প্রতিক্রিয়া। এটা লিখে দিতে পারেন।’

ফজলে রাব্বী সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমিটি আমাদের মতো শিক্ষিত সাবেক ছাত্রনেতাদের হতাশ করেছে। কমিটি সম্পূর্ণ একপেশে হয়েছে। এই কমিটি বরং তরুণ সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি অনুরোধ থাকবে, যাদের মাঠে অবস্থান আছে, দলের আদর্শ বাস্তবায়নে যারা সচেষ্ট, যারা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বাড়াতে মাঠে কাজ করছে, তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে সংগঠনকে গতিশীল করা হোক। যুবলীগের মতো একটি সংগঠনে বয়স কেবল যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না ‘

আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব এবং নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য দিদারুল আলম দিদার। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইয়াছির আরাফাত। এদের মধ্যে শুধুমাত্র দিদারুল আলম দিদার যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সভাপতি পদপ্রত্যাশী দেবাশীষ পাল দেবু হয়েছেন ছয় নম্বর সহ-সভাপতি। নতুন কমিটিতে যারা সহ-সভাপতি হলেন- নুরুল আনোয়ার, বেলায়েত হোসেন বেলাল, আরশাদ আসাদ, আনজুমান আরা, হেলাল উদ্দিন আহম্মদ, দেবাশীষ পাল দেবু, সুরঞ্জিত বড়ুয়া লাবু, আসহাব রসূল চৌধুরী জাহেদ, চসিক কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, শাহজাদা মো. সাখাওয়াত হোসেন সাকু ও নুরুল আলম মিয়া।

যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন- দিদারুল আলম দিদার, মো. সালাহউদ্দিন, ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী এবং সাইফুদ্দিন আহমেদ।

সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন- সনত বড়ুয়া, মো. দিদারুর রহমান দিদার, গিয়াসউদ্দিন তালুকদার, আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, এজেএম মহিউদ্দিন রনি, সুমন চৌধুরী ও মনোয়ার উল আলম চৌধুরী।

গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক, আইনবিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান রুমেল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাফেজ কে এম শহীদুল কাউসার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম, জনশক্তি ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক নঈমউদ্দিন খান, ক্রীড়া সম্পাদক রাজীব হাসান রাজন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক আলমগীর টিপু, উপ স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, উপ ক্রীড়া সম্পাদক শাহজাহান আহমেদ সানি, সহ-সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ, ইব্রাহিম খলিল নিপু এবং সদস্য হয়েছেন আলী ইকরামুল হক, মো, ওয়াসিম ও খন্দকার মোক্তার আহমেদ।

সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ আশপাশের এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য আলোচিত। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক আলমগীর টিপু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে নগরীর সিআরবিতে রেলের টেন্ডার নিয়ে সংঘর্ষে জোড়া খুনের মামলা ছিল। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে খুনের অভিযোগেও আদালতে দায়ের হওয়া একটি মামলায় তিনি আসামি ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি এসব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কমিটি চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর