Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জামায়াতকে সভার অনুমতি দেওয়া কিসের আলামত: মেনন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুন ২০২৩ ২০:২১

ঢাকা: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য আইনমন্ত্রী মাঝে মাঝেই সরকারের উদ্যোগের কথা বলেন, সেই জামাতকে ১০ বছর পর প্রকাশ্য সভা করার অনুমতি দিয়েছে, এটা কিসের আলামত?’

বুধবার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তবিত বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, এটা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন জামাত যুদ্ধাপরাধীর দল, ঘাতক দল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের রায়ে একথা বলেছে। এজন্য নতুন করে আদালতের রায়ের প্রয়োজন নাই। জামাত কিন্তু তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরে নাই। বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা বলেছিলেন, বিএনপি-জামাত একই বৃত্তের দু’টি ফুল। যে কথাটা আমি সব সময় বলি, এখনো বলছি, সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে। জামাত-হেফাজতের সঙ্গে তোষামোদ-সমঝোতা সেই ফলই দেবে।’

তিনি বলেন, রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হাতে থাকলেও বাংলাদেশের সমাজ দ্রুতই বেদখল হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সাম্রারাজ্যবাদের পৃষ্টপোষকতায় ওয়াহাবি-মওদুদীবাদী প্রচারণা বাংলাদেশ উদারনৈতিক ইসলামের ঐতিহ্য বিপন্ন। জন্ম নিচ্ছে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দেশের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রগ্রস্থ করছে। সোশাল মিডিয়ায় এই উগ্রবাদী অসহিষ্ণুতা প্রচার লাগাম টানার কোন ব্যবস্থা নাই। এই সংসদে সে সব বক্তব্যের পেনড্রাইভ দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা দেখিনি। লোকায়ত সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আউল-বাউল, যাত্রাপালা ও গাজীর গান উগ্রবাদীদের আক্রমণের সম্মুখীন।’

বিজ্ঞাপন

মেনন আরও বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যাদের বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নাই। বেশ কিছু সময় আগে বাংলাদেশকে তার বাগে রাখতে স্যাংশন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এটা কেবল, দুরভিসন্ধিমূলক নয়, তাদের রেজিম চেঞ্জের কৌশলের অংশ। তারা সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়। আর তার জন্য শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এটা তাদের পুরাতন নীতির ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে তারা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। তীব্র খাদ্য সংকটের সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করতে মধ্যসমুদ্র থেকে গমের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যার পিছনে তাদের কালো হাত ছিল। এখন আবার বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সব কিছু করছে। প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন করে বলতে চাই বাইডেন সাহেব ট্রাম্পকে সামলান। আমাদের ঘর আমরা সামলাব। নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে রেখেই হবে। বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। তারেক রহমান নির্বাচন না করে ২০২৯ সালের জন্য অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু বিএনপি এর মধ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পরবে। তার সেই স্বপ্নও পূরণ হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবে। উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে।’

রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, ‘সম্প্রতি সময়ে দেশে সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের আর নিরাপদ বোধ করেন না। তাদের মধ্যে মানসিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগই তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও মাইনরিটি কমিশন গঠনের কথা বলেছিল। গত দেড় দশকে তার কোনো বাস্তবায়ন নাই। নির্বাচনের আগেই তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অর্পিত সম্পত্তি আইন করা গেছে, তার বাস্তবায়নের পথে নানা বাধা। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, মানসিক প্রশান্তিও এদেশে তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপগুলো জরুরি।’

বিজ্ঞাপন

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে মেনন বলেন, ‘এই বাজেটে বাংলাদেশের বর্তমান কার্যত অনুপস্থিত। বাজেটের ধারা বর্ণনায় অর্থমন্ত্রীর প্রধান বিষয় ছিল গত দেড় দশকের অতীতের অর্জন। আর ভবিষ্যৎ দশকের সুখ স্বপ্নের কথা। বাজেট দেখে মনে হয় নাই এটা সংকটকালের বাজেট। সংকট এখন সর্বব্যাপী। মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, জ্বালানি সংকট, ডলার সংকট, নদীর পানির সংকট, কোথায় সংকট নাই? স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই সংসদে দাঁড়িয়ে যখন বলছেন, মূল্যস্ফীতি ও লোডশেডিংয়ে জনগণের জীবন কষ্ট নেমে এসেছে। সেখানে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি ৬ শতকে ধরে রাখার আশাবাদ শোনালেও কিভাবে সেখানে নামিয়ে আনবেন তার কোন কৌশল বা নির্দেশনা বাজেটে দেননি। তিনি কেবল আশা প্রকাশ করেছেন, বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য নিম্নগামী। বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি মূল্য সমন্বয় ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের কারণে মূল্যস্ফিতি কমে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ইতিমধ্যেই গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতেও ভারত-নেপাল যেখানে মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনতে পেরেছে, সেখানে বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে। বড় বড় অর্থনীতিগুলো যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে, অর্থমন্ত্রী সেখানে সেটা ধরে রেখেছেন। ডলার সংকট নিরসনে ডলারকে বাজার ব্যবস্থার উপর ছেড়ে না দিয়ে ধরে রাখা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দে মেগা প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ ঠিক রাখা হয়েছে। যেখানে সংকোচন করা হয়েছে তা নিতান্তই প্রান্তিক।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সমালোচনা করে মেনন বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম দুর্বলতার কারণে জিনিসপত্রের মূল্য একেবারেই লাগাম ছাড়া। পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপেই বোঝা যায়, বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা আগ্রহী নন। অথবা কাউকে সুবিধা দিতে চান। দশদিন ধরে পেঁয়াজের মূল্য বাড়তে দিয়ে সিন্ডিকেটের হাতে বাজার ছেড়ে যখন পেঁয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্ত হলো। ততদিনে ভোক্তা সাধারণ মানুষ কেবল নয়, কৃষকও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’

বিদ্যুৎ সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শতভাগ বিদ্যুতায়নের যে গৌরব অর্জন করেছিলেন, সাম্প্রতিককালেই কেবল নয়, বেশ কিছুদিন ধরে দেশের অধিকাংশ স্থানকে অধিকাংশ সময় অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে তাতে কালিমা লেপন করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসে। প্রধানমন্ত্রী এই সত্যকে স্বীকার করেছেন, তার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছেন। জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এটা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের উপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। স্পট মার্কেটে এলএনজি’র মূল্য বেড়ে যাওয়া, আমদানিকৃত কয়লার মূল্য পরিশোধ করতে না পারার কারণে যথাসময়ে জ্বালানি আনা সম্ভব হয়নি। এর মূলে রয়েছে ভ্রান্ত জ্বালানি আমদানি নীতি। এলএনজি লবির মুনাফার স্বার্থ দেখতে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস উৎপাদনে বিনিয়োগ না করা। বাপেক্সকে অকার্যকর রাখা। অথচ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গ্যাসকূপ খনন করলেই গ্যাস পাওয়া যায়। ভোলায় দুইটি কূপের বিপুল পরিমাণে গ্যাস প্রাপ্তি তার প্রমাণ। কিন্তু ওই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসা এখনো সম্ভব হয়নি। সমুদ্র থেকে গ্যাস আহরণে কেবল অযথা সময় ক্ষেপন করিনি, এই গ্যাস ব্লকগুলো বিদেশি কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সমুদ্রের গ্যাসও আমাদের অধরা রয়ে গেছে। ভারত-মায়ানমার সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করলেও আগ্রহ বা সিদ্ধান্তের অভাবে এই গ্যাস আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

রাশেদ খান মেনন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর