Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘১৪ বছরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় অনেক সাফল্য অর্জন করেছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুন ২০২৩ ২১:৫০

ঢাকা: গত ১৪ বছরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় অনেক সাফল্য অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক )। বুধবার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদে নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদকে এ কথা জানান।

মন্ত্রী জানান, বস্ত্র অধিদফতর ৫টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ১০টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং ১টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে। বস্ত্র নীতি ২০১৭: বস্ত্র আইন ২০১৮; শিল্প (নিবন্ধন ওয়ানস্টপ সার্ভিস কেন্দ্র) বিধিমালা, ২০২১ প্রণয়ন করেছে।

বস্ত্র অধিদফতের টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে এসএসসি (ভোকেশনাল) কোর্সে ৪০২৯৫ জন, ডিপ্লোামা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ৮৫২২ জন এবং বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়রিং কোর্সে ৩০৫৮ জন পাস করেছে।

২০০৯-১০ অর্থবছরে বস্ত্রখাত থেকে দেশের মোট রফতানি আয়ের ৭৭.১২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে, যার পরিমাণ ১৬.২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। অপরদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বস্ত্রখাত থেকে দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮১.৮১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে, যার পরিমাণ ৪২.৬১ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বর্তমানে এখাতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ কর্মরত রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী।

অর্জনগুলো তুলে ধরে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘বস্ত্র অধিদফতরের ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বস্ত্র শিল্পের পোষক কর্তৃপক্ষের আবেদন প্রাপ্তি ৪৯২৪৩টি এবং নিষ্পত্তি ৪৮৪৩৭টি, অগ্রগতির হার ৯৮.৩৬%। পোষাক কর্তৃপক্ষের কাজের মাধ্যমে মোট ১১,১৭,৫৬,২৯৬ টাকা বিনিয়োগ ফি (নন-ট্যাক্স রেভিনিউ) আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।’

এছাড়া, ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার ১৭৫.৫৭৯ মিলিয়ন টাকা স্থানীয় বিনিয়োগ, ৮৭৬২৮.২৬২ মিলিয়ন টাকা বিদেশি বিনিয়োগ এবং ৭৪৬৪৯.১৭৩ মিলিয়ন টাকা যৌথ মালিকানায় বিনিয়োগ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বস্ত্রখাতের উন্নয়ন ও প্রসারের লক্ষ্যে প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর জাতীয় বস্ত্র দিবস উদযাপন করা হয়। ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা-২০১৩, পাট আইন-২০১৭, জাতীয় পাটনীতি-২০১৮ এবং চারকোল নীতিমালা-২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে।’

এছাড়া দেশের ৪২টি পাট উৎপাদন পাটচাষিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতির পাটচাষের কলাকৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং সরকারি প্রণোদনা হিসেবে তালিকাভুক্ত পাটচাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বিতরণ করা হয়।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায়, বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকাই মসলিনের সুতা ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং মসলিন তৈরির ফুটি কার্পাস তুলা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অনুকূলে ঢাকাই মসলিনের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকাই মসলিনের প্রযুক্তি পুনরুদ্ধারের কারণে আলোচ্য প্রকল্পকে জনপ্রশাসন পদক-২০২১ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ৩১৬ জন দক্ষ স্পিনার এবং ৪০ জন তাঁতি প্রি উইভিং তাঁতিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের আওতায় ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১টি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং ২টি মার্কেট প্রমোশন কেন্দ্র (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নরসিংদী এর আধুনিকায়ন ও অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া রংপুর ও সিলেটে ২টি তাঁত প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের আওতাধীন বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নরসিংদীর মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ৫৫৯ জন শিক্ষার্থীকে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-টেক্সটাইল ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ‘তাঁতিদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি’র আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ২৫৫৮৩টি তাঁতের বিপরীতে ১০,৭৩৮ জন তাঁতিকে ৩২৫১.৫৩ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

তাছাড়া বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত বাস্তায়িতব্য প্রকল্প/কর্মসূচির মাধ্যমে প্রান্তিক তাঁতিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। তাঁতিদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৬,৯৫১টি তাঁতের বিপরীতে ৬৫৯৭ জন তাঁতিকে মোট ৭৮৭৫.৫০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের ফলে এ পর্যন্ত ১.৫০ লাখ তাঁতির কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক দেশব্যাপী রেশম সম্প্রসারণ এলাকার রেশম চাষিদের মধ্যে ৬৯.৭৮ লাখ তুঁতচারা এবং ৫৫.২৮ লাখ রোগমুক্ত রেশম ডিম বিতরণ করা হয়েছে। রেশম গুটি ২,১৫৭০০ মেট্রিক টন ও রেশম সুতা (সরকারি পর্যায়) ১৪ হাজার কেজি এবং রাজশাহী রেশম কারখানায় ৩১ হাজার ৯৬৮ মিটার রেশম কাপড় উৎপাদন করেছে। রেশম চাষকে টেকসই ও লাভজনক করার জন্য ফার্মিং পদ্ধতিতে ৬৩৪ বিঘা জমিতে তুঁতচাষ করা হয়েছে। রেশম চাষে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১২ হাজার ৪৯১ জন রেশম চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

২০০২ সালে বন্ধঘোষিত রাজশাহী রেশম কারখানাটি সরকারি সিদ্ধান্তে ২০১৮ সালে পুনরায় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে এবং ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনা চালুর লক্ষ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন পলিথিনের বিকল্প পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া পাট পাতা হতে জৈব পানীয় (চা) বিশ্বব্যাপি বিজেএমসি’র একটি নতুন উদ্ভাবন, যার পাইলট প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে নতুন পণ্যের পরিচিতি ঘটে। ২০১০-১১ অর্থবছর হতে ২০১১-১২ অর্থবছর পর্যন্ত ৭৯৯১.৩৯ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করেছে, বিজেএমসি’র আওতাধীন ২৫টি মিলের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১৭টি ও পরবর্তীতে ২টি নন-জুট মিলসহ ১৯টি মিল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ইজারাভিত্তিতে পুনঃচালুর বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়। সে মোতাবেক সরকার নির্ধারিত মোট ৯টি মিল ইজারা দিয়েছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ করপোরেশন সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন, ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় মিল পরিচালনার লক্ষ্যে সিসিইএ কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত বিটিএমসি’র ১৬টি মিলের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায় ২টি মিল (আহমেদ বাওয়ানী টেক্সটাইল মিলস, ডেমরা, ঢাকা ও কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস, টঙ্গী, গাজীপুর) চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে এবং ১টি মিল (কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস লি.) গ্রিন ফিল্ড হিসেবে প্রাইভেট পার্টনারের নিকট হস্থান্তর করা হয়েছে।’

কুমিল্লা-৮ আসনের সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরীর অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘বর্তমান সরকার গত এক দশকে তাঁত শিল্পের প্রসারের নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাঁত শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ তথা তাঁতিদের আৰ্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কর্তৃক তাঁতবান্ধব বিভিন্ন কর্মকান্ড গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮৪%, বস্ত্রখাত হতে অর্জিত হয়।’

তাঁত শিল্পের উন্নয়নে ও তাঁতীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে লক্ষ্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও

গোলাম দস্তগীর গাজী টপ নিউজ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী সাফল্য


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর