Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শান্তি নিবাস প্রকল্পের গোড়ায় গলদ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুন ২০২৩ ০৯:৫০

ঢাকা: প্রবীণদের জন্য দেশের আট জেলায় স্থাপন করা হচ্ছে শান্তি নিবাস। সরকারি আটটি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট এ শান্তি নিবাস স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে প্রবীণদের সঙ্গে সহাবস্থানের ভিত্তিতে পারিবারিক আবহে শিশুদের বেড়ে ওঠা নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নানা দুর্বলতা নিয়েই চলছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। শুরু থেকেই প্রকল্পটি ভুলে ভরা। প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয় ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করেই। এর ফলে প্রকল্প নেওয়ার সময় প্রকল্পের চাহিদা সম্পর্কিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া প্রকল্পের ঝুঁকিগুলোও আগে থেকে জানা সম্ভব হয়নি। তাই প্রকল্পের সময় নির্ধারণ করাও অযৌক্তিক হয়েছে। ইতোমধ্যেই মূল ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) থেকে আরডিপিপিতে (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ৫০ শতাংশ সময় বৃদ্ধি পেয়েছে।

মূল ডিপিপিতে মেয়াদ ও প্রাক্কলন যথার্থ ছিলনা বলেই এমনটি হয়েছে। ‘৮টি সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শষ্যা বিশিষ্ট শান্তি নিবাস স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পে উঠে এসেছে এমন চিত্র। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক নিবিড় পরীক্ষণ সমীক্ষায় পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

ইতোমধ্যেই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সমীক্ষা কার্যক্রম শেষ করেছে আইএমইডি। সংস্থাটির দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্প তৈরি, অনুমোদন এবং আস্তবায়ন পর্যায়ে নানা জটিলতা দেখা দেখ। প্রকল্পটি তৈরির আগেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হলে এগুলো এড়ানো যেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো.মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, দ্রুতই প্রতিবেদনগুলো চূড়ান্ত করা হবে। এর পর যেসব সমস্যা উঠে আসবে সেগুলো সমাধানের জন্য আইএমইডির পক্ষ থেকে প্রতিবেদনের সঙ্গে একটি চিঠি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যাতে নতুন কোন প্রকল্পের নেওয়া ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যা না হয়।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিপিপিতে উল্লেখিত বছরভিত্তিক যে ভৌত ও আর্থিক টার্গেট দেওয়া আছে তা বাস্তব সম্মত মনে হয়নি। কারণ ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২২ পর্যন্ত দুই অর্থবছরের প্রকল্পের আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকৃত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫ কোটি ৭০ লাখ ১৭ হাজার টাকা, যা অনেক কম। ডিপিপি তৈরির সময় প্রকল্পের নির্মাণ কাজের লে-আউট-ড্রয়িংয়ের পাশাপাশি বিস্তারিত স্থাপত্য নকশাসহ ডিপিপি প্রণয়ন করা উচিত ছিল। কারণ স্ট্রাকচারাল, আর্কিটেকচারাল ও ই বা এম ড্রয়িংসহ ডিপিপি প্রণয়ন করা হলে প্রকল্পের মূল পরিবর্তনসহ নানা ধরনের জটিলতার একটি স্থায়ী সমাধান সম্ভব। সেই সঙ্গে সময় সম্পর্কে একটা ধারনাও পাওয়া যেত।

প্রকল্পের দুর্বল দিকঃ আইএমইডির খসড়া প্রতিবেদনে উঠে আসা দুর্বল দিকগুলো হচ্ছে, এই প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন প্রকার ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। এটি একটি অন্যতম দুর্বল দিক। এছাড়া প্রকল্পের শুরুর তারিখ থেকে কিছুটা দেরিতে প্রকল্প অনুমোদন ও প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হয়েছে। মূল ডিপিপির বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ডিপিপি বা আরডিপিপিতে উপকারভোগী নির্বাচনের কোন নীতিমালা নেই। এই প্রকল্পের ডিপিপি বা আরডিপিপিতে শান্তি নিবাসের পরিচালনা ও সেবা দানের জন্য জনবলের বিষয়টি স্পষ্টকরণ করা হয়নি। প্রকল্পের পূর্তকাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করতে হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপিতে প্রকল্পের এক্সিট প্লান সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ধারনা নেই।

প্রকল্পের ঝুঁকিঃ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বন্যা ও ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি, ইউটিলিটি স্থানন্তর ও প্রকল্প সাইটের গাছ অপসারণে দীর্ঘসূত্রিতা এবং নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারের কাজের ধীরগতির সম্ভাবনা রয়েছে। যেটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতিঃ প্রকল্পের শুরু থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা যা মোট প্রাক্কলন ব্যয়ের ৫৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। প্রকল্পের অর্জিত বাস্তব অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এছাড়া ৮টি সরকারি শিশু পরিবারে ৫ তলা ভিতের উপর ৩ তলা বিশিষ্ট মোট ৮টি শান্তি নিবাস ভবন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮টি শান্তি নিবাস ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। অতিক্রান্ত বাস্তবায়ন সময়ের সঙ্গে অগ্রগতি সমানুপাতিকের চেয়ে কিছুটা কম রয়েছে। তবে সন্তোজনক বলা যায়। কারণ প্রকল্পের শুরু ও প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ উভয়েই বিলম্বিত হয়।

ডিপিপি পর্যালোচনাঃ প্রকল্পের ডিপিপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৮টি সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট শান্তি নিবাস স্থাপন নামে প্রকল্পটি ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাচাই বাছাই কমিটি অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর ৮টি সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট শান্তি নিবাস স্থাপন নামে মন্ত্রণালয় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।

২০২০ সালের ২২ জুলাই প্রকল্পের আরম্ভের তারিখ ২০২০ সাল ঠিক রেখে একনেক সভায় প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয় এবং ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর জিও অনুমোদন করা হয়।

দেখা যায়, প্রকল্প অনুমোদনের তিন মাস পরে জিও জারি করা হয়। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জিও ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জারি করা হয়। প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় ৫ মাস পরে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জিও জারি করা হয়। ২০২০ সালে প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে শুরু হওয়ার পর ২০২১ সালে বাস্তবে রুপ নেওয়ার জন্য প্রায় ৮ মাস সময় নেয়। প্রকল্পের শান্তি নিবাস ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বালক-বালিকা এবং যে সকল সরকারি শিশু পরিবারে সহজে বেশি জমি পাওয়া যাবে সেই সকল সরকারি শিশু পরিবারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৮২ কোটি টাকা। চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রকল্পটির মেয়াদ।

যেসব শিশু পরিবারের হচ্ছে শান্তি নিবাসঃ শান্তি নিবাস (প্রবীণা), শেখ রাসেল দু:স্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, টুঙ্গি পাড়া প্রকল্পের অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। শান্তি নিবাস, সরকারি শিশু পরিবার, লালমনিরহাট প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। শান্তি নিবাস, সরকারি শিশু পরিবার ময়মনসিংহ প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। শান্তি নিবাস সরকারি শিশু পরিবার, সুনামগঞ্জ প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। শান্তি নিবাস , সরকারি শিশু পরিবার, নোয়াখারী প্রকল্পের অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। শান্তি নিবাস, সরকারি শিশু পরিবার , রাজশাহী প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। শান্তি নিবাস, সরকারি শিশু পরিবার, খুলনা প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ এবং শান্তি নিবাস, সরকারি শিশু পরিবার, বরিশাল প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ।

সারাবাংলা/জেজে/এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর