আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী জয়, বিএনপি এখনও নিশ্চিত নয়
১৬ জুন ২০২৩ ০৭:৫০
সিরাজগঞ্জ: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার যমুনাবিধৌত সিরাজগঞ্জ। নয়টি উপজেলা নিয়ে এই জেলা গঠিত হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এলাকা অনুযায়ী আসন সংখ্যা ছয়টি। আর মোট ভোটার সংখ্যা ২৫ লাখ ১৪ হাজার ২৪০ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনে শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তারা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতার সরব জানান দিচ্ছেন তারা।
এইসব আসনে বিএনপির অস্তিত্ব রক্ষা আর আওয়ামী লীগের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। বিএনপি ভেতরে ভেতরে গণসংযোগ চালালেও নির্বাচনি মাঠ গরম রেখেছে মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, মাঠে ততই উত্তাপ ছড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এখন পর্যন্ত গণসংযোগ আর উঠোন বৈঠক প্রচারণায় এগিয়ে আওয়ামী লীগ। নৌকার টিকিট পেতে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত বর্তমান ও সাবেক এমপি-মন্ত্রীরা। আর সংসদের বাইরে থাকলেও নির্বাচনে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ব্যস্ত বিএনপি।
সিরাজগঞ্জের অন্যতম একটি উপজেলা কাজিপুর। এই উপজেলা একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। জাতীয় চার নেতার অন্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহিদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর জন্মভূমি কাজিপুর। সেই সুবাদে যমুনা নদীবেষ্টিত ভাঙনকবলিত এই এলাকাটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। গুরুত্বপূর্ণ কাজিপুর উপজেলা ও সদরের আংশিক নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-১ আসন। এই আসনের রাজনীতিতে শহিদ মনসুর আলী পরিবারের নামই বারবার ফিরে আসে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর পর তার পুত্র নাসিম ১৯৮৬ সালে তৃতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচন প্রায় সব দল বর্জন করে। আর স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলেও ওই আসনটি আওয়ামী লীগ মনোনীত নাসিমের দখলেই থেকে যায়। এর পর ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিতর্কিত নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করে। একই বছর ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসন থেকে ফের নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পাশাপাশি তিনি সিরাজগঞ্জ-২ আসনটিতেও বিজয়ী হন। পরে অবশ্য তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি ছেড়ে দেন। তখন সেখানে উপনির্বাচন দিলে তার ভাই ড. সেলিম জয়লাভ করেন। সেবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
এর পর ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসে বিএনপি। কিন্তু সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি নাসিমের দখলেই থেকে যায়। আর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম অংশ নিতে না পারায় তার পুত্র তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সেই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। যদিও নাসিমপুত্র জয় ২০১৪ সালের ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বাবাকে ফের আসনটি ছেড়ে দেন। সেই নির্বাচনে নাসিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। আর সর্বশেষ একাদশ নির্বাচনেও আসনটিতে জয়লাভ করেন মোহাম্মদ নাসিম। কিন্তু নাসিমের মৃত্যুর পর ফের তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় উপনির্বাচনে জিতে সংসদে আসেন।
বর্তমানে এই আসনটিতে বিএনপির তেমন কোনো কর্মকাণ্ড এবং জোরালো দলীয় কর্মসূচিও নেই। বিএনপির যারা নেতৃত্ব দেন তাদের বেশির ভাগই থাকেন কাজিপুরের বাইরে। সব মিলিয়ে আসনটির দখল এবারও আওয়ামী লীগের এই ঐতিহ্যবাহী পরিবারটির হাতেই থাকবে বলে ধারণা করছেন অনেকে। এবারও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান নাসিমপুত্র বর্তমান সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। জয় ছাড়াও আসনটিতে মনোনয়ন পেতে তার চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রয়াত সদস্য ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরিন সেলিম রিপন মাঠে রয়েছেন।
বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন এই আসনে। তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা, কাজিপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সেলিম রেজা, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান।
কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান শিরাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘একসময়ের অবহেলিত কাজিপুর এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন, তার আওতায় আমাদের নেতা তানভীর শাকিল জয় কাজিপুরে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে তানভীর শাকিল জয়ের বিকল্প এখানে কেউ নেই।’
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কাজীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল হাসান তালুকদার রানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গায়েবি মামলায় মাসের পর মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে। তারপরও দল ছাড়িনি। দলের সব কর্মসূচি পালন করছি। কাজিপুর উপজেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি। এর আগে, আমাকে কাজীপুর আসনে একবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। এবারও আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী।’
উল্লেখ্য, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬২৭ জন, নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ২৮৩ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন একজন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিন জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নাসিমপুত্র তানভীর শাকিল জয় (নৌকা) পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৫ ভোট, বিএনপি মনোনীত মো. আব্দুল মজিদ (ধানের শীষ) পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ৮১৪ ভোট। এছাড়া মো. আব্দুল বাকী (কাস্তে) পেয়েছিলেন ১ হাজার ৮০৬ ভোট।
২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে তিন জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম (নৌকা) পেয়েছিলেন ৩ লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ ভোট এবং বিএনপির রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা (ধানের শীষ) পেয়েছিলেন ১ হাজার ১১৮ ভোট এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আল আমিন সিরাজী (হাতপাখা) পেয়েছিলেন ৩২৭ ভোট।
সারাবাংলা/আরএ/পিটিএম
আওয়ামী লীগ কনক চাঁপা তানভীর শাকিল জয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি শেহেরিন সেলিম রিপন