আ.লীগে আজিজ-মনসুরের পাল্লা ভারি, বিএনপির মান্নান-শিশির এগিয়ে
১৭ জুন ২০২৩ ০৮:০০
সিরাজগঞ্জ: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার যমুনাবিধৌত সিরাজগঞ্জ। নয়টি উপজেলা নিয়ে এই জেলা গঠিত হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এলাকা অনুযায়ী আসন সংখ্যা ছয়টি। আর মোট ভোটার সংখ্যা ২৫ লাখ ১৪ হাজার ২৪০ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনে শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তারা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতার সরব জানান দিচ্ছেন তারা।
এইসব আসনে বিএনপির অস্তিত্ব রক্ষা আর আওয়ামী লীগের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। বিএনপি ভেতরে ভেতরে গণসংযোগ চালালেও নির্বাচনি মাঠ গরম রেখেছে মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, মাঠে ততই উত্তাপ ছড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এখন পর্যন্ত গণসংযোগ আর উঠোন বৈঠক প্রচারণায় এগিয়ে আওয়ামী লীগ। নৌকার টিকিট পেতে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত বর্তমান ও সাবেক এমপি-মন্ত্রীরা। আর সংসদের বাইরে থাকলেও নির্বাচনে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ব্যস্ত বিএনপি।
মৎস্য ও শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা মিলে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৩ আসন। গত কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোটের পার্থক্য খুব বেশি নয়। এই আসনে নির্বাচনে প্রধান দুটি দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। আর এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় সমান সমান অবস্থানে রয়েছে। কাজেই এই আসনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দুটি দলই সাবধানতা অবলম্বন করবে বলে ধারণা।
১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন প্রয়াত ইসহাক হোসেন তালুকদার। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচন সব দল বর্জন করেন। আর স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে জয় পান বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল মান্নান তালুকদার। এর পর ১৯৯৬ সালে দুই বার সংসদ নির্বাচনে তিনি জয় লাভ করেন। মান্নান তালুকদার সর্বশেষ জয় লাভ করেন ২০০১ সালের নির্বাচনে।
তবে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুল মান্নান তালুকদারকে পরাজিত করে জয়ী হন আওয়ামী লীগের ইসহাক হোসেন তালুকদার। ২০১৪ সালের ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ইসহাক তালুকদার। ওই নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর পর তিনি মৃত্যুবরণ করায় উপনির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী গাজী ম.ম আমজাদ হোসেন মিলন। পরে তিনিও প্রয়াত হন। ফলে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জয়লাভ করেন অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ। এবারও তিনি এই আসনের মনোনয়ন দৌড়ে শক্ত প্রার্থী।
বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যান্যরা হলেন- দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর, তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনজিত কর্মকার, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন সুইট, সাবেক সংসদ সদস্য ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ এবং রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাদী আলমাজি জিন্নাহ।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নান তালুকদার, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির গ্রাম সরকারবিষয়ক সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশির, রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি আয়নুল হক। ইসলামী আন্দোলন থেকে জেলার সহ-সভাপতি গাজী মো. আয়নুল হক ও রায়গঞ্জ উপজেলা সভাপতি মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী মনোনয়ন চাইতে পারেন।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম শিশির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকা সিরাজগঞ্জ-৩। আমি এই আসনের বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ রয়েছে, যদি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব না। তারপরও দল যে সিদ্ধান্ত দেবে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।’
উল্লেখ্য, এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ১০১ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৭৮২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের দুই জন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির আবদুল মান্নান তালুকদার (ধানের শীষ) পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ৫২৫ ভোট, ড. মোস্তফা এম কামাল (তারা) পেয়েছিলেন ৭৭৬ ভোট, মো. আছাদ উজ্জামান (গোলাপ ফুল) পেয়েছিলেন ১ হাজার ৯৫৫ ভোট। আর আওয়ামী লীগের ইসহাক হোসেন তালুকদার (নৌকা) ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এদের সবাইকে পরাজিত করে নৌকার প্রার্থী ডা. আব্দুল আজিজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় বিএনপির আবদুল মান্নান তালুকদার (ধানের শীষ) পান ২৭ হাজার ২৪৮ ভোট, আওয়ামী লীগের ডা. আব্দুল আজিজ (নৌকা) ২ লাখ ৯৫ হাজারন ৫১৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। এছাড়া মো. আলমগীর হোসেন (গোলাপ ফুল) পান ১ হাজার ৯১ ভোট, মো. আহসান হাবিব (সুজন) (স্বতন্ত্র) ৪১১ ভোট, মো. আয়নুল হক (হাতপাখা) ১ হাজার ২১০ ভোট, মো. নুরুল ইসলাম ২১৫ এবং শেখ মো. মোস্তফা নুরুল আমিন ৫১৮ ভোট পেয়েছিলেন।
সারাবাংলা/আরএ/পিটিএম