Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ম্যুরাল ভাংচুরে হয়রানি: পুলিশ সদস্যদের ‘তালিকা করছে’ বিএনপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুন ২০২৩ ১৭:০০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাংচুরকে কেন্দ্র করে নিরপরাধ নেতাকর্মীদের জড়িতে ‘গায়েবি মামলা’ দায়েরের পাশাপাশি পুলিশ চট্টগ্রামে গণগ্রেফতার শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও গণগ্রেফতারে জড়িত পুলিশ সদস্যদের তালিকা করা হচ্ছে।

শনিবার (১৭ জুন) সকালে নগরীর নুর আহমদ সড়কে নসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরের ঘটনায় মামলা-গ্রেফতারসহ সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে নগর বিএনপি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ম্যুরাল ভাংচুরের দিনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গত ১৪ জুন (বুধবার) চট্টগ্রামে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে কাজীর দেউড়ির মোড়ে দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ হয়েছে। এ কর্মসূচি করার কথা ছিল ১১ জুন। কিন্তু যুবলীগ একইদিন পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করায় আমরা সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য আমাদের কর্মসূচি পিছিয়ে দিই। এরপরও যুবলীগ আমাদের সমাবেশের দিন শান্তি সমাবেশের নামে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করেছে।’

‘ওইদিন আমাদের সমাবেশে যোগদানের জন্য যুবদল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসার পথে চট্টগ্রাম কলেজের সামনে ও জামালখান মোড়ে তারা হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত করে। পরে উল্টো বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে কোতোয়ালী ও চকবাজার থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে গণগ্রেফতার শুরু করেছে। সেদিন রাতে সমাবেশ থেকে নিজ বাসায় ফেরার পথে মীরসরাইয়ে ছাত্রদলের এক নেত্রীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শারীরিকভাবে হেনস্তা করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।’

জামালখানে ম্যুরাল ভাংচুরের ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুলিশের দায়ের করা মামলায় জামালখান মোড়ে ম্যুরাল ভাঙ্গার অভিযোগ করা হয়। অথচ এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো রকম সম্পর্ক নেই। বরং এর আগের দিন মহানগর যুবলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিজেদের দুইগ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। এই মারামারি থেকেই বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর করা হয়। ‘মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা কেউ ওইদিন জামালখানে ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত এমন প্রমাণ যদি থাকে, ভিডিও ফুটেজে যদি থাকে তাহলে আমরা সব দায় স্বীকার করে নেব।’

চকবাজার থানার মামলায় ইউসুফ নামে ‘নিরপরাধ’ একজনকে আসামি করার তথ্য তুলে ধরে শাহাদাত বলেন, ‘তারুণ্যের সমাবেশ হয়েছে ১৪ জুন। আর চকবাজার থানায় ছাত্রলীগ কর্মীর করা মামলায় ৪৫ নম্বরে যাকে আসামি করা হয়েছে, মো. ইউসুফ, তিনি তখন ভারতের চেন্নাইয়ে ছিলেন। তিনি ঢাকায় এসেছেন ১৫ জুন। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে।’

‘২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ও প্রশাসন এসব গায়েবি মামলা করছে। অনৈতিকভাবে এসব মামলা করে বিএনপির নেতা কর্মীদের ঘরছাড়া, মাঠছাড়া করতে চায় সরকার। ঠিক যেভাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমাদের ৫৫ জন সংসদ সদস্য প্রার্থীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘শামীম ও জাহাঙ্গীর নামের দুইজন সাবেক ছাত্রদল নেতাকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি থানায় গিয়ে তাদের দেখে এসেছি। তাদের সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। যদি মামলার আসামি হয়ও তাহলে মারার অধিকার পুলিশকে কে দিয়েছে? পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে, গায়ে হাত তোলার অধিকার কেউ দেয়নি। সবার নামের লিস্ট করা হচ্ছে।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নাম কালি দিয়ে মুছে দেওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিপ্লব উদ্যানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা জিয়াউর রহমানের নাম কালি দিয়ে মুছে দিয়েছে। জিয়া জাদুঘরে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলায় এক অনিশ্চয়তার মধ্যে জিয়াউর রহমান পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহের সুচনা করেছিলেন বিপ্লব উদ্যান থেকে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন বীরউত্তম।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহবায়ক মো. মিয়া ভোলা, আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, নাজিমুর রহমান ও শফিকুর রহমান স্বপন, দক্ষিণ জেলার আহবায়ক আবু সুফিয়ান, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু এবং নগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন নগরীর কাজীর দেউড়ির মোড়ে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একই মিছিল থেকে জামালখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালসহ অন্তত ৫০টি চিত্রকর্ম ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

সারাবাংলা/আইসি/ইআ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর