‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিন’
১৭ জুন ২০২৩ ২৩:১৯
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আমি শিক্ষকদের আহ্বান জানাচ্ছি, আজ থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিন।
শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অডিটোরিয়ামে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়াতে ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকার সব স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা-মার পরে শিক্ষকরাই শিশুদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকরা সুন্দর সুস্থ সমাজ গঠনের কারিগর। শিক্ষকরাই যেকোনো বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে।’
মেয়র বলেন, ‘এডিস মশার ভয়াবহতা সম্পর্কে শিশুদের জানাতে হবে। কী কীী কারণে এডিস মশা জন্মায় সে বিষয়গুলো শিশুদের জানাতে হবে। আমরা বিদেশে দেখেছি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের, প্রাইমারি স্কুলের শিশুদের এডিস মশা নিধনে সচেতনতা শিক্ষা দেওয়া হয়। কারণ শিশুরাই বাসা বাড়িতে গিয়ে এটি অ্যাপ্লাই করবে। তারা বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানিদের জানাবে বাসা বাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে, কোনোভাবেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না। তারা সবাইকে জানাবে কীভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশের আদলে আমরা ইতোমধ্যে এডিস নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে কার্টুন বই তৈরি করে ফেলেছি। বিদেশে দেখেছি শিশুরা কার্টুন একে, রং করে এডিস মশা সম্পর্কে, লার্ভা কীভাবে জন্মায় সে সম্পর্কে শিখতে পারে। আমরা ডিএনসিসি এলাকার স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের জন্য এক লাখ বই ছাপানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে দেশের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয়ভাবে পাঠ্যপুস্তকে যদি এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে যাবে।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে আজ বৃষ্টি, কাল রোদ। এমন রোদ বৃষ্টির ফলে এডিসের লার্ভা বেশি জন্মায়। কোনোভাবেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, মশককর্মী সবাই মাঠে কাজ করছে। কিন্তু আপনাদের নিজেদের ঘরে, বাড়ির ছাদে পানি জমিয়ে রাখলে সেটির দায় আপনাদের নিতে হবে। যারা ছাদে অব্যবহৃত কমোড, পাত্র, রঙের কৌটা, টায়ার এগুলো রেখে দিলে সেই দায় বাড়ির মালিক, অফিসের মালিক, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার কর্তৃপক্ষের নিতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর কারণে প্রতিবছর আমরা অনেক প্রিয়জনকে হারাচ্ছি। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। বাংলাদেশে যে সংখ্যাটি আছে সেটি কমিয়ে আনতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যেহেতু ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ তাই সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে। সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন কিন্তু সবার বাড়িতে গিয়ে গিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দিয়ে আসতে পারবে না। তারা সচেতন করতে পারে। বাহিরে যেসব জায়গায় পানি জমে আছে, লার্ভা আছে সেখানে ওষুধ ছিটাতে পারে। কিন্তু যার যার বাসা বাড়ি, আঙিনা তাদের পরিষ্কার করতে হবে। নিজেদের জীবন বাঁচাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের কথার অনেক দাম। আপনারা শিক্ষার্থীদের যা শিখাবেন সেটি তারা আত্মস্থ করে ফেলে। শিক্ষার্থীরা নিজেরা সেগুলো চর্চা করে এবং অন্যদেরও শেখাতে পারে। সচেতনতা বার্তা সম্বলিত লিফলেটগুলো আমরা আপনাদের দিয়ে দেব সেগুলো শিক্ষার্থীদের দেবেন। আপনারা এসেম্বলির সময় শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জানাবেন। শিক্ষার্থীদের টিম করে করে স্কুল কলেজের আঙিনা পরিষ্কার করবে। কোথাও পানি জমে থাকলে সেগুলো ফেলে দেবে। এভাবে তাদের অভ্যাস গড়ে উঠবে। শিক্ষকরা সচেতন হলে যেকোনো সামাজিক আন্দোলন সফল হবে।’
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান। অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, ডিএনসিসি মেয়রের উপদেষ্টা ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, কাউন্সিলর ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম