কারও খবরদারির কাছে নতজানু হব না: প্রধানমন্ত্রী
১৮ জুন ২০২৩ ১৩:০৭
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম দেশ আমাদের, স্বাধীন জাতি আমরা। যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেই দেশ পেয়েছি। কারও খবরদারির কাছে নতজানু আমরা হব না, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।’
রোববার (১৮ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের টানা ১৪ বছরে দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতিসহ নানামুখী উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের জন্য মর্যাদার প্রশ্ন ছিল। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতির ফলে অনেক বার সড়ক, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বা বিভিন্ন জায়গা থেকে বিশ্ব ব্যাংক অর্থ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ওই সরকারের এই সাহসটা ছিল না যে প্রতিবাদ করবে। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ও তারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আমাদের উপর দোষারোপ করল। আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ আমরা কোনো দুর্বলতা ছিল না। আগের সরকার পারেনি কারণ তাদের দুর্বলতা ছিল। তারা সত্যিই দুর্নীতি করেছিল। কিন্তু আমরা তো দুর্নীতি করতে আসিনি। আমি মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি।’
নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করে আমাদের সক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছি। জাতির পিতা বলেছিলেন কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। সেটা প্রমাণ করেছি। এই একটা ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেমন প্রতিটি ক্ষেত্রেই শুধু শর্ত আর শর্ত, আর নানা কথা। এখন আর কেউ সেটা করতে সাহস পায় না। বাংলাদেশকে এখন সকলেই সমীহের চোখে দেখে। কারণ আমরা এগিয়ে যেতে পারি।’
জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেই নীতি অনুসরণ করে চলছি। ফলে দেশের উন্নয়নের জন্য যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা দরকার এবং যা যা করা দরকার সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। একইসঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও একটা সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটানোর ব্যবস্থা নিয়েছি।’
১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে নৌ বাহিনীর দিবস উপলক্ষে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শান্তিকামি জাতি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মরক্ষা করার মত ক্ষমতাও আমাদের থাকা দরকার। যে জাতি নিজেকে সম্মান করতে পারে না। আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না সে জাতি দুনিয়ায় কোনোদিন বড় হতে পারে না। সেজন্য আমরা আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাস করতে চাই। আমরা অন্য কারও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না, অন্য কেউ আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক তাও সহ্য করব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরাও এই নীতিতেই বিশ্বাসী। আমি আশা করি এই কথাগুলো সবাই মনে রাখবেন। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ আমাদের, স্বাধীন জাতি। আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে আমাদের দেশ পেয়েছি। কারও খবরদারির কাছে নতজানু হব না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। অনেক বাধা ও ষড়যন্ত্র হবে। সেগুলো অতিক্রম করেই বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই এখনো অনেক বাধা ও চক্রান্ত আছে। কারণ একটা দেশ যখন দ্রুত অগ্রগতি লাভ করে, সেটা অনেকেই হয়তো সহ্য করতে পারে না। সেজন্যই নানা ধরনের উৎপাত শুরু করে। সেগুলো নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সব সময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে চলতে হবে। আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
সারাবাংলা/এনআর/এনএস