‘৫৫০ বছরের মন্দিরের ভূমি দখলের চেষ্টায় মীর নাছির ও ছেলে’
১৮ জুন ২০২৩ ১৮:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাড়ে ৫০০ বছরের পুরনো এক মন্দিরের রাস্তা দখলের অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)। তাদের অভিযোগ, মীর নাছির ও তার ছেলে হাটহাজারী উপজেলার পুণ্ডরীক ধামের চলাচলের পথ দখলের পাঁয়তারার পাশাপাশি সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। তবে বিএনপি নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে।
রোববার (১৮ জুন) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ইসকনের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইসকনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস।
তিনি বলেন, ‘সনাতনীদের পবিত্রভূমি ও তীর্থক্ষেত্র ঐতিহ্যবাহী পুন্ডরীক ধামের বয়স ৫৫০ বছরেরও বেশি। একটি রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল, আবার মন্দিরেও যাওয়া-আসা করতে হয়। কিন্তু মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর হেলাল বিভিন্নসময় বিএস খতিয়ানে তাদের নাম আছে বলে রাস্তাটি দখল করে ইটের পাকা দেয়াল তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন।’
চারু চন্দ্র দাস বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন ও মন্দিরের সেবকরা বাধা দিয়ে রাস্তাটি রক্ষা করেন। তখন তারা হুমকি দিয়ে বলেন, এ রাস্তা আর ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। যেকোনো সময় আবার দখল করতে আসব। ওই সময় কেউ বাধা দিলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হবে।’
তিনি আরও বলেন, মন্দিরের মূল ফটকের বাইরে ৩৮ শতক চলাচলের পথ ও ১২১ শতক পরিমাপের দু’টি পুকুর আছে, যা আরএস খতিয়ান অনুযায়ী এককভাবে লক্ষ্মী জনাৰ্দ্দনের মালিকানায় আছে। মন্দিরের সেবায়েত হরকুমার স্মৃতিতীর্থের নামে আরএস জরিপে চূড়ান্ত রেকর্ডও আছে। অর্থাৎ এটি চিরস্থায়ী দেবোত্তর সম্পত্তি।
চারু চন্দ্র দাস বলেন, ‘এই এলাকায় সকল ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। ধামের মানুষজনের সঙ্গে এলাকার ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষজনের সঙ্গে ঐতিহাসিক কাল থেকে সুসম্পর্ক আছে। কিন্তু বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলাল ধামের জায়গা জবরদখল ও পথরুদ্ধ করে এলাকায় অরাজকতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চান। তারা কথায় কথায় সন্ত্রাসী দিয়ে সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। ফলে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে।’
‘পুণ্ডরীক ধাম হাটহাজারীর মেখল এলাকায়। আর মীর নাছির ও মীর হেলালের বাড়ি হাটহাজারীর মিরেরখীল। যারা বিভিন্নভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কথিত দলিল সৃজন করেছেন বলে প্রচার করছেন তারাও কেউ মেখলের বাসিন্দা নন। হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র পুণ্ডরীক ধামের জায়গার ওপর কেন দুই বিএনপি নেতার লোলুপ দৃষ্টি পড়ল, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ বলেন, ‘বিএনপি নেতা মীর নাছির ও মীর হেলালের হুমকির কারণে মন্দিরের সাধুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধু সন্ন্যাসীদের চরিত্র হনন করছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পুণ্ডরীক ধাম নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে হিন্দুরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। শুধু দেশে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের হিন্দুরাও এই পবিত্রভূমি রক্ষায় মাঠে নামবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সিএস ও আরএস খতিয়ানের রেকর্ড অনুযায়ী পুণ্ডরীক ধামের জায়গা চিহ্নিত করে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ, সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্য মামলা প্রত্যাহার, মীর নাছির ও মীর হেলালকে আইনের আওতায় আনা অন্যতম।
এসময় ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ গৌর দাস, জম্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সভাপতি কুশল বরণ চক্রবর্তী, রাধামাধব মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তারণ নিত্যানন্দ, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু উপস্থিত ছিলেন।
মীর নাছিরের পরিবারের বক্তব্য
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তার ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ইসকনের সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে সারাবাংলা’র কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
ইসকনের দাবি করা জায়গা প্রায় ৭২ বছর ধরে তারা পারিবারিকভাবে ক্রয়সূত্রে ভোগদখল করে আসছেন জানিয়ে মীর হেলাল বলেন, ‘মীর আহমেদ সওদাগর এই জায়গা কিনেছেন ১৯৫১ সালে। আমার আম্মা (প্রয়াত ডালিয়া নাজনীন নাছির) সেটা কিনেছেন ১৯৯২-৯৩ সালে। প্রায় ৭২ বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আমর এই জায়গা ভোগদখল করে আসছি।’
‘গত মার্চে ওনাদের (ইসকন) ভূমিস্বত্ব দাবির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সহকারী ভূমি কমিশনার তদন্ত প্রতিবেদন দেন। সেখানে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার আম্মা এই সম্পদের শান্তিপূর্ণ দখলে ছিলেন ও পুরো জায়গা ঘিরে একটি ১০ ফুট উচ্চতার সীমানা দেয়াল ছিল, যার কারণে সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়।’
মীর হেলালের অভিযোগ, আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকার পরও ইসকন তার মায়ের নির্মিত ৩০ বছরের পুরনো দেয়াল ভেঙে ফেলে। তার মায়ের লাগানো বেশকিছু গাছ কেটে ধ্বংস করে।
‘আমরা সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কখনোই আইন নিজের হাতে তুলে নেইনি। কিন্তু তারা (ইসকন) অসত্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বিচারাধীন বিষয়কে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা করছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা হচ্ছে। আশা করি, অচিরেই প্রকৃত সত্য উম্মোচিত হবে।’- বলেন মীর হেলাল
সারাবাংলা/আইসি/এনএস