হালদায় ডিম ছেড়েছে মাছ, পরিমাণ ‘নগণ্য’
১৮ জুন ২০২৩ ২১:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে ‘কার্প জাতীয়’ প্রজনন সক্ষম মাছ, তবে পরিমাণ একেবারে নগণ্য বলে জানিয়েছেন সংগ্রহকারীরা। লাগাতার বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল না থাকায় ‘মা মাছ’ ডিম ছাড়ার জন্য অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ পাচ্ছে না বলে মনে করছেন হালদা গবেষকরা।
রোববার (১৮ জুন) দুপুরে হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট থেকে রাউজান উপজেলার রামদাশ মুন্সির ঘাট পর্যন্ত হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। এর আগে, গত ১৮ মে প্রথম দফায় কিছু ডিম পাওয়া গিয়েছিল। সংগ্রহকারীরা সেগুলোকে ‘নমুনা ডিম’ বলেছিল।
নদীতীরে অবস্থান করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) চট্টগ্রামে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে। অমাবস্যাও ছিল। এর ফলে মা মাছ কিছু ডিম ছেড়েছে। এটিও নমুনা ডিমই। পূর্ণাঙ্গ ডিম এখনও ছাড়েনি। রাতের মধ্যে যদি ভারি বর্ষণ হয়, তাহলে হয়ত আরও ডিম ছাড়তে পারে। কিন্তু এখন যে তাপমাত্রা এবং বৃষ্টির সম্ভাবনাও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে ডিম ছাড়বে কি না সন্দেহ আছে।’
চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে আছে হালদা নদী। বিভিন্নস্থানে যেখানে সাধারণত মা মাছ ডিম ছাড়ে, সেখানে প্রায় ৩০০ নৌকায় দেড় হাজার মৎস্যজীবী ডিম সংগ্রহের জন্য অপেক্ষায় আছেন বলে জানা গেছে।
মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরিঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রামদাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়াঘোনা, সত্তার ঘাট, নাপিতের ঘোনা, কাটাখালী, আমতুয়াসহ বিভিন্ন অংশে ডিম সংগ্রহকারীরা ৫০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত ডিম পেয়েছেন।
ডিম সংগ্রহকারী মো. আলাউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল আটটা থেকে অপেক্ষায় ছিলাম মা মাছ ডিম ছাড়বে। নমুনা ডিম ছেড়েছে। পুরো ডিম এখনও ছাড়েনি। রাতে ক্লিয়ার ডিম দেবে বলে আমরা ধারণা করছি। প্রতিবছর এক কেজির ওপর ডিম আমি আহরণ করি। এবার কি রকম ডিম পাব, সেটি নিয়ে আশংকায় আছি। রুই, মৃগেল, কাতলা ও কালিবাউশ এই চার প্রজাতির মাছের ডিম এখানে পাওয়া যায়।’
প্রতিবছর চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে শুধু ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ‘মা মাছ’ ডিম ছেড়েছিল। এছাড়া বাকি চার বছরই মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধ্বে মা মাছ ডিম ছাড়ে।
মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার নদীর পরিবেশ অনেক ভালো। দূষণ নেই বললেই চলে। পানির মান ভালো। ইঞ্জিন নৌকা নেই। নৌ পুলিশ ও প্রশাসন খুবই পরিশ্রম করেছে। সবকিছু আমাদের অনুকূলে আছে। শুধু অনুকূলে নেই বৃষ্টি। জুন মাস পার হতে চললেও বৃষ্টি না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। তবুও মা মাছ কিছু ডিম ছেড়েছে। টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল না থাকার পরও উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যেই ডিম ছেড়েছে।’
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি, ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। ২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি।
এর আগে, ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/একে