ঢাকা: হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে আলাল দেওয়ান নামের এক ব্যক্তিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ১০ দিন হেফাজতে রেখেছিল। পরে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে মৃত অবস্থায় পাওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।
সোমবার (১৯ জুন) সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামালের সই করা এক বিবৃতিতে এ ক্ষোভের কথা জানায় তারা। এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে এমএসএফ’র বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ জনু বাউনিয়ার একটি বাসায় ফাতেমা আক্তার (৩৩) নামের এক নারী খুন হন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় একমাত্র আসামি ওই নারীর স্বামী সাইফুল ইসলাম রানা। স্বজনদের অভিযোগ, ৬ জুন সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে বাড়ির কেয়ারটেকার আলাল দেওয়ানকে (৫০) এসআই নাসিরসহ ডিবি পুলিশের সদস্যরা একটি হায়েস গাড়িতে তুলে নিয়ে যান।
পরবর্তী সময়ে তার বিষয়ে অন্য কিছু না জানালেও ১৫ জুন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তাদের জানানো হয়, আলাল অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পরে হাসপাতালে খোঁজ নিতে এলে তাদের বলা হয়, রোববার আদালতে গেলেই আলালকে পাবেন। পরদিন ১৬ জুন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আনোয়ার আলালের পরিবারকে ফোনের মাধ্যমে জানান, আলাল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন। তারা হাসপাতালে গিয়ে দেখেন মৃত আলালের হাত-পা ভাঙা। তখন স্বজনরা দাবি করেন, পুলিশই তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় হাসপাতালে লাশের বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে দেখা গেছে এবং সেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। শেরেবাংলা নগর থানা এবং তুরাগ থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সেখানে থাকলেও কোনো কথা বলেননি।
অপরদিকে, ডিএমপি ডিবি উত্তরের যুগ্ম কমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী আলাল নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তুরাগ থানা এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বাড়ির কেয়ারটেকার আলাল জড়িত। হত্যা করার সময় নারীটির সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আলাল পায়ে আঘাত পান।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) মনে করে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০ দিন আটক রাখার পর ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। হেফাজতে থাকা আটক ব্যক্তির মৃত্যু একটি অমানবিক ঘটনা এবং তা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
হেফাজতে যেকোনো ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর আইনি দায়িত্ব বলে মনে করে এমএসএফ। ডিবি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন মৃতের লাশের সুষ্ঠু ময়নাতদন্ত করে তা প্রকাশ করার জোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।