Friday 11 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যৌন হয়রানির শাস্তির বদলে ‘পদোন্নতি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জুন ২০২৩ ২২:৪০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এক ছাত্রীকে ‘যৌন হয়রানির’ অভিযোগের তদন্ত চলমান অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক কর্মচারীকে বদলি করে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদে বসানো হয়েছে। ওই কর্মচারী গ্রন্থাগারিক পদে বদলি হয়ে চসিকের শতবর্ষী গণগ্রন্থাগার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন।

যৌন হয়রানির মতো স্পর্শকাতর অভিযোগ ওঠার পর যেখানে তার শাস্তি পাওয়ার কথা, সেখানে তাকে এমন এক জায়গায় বদলি করা হয়েছে, উল্টো তার পদোন্নতি হয়েছে। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি কাউন্সিলরদের মধ্যেও তোলপাড় চলছে।

বিজ্ঞাপন

রিয়াদ মাহমুদ নামে ওই কর্মচারী নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালিত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যাটসের ‘লাইব্রেরিয়ান’ পদে ছিলেন। গত ১৪ জুন তাকে বদলি করে চসিকের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার ‘কবি মাহবুবুল আলম পাবলিক লাইব্রেরি’র লাইব্রেরিয়ান পদে বদলি করে।

একই আদেশে গণগ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক হিসেবে দায়িত্বরত সহকারী লাইব্রেরিয়ান সৈয়দা পারভীনকে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যাটসে একই পদে বদলি করা হয়। তাদের ২০ জুনের মধ্যে বদলি হওয়া কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেন চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ।

জানতে চাইলে এই রদবদলকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ উল্লেখ করে সচিব খালেদ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একেকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ১০-১২ বছর ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ তিন বছরের বেশি একই পদে তাদের থাকার কথা নয়। এজন্য বদলি করা হয়েছে।’

জানা গেছে, জুনের প্রথমদিকে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এন্ড ম্যাটসের এক ছাত্রী লাইব্রেরিয়ান রিয়াদ মাহমুদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি লাইব্রেরিতে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন চসিকের শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রাণী চাকমা।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে উজালা রাণী চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘১০ জুন আমাদের তদন্তের চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই ছাত্রী একাডেমিক লাইব্রেরিতে পড়তে গিয়েছিলেন। তখন লাইব্রেরিয়ান তাকে ব্যাড টাচ করেন। তবে ১১ জুন আমি ট্রেনিংয়ে এসেছি। ২২ জুন ট্রেনিং শেষ হবে। এরপর অফিসে যোগ দিয়েই আমি তদন্ত শুরু করব।’

চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যৌন হয়রানির যে অভিযোগ এসেছে সেটা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছি। আমাদের একজন শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। এর সঙ্গে ওই স্টাফকে বদলির কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চসিকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা কর্মচারীকে বদলির বিষয় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী অবহিত ছিলেন না। চসিকের প্রশাসনিক শাখা ও সচিবের কার্যালয়ের মাধ্যমে এ বদলি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সোমবার (১৯ জুন) সকালে নগরীর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে এক কর্মসূচিতে মেয়রকে বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে জানান ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও চসিকের স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি জহরলাল হাজারী। বিষয়টি জানতে পেরে মেয়র বিস্মিত হন।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘হেলথ ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরিয়ানের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ সেটি আমি জানি না। তবে কবি মাহবুবুল আলম পাবলিক লাইব্রেরির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অনভিজ্ঞ একজন কর্মচারীকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি আমি মেয়র মহোদয়কে অবহিত করেছি।’

১৯০৪ সালে ‘চিটাগাং মিউনিসিপ্যাল লাইব্রেরি’ নামে এই গণগ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর লাইব্রেরির নাম পাল্টে হয় ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি’। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতা কবি মাহবুবুল আলমের নামে গত ১ ফেব্রুয়ারি লাইব্রেরির নামফলক উন্মোচন করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চসিকের শিক্ষা বিভাগ থেকে লাইব্রেরি পরিচালনা করা হয়।

অন্যদিকে, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যাটস চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীন। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ছোট একটি লাইব্রেরি আছে, যার দায়িত্বে ছিলেন রিয়াদ মাহমুদ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিয়াদ মাহমুদ অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত চসিকের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী। আর পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ানের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির রাজস্ব খাতভুক্ত ১০ম গ্রেডের একটি পদ। সেখানে সহকারী লাইব্রেরিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা সৈয়দা পারভিন গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা সম্পন্ন করা কর্মকর্তা।

দ্বিতীয় শ্রেণির রাজস্ব খাতভুক্ত এই কর্মকর্তার স্থলে একজন অস্থায়ী কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে চসিকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরশনের পাবলিক লাইব্রেরি শত বছরের পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রায় ৪০ হাজার বই আছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কবি-সাহিত্যিকরা এখানে বই পড়তে আসেন।‘

‘সেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা একজন কর্মচারীকে। যার লাইব্রেরি সাইয়েন্স নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পড়ালেখা নেই। এমনকি এতবড় একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অভিজ্ঞতাও তার নেই। বিষয়টি দুঃখজনক। একাডেমিক লাইব্রেরি আর পাবলিক লাইব্রেরির পার্থক্য যারা বোঝেন না, তারাই এ ধরনের অর্বাচীনের মতো কর্মকাণ্ড করেছেন।’

রিয়াদ মাহমুদের মোবাইল বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি। সৈয়দা পারভীনও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

পদোন্নতি যৌন হয়রানি লাইব্রেরিয়ান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর