Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাপার নেতৃত্ব লড়াই থেকে পিছু হটলেন রওশন!

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জুন ২০২৩ ২৩:৪৩

ঢাকা: জাতীয় পার্টির মূল নেতৃত্ব নেওয়ার লড়াই থেকে পিছু হটেছেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এতদিন পর্দার আড়াল থেকে পার্টির যেসকল সিনিয়র নেতা রওশনকে সাহস জুগিয়েছেন তারাও সরে গেছেন পাশ থেকে। রওশন ও তার সহযোগীরা আগামী জুলাইয়ে জাতীয় সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন, সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছেন বলে জানা গেছে। রওশন এরশাদের ভুল সিদ্ধান্ত ও দল পরিচালনায় সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দলটির নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিএনপির কাছ থেকে লোভনীয় আশ্বাস পেয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল আসন্ন সংসদ নির্বাচন বর্জন করে দেশ-বিদেশে বিএনপির অবস্থানকে শক্তিশালী করা। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা ও আসন ভাগাভাগির ভিত্তিতে নির্বাচন করে লাভবানও হতে চেয়েছিলেন কাদের। কিন্তু জাতীয় পার্টির অধিকাংশ এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাদেরের এই সিদ্ধান্তের চাপা বিরোধিতা করেছেন। এসব নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়াসহ দলের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিধারা অব্যহত রাখতে চাইছেন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, রওশন এরশাদ যখন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন তখন জিএম কাদের খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করে বিএনপির হাই কমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এমনকি ওই সময় সংসদ থেকে পদত্যাগের ছকও তৈরি করে ফেলেন। বিষয়টি রওশন এরশাদকে জানানো হলে তিনি পার্টি ও সরকারকে বিপদ থেকে রক্ষায় ব্যাংকক থেকেই ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর দলের কাউন্সিল ডাকেন। ওই কাউন্সিলকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সফল করতে পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ কো-চেয়ারম্যানদের যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়। কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয় দলের কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলামকে। আর কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছিল বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব এবং এরশাদ মুক্তি পরিষদের সাবেক সভাপতি গোলাম মসীহকে।

জাতীয় পার্টির নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের নেতারা জানান, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাইরে কিছু চিন্ত করেন না। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সরকারি দলের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। রওশন পার্টির নিরঙ্কুশ নেতৃত্ব ও লাঙ্গল প্রতীক তার নিয়ন্ত্রণেই থাকুক- এমনটিই প্রত্যাশা সরকারি দলের। সেজন্য তাকে সর্বাধিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু নেতৃত্ব ঘাটতির কারণে লড়াই থেকে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন রওশন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের নানাভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছিল। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়ার পক্ষে। লাঙ্গল প্রতীক হাতিয়ে নেওয়ার জন্য রওশন ও তার সহযোগীরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছিলেন। রওশন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেরে সংবিধানসম্মতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন। এ ছাড়া দলের নেতাকর্মীদের আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে সব জেলার সম্মেলন শেষ করার তাগিদও দিয়েছিলেন তিনি। সে অনুযায়ী কাগজ-কলমে ৪৪টি জেলার সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে সে সর্ম্পকে তারা কিছুই জানেন না। এদিকে, আগামী মাসে দলটির কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন রওশন।

এদিকে, দলের প্রতীক লাঙ্গল ধরে রাখার প্রতিযোগিতা মুখ্য ছিল রওশন এরশাদের। সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া থেকে প্রাথমকিভাবে হেরে গেছেন তিনি। গত রোববার (১৮ জুন) ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে রওশনপন্থী প্রার্থী কাজী মামুনুর রশিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এর পর রাতে রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন গোলাম মসীহসহ অন্যান্য নেতারা। এ সময় তারা রওশনকে কাউন্সিলের কথা বললে তিনি চুপ থাকেন।

এ বিষয়ে রওশনপন্থী শীর্ষ নেতা গোলাম মসীহকে জিজ্ঞস করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমারা আপতত জাতীয় পার্টির কাউন্সিল করছি না।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

জাতীয় পার্টি পিছু হটলেন রওশন এরশাদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর