রনি’র থেকে অস্ত্র উদ্ধার হতে দেখেনি ৪ বিজিবি সদস্য
২০ জুন ২০২৩ ১৭:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চার সদস্য। ছয় বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে গ্রেফতারের পর রনির কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযোগে মামলা করেছিল পুলিশ। সেই কেন্দ্রে দায়িত্বরত ছিলেন সাক্ষ্য দেওয়া বিজিবি সদস্যরা।
তবে বিজিবি সদস্যরা ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ হলেও নুরুল আজিম রনির কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি দেখেননি বলে জানিয়েছেন। তারা আসামি হিসেবে রনিকে শনাক্তও করতে পারেননি বলে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২০ জুন) চট্টগ্রামের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে চার বিজিবি সদস্যের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আদালত ৩ আগস্ট পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন।
চার বিজিবি সদস্য হলেন- সৈনিক আতিউর রহমান, সাইদুর রহমান, শিশির এবং সফিকুল ইসলাম।
সরকারি কৌঁসুলি অতিরিক্ত জেলা পিপি নুরজাহান মুন্না ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চারজন বিজিবি সদস্য অভিযোগপত্রের সাক্ষীর তালিকার একেবারে শেষের দিকে আছেন। উনারা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে ফোর্স হিসেবে গিয়েছিলেন। সাক্ষ্যে বলেছেন, উনারা কেন্দ্রের একেবারে বাইরে অবস্থান করছিলেন। ভেতরে গোলযোগের খবর জানতে পারলেও পুলিশের অস্ত্র উদ্ধারের খবর পরে শুনেছেন। তবে কার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তার নাম কি- এসব বিষয় উনারা জানেন না।’
‘ভোটকেন্দ্রের বাইরে দায়িত্বে থাকায় উনারা না-ও জানতে পারেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষে তাদের জেরা করা হয়েছে। মামলার আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এখনও হয়নি। এদের মধ্যে তিনজনকে সমন ইস্যুর জন্য রাষ্ট্রপক্ষে আবেদন করা হয়েছে। আদালত মঞ্জুর করেছেন।’
আসামির আইনজীবী মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিজিবি সদস্যরা নুরুল আজিম রনিকে শনাক্ত করেননি। তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয় তারা দেখেননি বলে আদালতকে জানিয়েছেন। এ মামলায় ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারসহ এ পর্যন্ত মোট ১২জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা কেউই নুরুল আজিম রনিকে শনাক্ত করেননি। পুলিশের তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টিও কেউ জানেন না বলে আদালতকে জানিয়েছেন।’
২০১৬ সালের ৭ মে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন চলাকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রের পাশ থেকে অস্ত্র, গুলি ও ব্যালট পেপারে ব্যবহৃত একটি সিলসহ নুরুল আজিম রনিকে আটকের তথ্য দেয় বিজিবি। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ভোটকেন্দ্রে অবৈধ প্রবেশ ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে ইউপি নির্বাচন আইনে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় অস্ত্র আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। রনিকে ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ উল্লেখ করে তার মুক্তির দাবিতে ওই বছরের ৮ মে থেকে টানা প্রায় এক সপ্তাহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে। ওই বছরের ৩০ জুন রনি জামিনে মুক্তি পান। পরে তিনি দুই বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
তদন্ত শেষে হাটহাজারী থানায় করা অস্ত্র মামলায় রনির বিরুদ্ধে পুলিশ ২০১৭ সালের ১৯ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে ২১ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। এর মধ্যে পুলিশ, স্থানীয় ব্যক্তি, বিজিবির সদস্যদের পাশাপাশি একজন বিচারিক হাকিমও আছেন। ওই বছরের ৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ