সেন্ট্রাল হাসপাতালের ২ চিকিৎসকের মুক্তি চায় ওজিএসবি
২০ জুন ২০২৩ ২২:৫৩
ঢাকা: রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায় নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর’ ঘটনায় গ্রেফতার চিকিৎসকদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)।
মঙ্গলবার (২০ জুন) ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপজ ডা. ফারহানা দেওয়ান ও অধ্যাপক ডা. সালমা রউফের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ওজিএসবির পক্ষ থেকে দুই চিকিৎসকের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় গ্রেফতার চিকিৎসক ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করায় নিন্দা জানায় ওজিএসবি।
বিজ্ঞপ্তিতে সেন্ট্রাল হসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে নবজাতকসহ প্রসূতির অপ্রত্যাশিত ও অস্বাভাবিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা ও গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে।
এর আগে, পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলেও জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। ফলে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।
পরবর্তী সময়ে প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ৯ জুন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন।
ভুক্তভোগীর স্বামী ইয়াকুব আলী জানান, তার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাওয়া হয়। ওই সময়ও কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি তার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানা যায় ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনোরকম চেক-আপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই আঁখি সেন্সলেস হয়ে যান। পরে আর তার কোনো ইমপ্রুভমেন্ট হয়নি। প্রথমে নবজাতক এবং পরে আঁখি নিজেও মারা যান।
ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৫ জুন ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা দায়ের করেন ইয়াকুব আলী। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর গত ১৫ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, চিকিৎসাজনিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি পরিদর্শন দল ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনে আইসিইউতে রোগীর রাখার উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায়নি। এজন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধ করে দেওয়াসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
১৮ জুন রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে মারা যান মাহবুবা রহমান আঁখি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের-এ-খোদা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, গত ১০ জুন বিকেল ৩টা ৩৯ মিনিটে মাহবুবা রহমান আঁখিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে অচেতন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে অ্যাম্বুলেন্সে আনা হয়েছিল। তার প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ ও হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এরকমটি স্বাভাবিকভাবেই হতে পারে।
রোগীর শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে চৌধুরী মেহের-এ-খোদা জানান, ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা অব্যাহত ছিল।
ল্যাবএইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রোগীর ইউরিন আউটপুট বন্ধ থাকায় ডায়ালাইসিস প্রদান করা হচ্ছিল। সকল প্রকার প্রচেষ্টার পরও রোগীর কোনো প্রকার উন্নতি হয়নি। আজ দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।’
গত ১৯ জুনের এ ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল চিকিৎসা ও প্রতারণার সম্পূর্ণ দায় ডা. সংযুক্তা সাহার ওপর চাপায়। সেই অভিযোগের জবাব দিতে আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডা. সংযুক্তা সাহা। সেখানে তিনি বলেন, ‘সেন্ট্রাল হসপিটাল আমার নাম ব্যবহার করে অনিয়ম করেছে। তারা এমন অনিয়ম করবে ভাবতেও পারিনি। এ ঘটনার আগ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমি ছিলাম গর্ব। আর এখন তারা আমার নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। তারা বলছে আমি বেশি রোগী দেখি। অথচ তারা সবসময় বেশি রোগী দেখতে আমাকে উৎসাহিত করেছে। তারা আমার চেম্বারের পাশে ঘুমানোর জন্য বেডের ব্যবস্থাও করেছে।’
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম