রিজার্ভে স্বস্তি ফেরার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
২১ জুন ২০২৩ ২১:৫০
ঢাকা: রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংসদে জানিয়েছেন, সরকার অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত এবং প্রবাসী আয় উৎসাহিত করার মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে। যার ফলে আগামীতে রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।
বুধবার (২১ জুন) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা জানান। সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২.৯৪ বিলিয়ন ডলার। মূল্যস্ফীতির চাপ এবং কোভিড পরবর্তীকালীন চাহিদা বৃদ্ধিজনিত কারণে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। এ চাপ মোকাবিলা করতে গিয়ে পরবর্তীতে তা কমতে শুরু করে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার শুরু করলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার হার আরও বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ গত ৩১ মে’র হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২৯.৮৭ বিলিয়ন ডলার। যার সাহায্যে ৪ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, পতিত জমি চাষাবাদের উদ্যোগের ফলে ইতিমধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে।
কৃষি খাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্য ফসলের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ২২টি কৃষি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।’
সরকারি দলের সংসদ সদস্য নুর উদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প ও আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগ খাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তা এখন সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সেতু বিভাগ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েছে।
সংসদ সদস্য খালেদা খানমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৮৮.৬০ শতাংশ। তবে এ হার আরও বাড়াতে কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রমে ১০ লাখ শিশু-কিশোর বিদ্যালয়বহির্ভূত রয়েছে। ইতিমধ্যে এই কার্যক্রমে এক লাখ শিশু-কিশোরকে মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ লাখ শিশু-কিশোরকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনার কাজ চলছে।
একই প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার ৪৭.২০ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১৪.১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৮.৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুদের ভর্তির হার ৮৭.২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৭.৫৯ শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপ্তির হার ৫২.৮০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৫.৫০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও সচ্ছলতা বেড়েছে এবং স্বাক্ষরতার হার ৫৩.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫.৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির মাধ্যমে গত দুই অর্থবছরে এবং ২০২২-২৩ অর্থ-বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এক কোটি ৫৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯ জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি দেওয়া হয়েছে। এ বাবদ ৫ হাজার ১৫১ কোটি ৭৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও