‘খুনিদের ক্ষমতায় বসিয়ে নরকের বোঝা চাপিয়েছিল’
২২ জুন ২০২৩ ১৪:৪১
ঢাকা: নাম উল্লেখ না করে আমেরিকার দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার বাবা-মা ও ভাই হত্যার বিচার পাইনি। বিচারের পথ যারা বন্ধ করেছিল, আমাদের মানবাধিকার তারা লঙ্ঘন করেনি? তখন এই চেতনাটা কোথায় ছিল? তখন তো মানবাধিকারের কথা বলে নাই। বরং ওই খুনিদেরই ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, আমাদের ওপর একটা নরকের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল। সেটা ভুলে যাওয়া উচিত না। দেশবাসীর এই কথাগুলো মাথায় রাখা উচিত।’
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকালে গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপির আন্দোলন যেমন ধ্বংসাত্মক ও সন্ত্রাসী, আবার নির্বাচনকালীন সময়েও মানুষের উপর আক্রমণ করে, মানুষকে হত্যা করে এবং ভোট ডাকাতি করে। ডাকাতি করেই তাদের জন্ম। ডাকাতি করাই তাদের অভ্যাস। আমরা ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। জনগণকে সচেতন করেছি। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’— এটা আওয়ামী লীগের স্লোগান। এই স্লোগান মাঠে নিয়ে মানুষকে সচেতন করেছি। কারণ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। মানবাধিকারে বিশ্বাস করে। যদি মানবাধিকারে বিশ্বাস না করতাম তাহলে ১০/১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতাম না, অনেক দেশ দেয়নি। যখন আশ্রয় দিয়েছি কয়টা দেশ এসেছে, এরপরও প্রশ্ন তোলে কিভাবে?’
দলের কার্যনির্বাহী সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের পার্টির অনেক কাজ বাকি আছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছর অব্যাহত আছে, স্থিতিশীল আছে। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবকিছু মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি। অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির জাতীয় সংসদে ২৯টা আসন পাওয়া কথা স্মরণ এবং ২০১৩ হতে ২০১৪ সালে বিএনপি-জামাতের নির্বাচন ঠেকানোর নামে অগ্নিসন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটাই বিএনপির চরিত্র। এই সন্ত্রাসী বিএনপির জনগণের প্রতি কোনো মায়া নাই। আমরা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত দেশের যতটুকু উন্নয়ন করেছি তার সব একে একে সব ধ্বংস করেছিল। বিএনপি মানে একটা সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী দল। এটা শুধু আমার কথা না, কানাডার কোর্টের রায় আছে। কানাডার কোর্ট বিএনপিকে জঙ্গিবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই সন্ত্রাসী সংগঠন আজ আন্দোলন করে। তারা আমাদের ভোট চোর বলে। আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করা লাগে না, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট পায় কাজের মধ্য দিয়ে, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগকে যতবার হারানো হয়েছে, ততবার চক্রান্ত করেই হারানো হয়েছে। বরং জনগণের ভোট ডাকাতি করেই সিট দেওয়া হয়নি বা ভোট দেওয়া হয়নি আওয়ামী লীগকে। কিন্তু যখনই এদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তখনই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। তার প্রমাণ ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের নির্বাচন।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা খুনি রশিদকে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টের মেম্বার করেছিলেন। জেনারেল এরশাদও কম যায় না, ফারুককে করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট। দল করতে দিয়েছিলেন। এই খুনি ও সন্ত্রাসীদের দল বিএনপি, এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে। তারা মানুষের কল্যাণ চায় না। মানুষের অমঙ্গলই তাদের কাজ। তারা মানুষ হত্যা করতে পারে, সেটা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সবাই দেখেছে।’
সভায় বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে নৌকায় মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে কেউ কথা বলার বা অজুহাত করতে পারে নাই।’
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন স্বচ্ছ হয়, নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারে— সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নাই। যেসব দেশ আমাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন তাদেরও বলব, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও উপনির্বাচনগুলো হলো। সে নির্বাচনগুলো দেখেন কিভাবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। এরপর আবার কেন প্রশ্ন ওঠে। আর বিএনপির আমলে নির্বাচন মানে কি ছিল? বিএনপির আমলে নির্বাচন মানে ছিল— ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুণ্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা।’
এ সময় মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতুর আয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেল থেকে যে ভাড়া কালেকশন করা হয়েছে, সেখান থেকে ইতোমধ্যে ৫৫ কোটি টাকা পেয়েছি। এছাড়া পদ্মা সেতু থেকে দুই কিস্তিতে ৯০০ কোটি টাকা এসেছে।’
সারাবাংলা/এনআর/এনএস