Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিইসির পদত্যাগ এবং ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২২ জুন ২০২৩ ১৭:০০

ঢাকা: সাংবিধানিক পদে থেকে দায়িত্বহীন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে ‘উনি কি ইন্তেকাল করেছেন?’ সিইসির এমন বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীমের মানহানি করার জন্য ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীমের (শায়েখে চরমোনাই) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল বাসেত এই আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল বাসেত। তিনি বলেন, ‘লিগ্যাল নোটিশ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হবে।’

নোটিশপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে উপরিউক্ত দায়িত্ব জ্ঞানহীন, কুরুচিপূর্ণ, বিবেকহীন, অনৈতিক বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা ও কৈফিয়ত দেওয়া এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং প্রিন্ট ও ইলেক্সনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করা। একই সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০০ (পাঁচশত কোটি) টাকা প্রদান করে সিইসিকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইনে উপযুক্ত আদালতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম বাংলাদেশের সম্ভ্রান্ত একটি মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণকারী ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি যিনি শায়খে চরমোনাই নামে সমধিক পরিচিত। তার সম্মানিত মরহুম পিতা ও পিতামহ উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। একজন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তি হিসেবে আমার মোয়াক্কেল দেশ ও বিদেশে লাখো ভক্ত ও অনুসারী রয়েছে। তিনি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত আলেমেদ্বীন হিসেবে সমাদৃত। সৈয়দ ফয়জুল করীম ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ এর সিনিয়র নায়েবে আমির (সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।

বিজ্ঞাপন

নোটিশে বলা হয়, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের নীতি ও আদর্শবান যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে উল্লিখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনকল্যাণে দেশের বিদ্যমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করে আসছে। ইতোপূর্বে ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ একটি শান্তি প্রিয় ও সুশৃঙ্খলভাবে দল হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি সকল সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে জনগণের মন জয় করতে পেরেছে। ইতোমধ্যে জাতীয়, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ’ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ এর একাধিক প্রার্থী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছে। জাতীয় ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ এর মনোনীত (হাত পাখা মার্কার) প্রার্থীগণ একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি জনপ্রিয়, সুশৃংখল, সুসংগঠিত এবং আদর্শিক শান্তিকামী রাজনৈতিক দল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।

এতে আরও বলা হয়, আপনি (সিইসি) বাংলাদেশের অন্যতম সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ’বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন’ এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। আপনি গত ১৭ এপ্রিল বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে সৈয়দ ফয়জুল করীম গত ১৬ মে ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ এর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। গত ১৮ মে আপনি নোটিশ গ্রহিতা সৈয়দ ফয়জুল করীমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। এরপর তিনি হাত পাখা প্রতীক নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এরপর গত ১২ জুন নির্বাচনে বরিশাল নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া মেইন রোডের এ কাদের চৌধুরী স্কুল কেন্দ্রে হাত পাখার ভোটার এবং মানিক মিয়া স্কুল কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদেরকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে সৈয়দ ফয়জুল করীম, হাত পাখার মেয়রপ্রার্থী হিসেবে সেখানকার দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রশাসনকে মৌখিকভাবে অবহিত করলেও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বরং নৌকার সমর্থক ও কর্মীরা সৈয়দ ফয়জুল করীম ও তার কর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে অবহিত করলে সেখান থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন।

এরপর ওই দিন দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে সৈয়দ ফয়জুল করীম বরিশাল নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ২৭ নম্বর কেন্দ্র ‘সাবেরা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ ভোট কেন্দ্রে পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেন যে, নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা ভোট কক্ষে ঢুকে ভোটারদের বলেছে যে, ‘নৌকায় ভোট দিলে দাও না দিলে চলে যাও’ উক্ত বিষয়টি সৈয়দ ফয়জুল করীম সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারকে অবগত করেন। এর পরপরই নৌকা প্রতীকের প্রায় ৩০/৪০ জন উচ্ছৃঙ্খল কর্মী হাত পাখার মেয়র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করীম ও তার সঙ্গীয় কর্মীদের ওপর হামলা করে। প্রিজাইডিং অফিসার ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করার পরেও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দ্বিতীয়বার সৈয়দ ফয়জুল করীমকে হত্যার উদ্দ্যেশে হামলা করে মাথায়, নাক ও ঠোটে আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। ঘটনাটি ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সকলেই নির্বাচন কমিশনের অধীন। অথচ আপনি (সিইসি) উল্লিখিত ঘটনার বিষয় কোনরূপ ব্যবস্থা অদ্যাবদি গ্রহণ করেননি। এ ব্যর্থতার জন্য আপনিই (সিইসি) দায়ী। তা ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আপনি আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।

অতঃপর ওই দিন রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওস্থ ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভবন’ এ সাংবাদিকগণ উপরিউক্ত ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আপনি (সিইসি) ভোট কেন্দ্রের এই অযাচিত এবং বেআইনি হস্তক্ষেপের বিষয়টি এড়িয়ে যান। অথচ ভোট কেন্দ্রের ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে উক্ত ঘটনার এর সত্যতা পাওয়া যাবে। আপনি (সিইসি) মেয়র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করীমের গুরুতর জখমের বিষয়টি এড়িয়ে মান। পরে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাত পাখার মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আপনি (সিইসি) বলেন যে, ‘এটা আপেক্ষিক। রক্তাক্ত সবকিছু আপেক্ষিক “উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? আমরা দেখেছি- না? উনি কতটা রক্তাক্ত হয়েছেন। উনার রক্তক্ষরণটা দেখিনি। যতটা শুনেছি- উনাকে কেউ পেছন থেকে ঘুসি মেরেছে।”

নোটিশে আরও বলা হয়, সিইসির উপরিউক্ত বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এবং ১৩ জুন প্রায় সকল জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত এবং প্রচারিত হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি দল-মত-ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে সিইসি বক্তব্যের বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন অব্যাহত আছে। সিইসির উপরিউক্ত বক্তব্যটি সৈয়দ ফয়জুল করীম ও তার অসংখ্য অনুসারী এবং সর্বস্তরের জনগণের নিকট উদ্দেশ্য প্রণোদিত, নির্দয়, অমানবিক, কুরুচিপূর্ণ, অনৈতিক এবং অপমানজনক।

সিইসির উপরিউক্ত বক্তব্য প্রমাণ করে যে, তিনি সৈয়দ ফয়জুল করীমের ‘মৃত্যু’ কামনা করেছিলেন। যা সম্পূর্ণ রূপে নৈতিকতা বিবর্জিত, অন্যায় ও বেআইনি। আপনার বক্তব্যটি দেশের সংবিধান, পদমর্যাদা, পেশাদারিত্ব এবং শপথের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আপনি (সিইসি) উপরিউক্ত বক্তব্য চরম হিংসাত্মক কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং দলীয় মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। সিইসি হিসেবে এরূপ বক্তব্যের কারণে আপনি রাষ্ট্রীয় একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদে নিয়োজিত থেকে দায়িত্ব পালন করার নৈতিক ও আইনগত অধিকার হারিয়েছেন।

সিইসি সাংবিধানিক এই পদের শপথ অনুযায়ী, বিশ্বস্ততার সঙ্গে কর্তব্য পালন, সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনার উপরিউক্ত বক্তব্য সাংবিধানিক পদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে আপনি “প্রধান নির্বাচন কমিশনার” পদে বহাল থাকার আইনগত বৈধতা হারিয়েছেন।

নোটিশে আরও বলা হয়, যেহেতু, সৈয়দ ফয়জুল করীম বাংলাদেশের কেবল ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ পরিবারের সন্তান-ই নন; তিনি একজন ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর হিসেবে তার দেশ ও বিদেশে লাখো ভক্ত ও অনুসারী রয়েছে। ভোট কারচুপিতে বাঁধা দেওয়ার কারণে তার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আপনার উপরিউক্ত বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন, অযাচিত, কুরুচিপূর্ণ, অমানবিক ও বেআইনি, অনৈতিক। যার ফলে সৈয়দ ফয়জুল করীমের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর জন্য আপনি-ই দায়ী। তা ছাড়াও তার মর্যাদা ও সুনামের অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়েছে। তার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি (পাঁচশত কোটি) টাকা।

এমতাবস্থায়, নোটিশপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে উপরিউক্ত দায়িত্ব জ্ঞানহীন, কুরুচিপূর্ণ, বিবেকহীন, অনৈতিক বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা ও কৈফিয়ত প্রদান এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং প্রিন্ট ও ইলেক্সনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করতে হব।

একই সময়ের মধ্যে সৈয়দ ফয়জুল করীমকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০০ কোটি (পাঁচশত কোটি) টাকা প্রদান করে “প্রধান নির্বাচন কমিশনার” পদ হতে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায়, সিইসির বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে উপযুক্ত আদালতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

নোটিশ পদত্যাগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর