অর্থবছর শেষের পথে, এখনও ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা
২২ জুন ২০২৩ ১৭:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের সবচেয়ে বড় শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২০২২-২৩ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিণ করেছিল ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গত ১১ মাসে রাজস্ব আদায় করেছে ৫৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে এক মাসে কাস্টমসকে আরও প্রায় ১৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে চলমান ডলার সংকট, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতাসহ অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ে। এর ফলে অর্থবছরের শুরু থেকে টানা আট মাস আদায় প্রায় স্থবির ছিল। সেই স্থবিরতা কাটিয়ে মে মাসে রেকর্ড ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০-২১ অর্থবছরের মে মাসে ছিল ৫ হাজার ১৪ কোটি টাকা ও ২০২১-২২ এ ছিল ৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসের মধ্যে ৫ মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক। অর্থবছরের শুরুতে জুলাই মাসে কাস্টমসের প্রবৃদ্ধি ৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ হলেও ক্রমাগত কমে মে পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশে।
অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত কাস্টমসের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ দশমিক ৭০ শতাংশ। অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ০.১৭ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ, জানুয়ারিতে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, মার্চ মাসে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ ও এপ্রিল মাসে ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।
এদিকে অর্থবছরের শুরু থেকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের শঙ্কা থাকলেও ফেব্রুয়ারি-মার্চ-এপ্রিল এবং মে মাসে ১৭ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা আদায় হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে ৪ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, আগস্টে ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা, অক্টোবরে ৪ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৫ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা, জানুয়ারিতে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা, মার্চে ৫ হাজার ৫২ কোটি টাকা ও এপ্রিলে ৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে কাস্টমস।
সে হিসেবে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৬৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-মে) ১১ মাসে মোট ৫৩ হাজার ১৫৭ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস। এ হিসাবে অর্থবছরের ১১ মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ধারাবাহিক বিবেচনায় প্রতিবছরই গড়ে ১২ শতাংশের বেশি রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়ে আসছে। তবে চলতি অর্থবছরের দুই মাস বাদ দিলে এবার এ প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘরেও পৌঁছায়নি। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে গত অর্থবছরই শুধু প্রবৃদ্ধি এর অর্ধেক অর্থাৎ ৬ শতাংশের মতো হয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি আটকানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে রাজস্ব আহরণে মাসভিত্তিক হিসাব করলে আরও নেতিবাচক চিত্র উঠে আসে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের হিসাবে বিগত অর্থবছরের (জানুয়ারি-এপ্রিল) চেয়ে চলতি অর্থবছরের মে মাস ছাড়া অন্যন্য মাসে রাজস্ব আয় কমেছে।
গত অর্থবছরের জানুয়ারি,ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিলে যথাক্রমে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা, ৫ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, ৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ও ৫ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা।
তার বিপরীতে চলতি অর্থবছরে যথাক্রমে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা, ৫০৫২ কোটি টাকা ও ৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ কমিশনার বদরুজ্জামান মুন্সি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক হওয়ায় রাজস্বের প্রবৃদ্ধি এখন পজেটিভ। রাজস্ব আদায়ে কাস্টমসের লক্ষ্য মাত্রা ছিল সেটা সম্পূর্ণভাবে আদায় না হলেও এর কাছাকাছি যাওয়া যাবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে নানামুখী বিধিনিষেধের কারণে ঋণপত্র ও ডলার সংকটে গত অক্টোবর থেকে দেশে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে কিছুটা স্থবিরতা আসে।’
‘তাই যেখানে প্রতি বছর ১২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়ে আসে সেখানে এই বছরে সেটা ছয় শতাংশ বা তার কাছাকাছি। তবে মার্চে এসে রমজানের ভোগ্যপণ্যকে কেন্দ্র করে আমদানি বাড়তে থাকে। গত তিন মাস পণ্য আমদানি রাজস্ব আদায়ে অনেক বেশি পরিমাণে হওয়ায় আমরা গত অর্থবছরের তুলনায় ইতিবাচক গতি ধরে রাখতে পেরেছি।’
সারাবাংলা/আইসি/একে