কুমিল্লা: আইন না মেনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) চার বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে পুনর্বহালের অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেছেন, এটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। যা কিছু করা হয়েছে তা আইন মেনেই করা হয়েছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ এর ২৪ (২) ধারা ও ২৪ (৩) ধারায় বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিনবছর মেয়াদে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে উপাচার্যের। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগে যদি অধ্যাপক না থাকেন তবে সহযোগী অধ্যাপকের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত চারটি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়াগের ক্ষেত্রে আইন না মানার অভিযোগ রয়েছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন অধ্যাপক ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান। গত ১ ফেব্রুয়ারি তিনি শিক্ষা ছুটিতে গেলে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান মিলকীকে।
আইন অনুযায়ী অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা সে সময় বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার কথা। তবে কর্তৃপক্ষ আইনের তোয়াক্কা না করেই অধ্যাপক মিলকীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানা যায়, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাসের বিভাগীয় প্রধানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দায়িত্ব পাওয়ার কথা অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করীমের। কিন্তু তাকে দায়িত্ব না দিয়ে চলতি বছরের ৯ ফেব্রয়ারি এক অফিস আদেশের মাধ্যমে অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাসকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলা হয়।
এ বিষয়ে অধ্যাপক শরীফুল করীম বলেন, ৯ ফেব্রয়ারি বর্তমান বিভাগীয় প্রধানের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২ ফেব্রুয়ারি আমি দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত বলে প্রশাসনকে চিঠি পাঠাই। তখন প্রশাসন আমাকে আশ্বস্ত করে। গত সপ্তাহেও আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে আমাকে তিনি (উপাচার্য) শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. খলিফা মোহাম্মদ হেলালের নির্ধারিত ৩ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা এ বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তিন মাস আগেই গত ১৫ জুন তাকেও পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব অব্যাহত রাখার জন্য অফিস আদেশ দিয়েছে প্রশাসন। যদিও আইন অনুযায়ী পরবর্তী বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার কথা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের।
গত ১৫ জুন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জুলহাস মিয়াকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যেতে বলা হয়েছে। যদিও এ বিভাগে বর্তমানে দুজন অধ্যাপক রয়েছেন। এ নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পদ পেতে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠিও দিয়েছেন ওই বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু তাহের।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমি বিভাগীয় প্রধানের পদ ফিরে পেতে গত ১৮ জুন (রোববার) রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো রেসপন্স পাইনি।’
আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পুনর্বহালের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগসহ দুটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা। তবে এ সব চিঠিতে ভ্রক্ষেপ না করে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে আইন অমান্য করে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে কামাল-আমান অংশের শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, গত ১৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিভাগে এবং ইতঃপূর্বে বাংলা ও ইংরজি ইংরেজি বিভাগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
আইন লঙ্ঘন করে যে সব অফিস আদেশ প্রদান করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ধারা সমুন্নত রেখে পুনরায় অফিস আদেশ প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানায় বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
ইউজিসি সদস্য ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত) মো. জামিনুর রহমান বলেন, ‘আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে যে বিধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে আইনের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অব্যশই শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। একই ব্যক্তিকে দুই মেয়াদে বিভাগীয় প্রধান রাখার কোনো সুযোগ নেই। আইনে বলা হয়েছে- জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে/পালাক্রমে বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হবেন। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘একজনকে পুনরায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশনা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্তঃসম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রশাসনের উচিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।’