Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, ইবিএল কর্মকর্তার ২১ বছর কারাদণ্ড

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ জুন ২০২৩ ২৩:৩৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো : জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের হিসাব নম্বর থেকে ৪০ লাখ টাকা উত্তোলনসহ প্রায় ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) এক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ধারায় মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত অর্থ আত্মসাতের সহযোগী হিসেবে এক ব্যবসায়ীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ এ রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু।

দণ্ডিত তিনজন হলেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের চান্দগাঁও শাখার সাবেক প্রায়োরিটি ব্যবস্থাপক মো. ইফতেখারুল কবির এবং আজম চৌধুরী নামে নগরীর খুলশী এলাকার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী। ইফতেখারুল কারাগারে ও আজম চৌধুরী পলাতক আছেন।

আদালত ইফতেখারুল কবিরকে ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে একমাসের সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৬মাস সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারায় ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১ মাস সশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারায় ধারায় ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে একমাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।

এছাড়া ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিনমাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

অপর আসামি আজম চৌধুরীকে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মোট ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে একমাসের সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারায় ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে একমাস সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারায় ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১ মাস সশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারায় ধারায় ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে একমাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।

এছাড়া ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও একমাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

উভয় আসামিকে বিভিন্ন ধারায় দেওয়া সব সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আদালত সামিউল সাহেদ চৌধুরী নামে ইস্টার্ন ব্যাংকের সাবেক প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার ও মাহমুদুল হাসান নামে এক ব্যবসায়ীকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু সারাবাংলাকে জানান, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় মিজানুর রহমান নামে এক গ্রাহক ৪০ লাখ টাকা তার হিসাব নম্বরে জমা দিতে যান। কিন্তু ইফতেখারুল কবির সেই টাকা গ্রহণ করলেও হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে জাল স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করে তাকে জমা রশিদ দেন। পরবর্তীতে ব্যাংক কর্মকর্তা সামিউল সাহেদ চৌধুরী ও আরেক গ্রাহক মাহমুদুল হাসানের হিসাব নম্বরের বিপরীতে ঋণ দেখিয়ে সেই টাকা আত্মসাত করেন। এতে ইফতেখারুলকে সহযোগিতা করেন গ্রাহক আজম চৌধুরী।

পরবর্তীতে গ্রাহক মিজানুর রহমান তার হিসাব নম্বরে টাকা জমা না হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে ব্যাংকে অভিযোগ দেন। ইফতেখারুল লিখিতভাবে দোষ স্বীকার করলে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মিজানুর রহমানকে ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেন।

এ ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের থানায় জমা দেওয়া অভিযোগ শিডিউলভুক্ত হিসেবে তদন্তের জন্য দুদক গ্রহণ করে। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর দুদক, চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মাহমুদা আক্তার বাদী হয়ে চারজনের নামে মামলা দায়ের করেন।

২০২১ সালের ১৬ আগস্ট চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর আদালত এ রায় দিয়েছেন।

দণ্ডিত ইফতেখারুল কবিরকে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালে বরখাস্ত করে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। গত ৩০ জানুয়ারি একইভাবে গ্রাহকের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের একটি মামলায় তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড হয়। গত ১ জুন প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের আরেকটি মামলায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

সারাবাংলা/আরডি/একে

ইবিএল কারাদণ্ড টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর