চট্টগ্রামে এবার খামারের গরুতে ঝোঁক বেশি ক্রেতাদের
২৩ জুন ২০২৩ ১৩:৫৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল আজহার বাকি আর ৬ দিন। ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীর হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। তবে পশুর হাট এখনও জমে না উঠলেও নগরী ও আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা এগ্রো ফার্মগুলোতে অর্ধেকের বেশি গরু এরইমধ্যে বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করছেন খামারিরা। এসব খামারে দেশের নানা অঞ্চলের পাশাপাশি ভারতের গরুও ঠাঁই পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকালে নগরীর এক কিলোমিটার এলাকার নুর নগর হাউজিং সোসাইটিতে বসা কোরবানি পশুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাটে গরু আসতে শুরু করেছে। ক্রেতা সমাগমও হম। তারপরও যারা বাজারে আসছেন, দর-দাম পরখ করেই চলে যাচ্ছেন।
কুষ্টিয়ার গাংনী উপজেলা থেকে গতকাল (বুধবার) সকালে ট্রাকে ১১টি গরু নিয়ে এসেছেন মো. হাসান। এর মধ্যে দেশি কয়েকটি জাতের গরুর প্রতিটির দাম হাঁকছেন এক লাখ থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার পর্যন্ত।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোরবানি ঈদের আরও ৭ দিন বাকি আছে। বেঁচাকেনা এখনও শুরু হয়নি। রোববার বা সোমবার থেকে হাট জমবে। ক্রেতা আসছে, তবে দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছে।’
এদিকে বাজারের একদম সামনে ত্রিপল দিয়ে তৈরি ছাউনির নিচে একটি বড় গরু ঘিরে জটলা করছে স্কুলপড়ুয়া কিছু শিশু-কিশোর। কুষ্টিয়া থেকে মনোয়ার হোসেন দেশি জাতের একটি বড় গরু নিয়ে এসেছেন। লাল-কালো রঙয়ের ৯ মণ ওজনের গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে আট লাখ টাকা।
মনোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই বছর আগে গরুটি কিনে নিজেই লালনপালন করেছি। দুইজন ক্রেতা এসে দুই লাখ টাকা গরুটি দাম বলে গেছেন। এত কম দামে এই গরু বিক্রি করবো না। আমাদের ওইখানে কসাইরা তিন লাখ টাকা দাম বলেছে।’
এদিকে বাজারের সামনে প্রতি খুঁটির জন্য অনেক টাকা পরিশোধ করতে হওয়ায় সব গরু পেছনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারের সামনে রাখলে প্রত্যেক গরুর জন্য চার হাজার ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করতে হবে। আর ভেতরে হলে এক হাজার ৫০০। তাই গরুগুলো নিয়ে পেছনেই নিয়ে যাবো বলে ভাবছি। এত টাকা দিয়ে পোষাতে পারবো না।’
কারা এই টাকা নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে অনেকেই আছে। এদেরকে ইজারাদার কিছু টাকার বিনিময়ে একটি জায়গা ভাড়া দেয়। এরপর ওরা নিজেদের ইচ্ছেমতো খুঁটি বা গরু বাবদ বেপারিদের থেকে অর্থ আদায় করে নেয়।’
দিদারুল আলম নামের একজন ‘খুঁটি ব্যবসায়ী’ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইজারাদার থেকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ২০০ গরু রাখার মতো ভেতরে একটি জায়গা ভাড়া নিয়েছি। সামনে হলে এই জায়গার ভাড়া পড়তো চার লাখ টাকা। এখন এখানে এখানে প্রত্যেক গরু বা খুঁটি এক হাজার ৫০০ বা ৩০০ টাকা ভাড়া দেব। কিছু লাভ তো রাখতে হবে। এটা তো অস্থায়ী হাট। যিনি ইজারা নিয়েছেন তার থেকেও কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সে টাকা তো তার তুলতে হবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবার ১৪ শর্তে মোট ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি পেয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে। যদিও ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে অনুমতি চেয়েছিল চসিক। তবে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং সার্বিক যাচাইবাছাই শেষে ৯টি স্থানে পশুর হাট বসাতে অনুমতি দেওয়া হয়।
বর্তমানে নগরী তিনটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড় বাজার।
এগ্রো ফার্মগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রির ধুম
কোরবানির পশুর হাট এখনও জমে না উঠলেও নগরী ও আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা এগ্রো ফার্মগুলোতে অর্ধেকের বেশি গরু এরইমধ্যে বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করছেন খামারিরা। তাদের দাবি, হাট থেকে গরু কিনলে বাসার সামনে নিয়ে কয়েকদিন রাখতে হয়।
আর খামার থেকে গরু কিনলে কোরবানির দিন সকালেও নেওয়ার সুযোগ আছে। ক্রেতারা ওজন মেপে নিশ্চিত হয়েই গরু কিনছেন। এসব কারণে খামারে পালিত গরুর দিকে ঝোঁক অনেক ক্রেতার। অনেক ক্রেতা আগেই কোরবানির পশু পছন্দ করে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে বুকিং দিয়ে রেখেছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার নজু মিয়া রোডে অবস্থিত রাজ এগ্রো ফার্মের প্রদর্শনী স্থানে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রির জন্য গরু আছে ২৫টি। যেগুলোর ওজন ২০০ কেজি থেকে ৭০০ কেজি পর্যন্ত। দাম হাঁকা হচ্ছে দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত।
ফার্মের স্বত্বাধিকারী আশফাক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, “এবারে কোরবানিতে বিক্রির জন্য আমাদের ফার্মে ১০০টি গরু ছিলো। এর মধ্যে ৫৫টি গরু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে গরুটি ছিল সেটার ওজন প্রায় ৯০০ কেজি। নাম ছিল ‘রাজাবাবু’। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির ভাই সেটা কিনে নিয়েছেন।”
‘আর ৪ লাখ টাকা দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব ভাই একটি গরু নিয়েছেন। আশা রাখি আমার ফার্মের সব গরু কোরবানের আগে বিক্রি হয়ে যাবে।’
এবার গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর দামও বাড়াতে হয়েছে। আগে যেখানে কেজি প্রতি গোখাদ্য কিনতে খরচ হতো ৩০-৩২ টাকা, সেখানে এখন খরচ হতে হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা। এছাড়া কর্মচারীদের বেতনও আছে। সবমিলিয়ে একটি গরুর পেছনে এক হাজার থেকে ১২শ টাকা করে গড়ে খরচ হচ্ছে।’
কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যায় অবস্থিত আলীম এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মাকসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মূলত ব্রিডিং ফার্ম। চট্টগ্রাম সব ফার্মেই আমাদের থেকে গরু কিনে নিয়ে লালনপালন করে বড় করে। কোরবানির জন্য এবার আমরা ৬০টি ষাঁড় গরু প্রস্তুত করেছিলাম। এর মধ্যে ৩৪টি বিক্রি হয়ে গেছে।’
“খামারের সবচেয়ে বড় গরু যেটা আছে সেটা ব্রাহামা ক্রস। এর নাম দিয়েছি ‘অরুপ’। প্রায় ৯৫০ কেজি এর লাইভ ওয়েট আছে। এর দাম আমরা ১২ লাখ টাকা হাঁকিয়েছি। আর ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গরু আছে। যার এক হাজার কেজি ওজন হবে। এর দাম রেখেছি আট লাখ টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘নগরীতে বসবাসকারী অনেকেই কোরবানি করা গরু রাখার জায়গা পান না। দেখাশোনা বা যত্ন নেওয়ার সুযোগ পান না। এই সুযোগটাই আমরা করে দিচ্ছি। তাছাড়া আমাদের এখানে হাটের চেয়েও কম দামে গরু কিনতে পাওয়া যায়। আমাদের ফার্মে স্বপরিবারে এসে গরু পছন্দ করতে পারছেন ক্রেতারা। যেটা হাটে নেই।’
ছবি: শ্যামল নন্দী, ফটোকরেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা।
সারাবাংলা/আইসি/এমও