Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লাল তীরের এমএনটি ল্যাব পেল আইএসটিএ সনদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ জুন ২০২৩ ১৯:৩৩

ঢাকা: বিশ্বের সর্বোচ্চ বীজের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সীড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসটিএ) স্বীকৃতি ও সনদ পেয়েছে লাল তীর সীড লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এমএনটি সীড টেস্টিং ল্যাবরেটরি (এমএনটি)। দেশের বীজ পরীক্ষাগার হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি এ সনদ পেয়েছে। ফলে দেশের বাইরে বীজ রফতানির ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক রচিত হয়েছে।

শুক্রবার (২৩ জুন) গাজীপুরের বাসনে লালতীর সীড লিমিটেডের প্রধান গবেষণা কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় লাল তীর সীড লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আনাম এবং জেনারেল ম্যানেজার ড. আব্দুর রশিদসহ কোম্পানির আরও অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, লাল তীরের এমএনটি বীজ পরীক্ষাগার বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতে বীজের মান নির্ণয়কারী পরীক্ষাগারগুলোর মধ্যে প্রথম বিশ্বের সর্বোচ্চ বীজমান প্রত্যয়ন সংস্থার স্বীকৃতি ও সনদ পেয়েছে। এখন থেকে এ পরীক্ষাগারের জারি করা বীজের গুণমানের প্রত্যয়পত্র বিশ্বের সকল দেশের সরকার এবং বেসরকারি খাত কর্তৃক গ্রহণযোগ্য হবে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘দেশের সার্বিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমাদের ল্যবের এ স্বীকৃতি বড় প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি বিদেশে বীজ রফতানির ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার উন্মোচন হবে। এটি দেশের বীজ উন্নয়ন ও আমাদের পরীক্ষাগারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।’

তিনি বলেন, ‘এক সময় দেশে ফসল উৎপাদনের একটি বড় বাধা ছিল মানসম্পন্ন বীজের অভাব। স্থানীয় জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে বিভিন্ন ফসলের হাইব্রিড, উন্মুক্ত পরাগায়িত উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে শুরু থেকেই গবেষণা ও প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্বীকৃত পর এখন আমাদের বিশ্বমানের স্বীকৃতিগুলো আসছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা টিয়া কড়লা নামে একটি করলার বীজ উদ্ভাবন করেছি। করলায় ভারতসহ কোথাও এরচেয়ে ভালো জাত নেই। কিন্তু ভারতে নানা আইন থাকায় দেশটিতে বীজ রফতানি করতে পারি না। অথচ আমাদের দেশ থেকে এই জাতের বীজ ভিন্ন উপায়ে ভারতে যাচ্ছে। ভারতে যাতে বীজ রফতানি করা যায় সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ দেখছি না। লাল তীর গত বছর ১২ লাখ ডলারের বীজ রফতানি করেছে। আমরা প্রায় ১৫টি জাতের বীজ রফতানি করছি। এবার হয়তো রফতানি ১৫ লাখ ডলার হতে পারে। এই সনদ রফতানি বৃদ্ধিতে আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

সংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে লাল তীরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘উৎপাদন বাড়াতে বীজ প্রধান উপকরণ। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা (ব্রি ও বারি) ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে। আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছি, নতুন কোনো বীজ আসলে তার কিছু আমাদের দিতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, আইনে নেই। একমাত্র বিএডিসিকেই তারা বীজ দিতে পারবে। যেহেতু মাঠ পর্যায়ে আমরা বীজ সম্প্রসারণ করছি, আমাদেরও উদ্ভাবিত নতুন জাত দেওয়া উচিৎ। এতে নতুন বীজ দ্রুত সম্প্রসারিত হবে।’

লাল তীরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আনাম বলেন, ‘বাংলাদেশে উৎপাদিত লাল তীরের বীজ দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় রফতানি করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল সীড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদ অর্জন করার পর থেকে আমাদের পরীক্ষাগার তাদের সব পদ্ধতি-প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বীজের গুণগতমান পরীক্ষা করে আসছে। এই সংস্থা ২০১৫ সাল থেকে দীর্ঘ সাত বছর আমাদের কার্য-প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি যাচাই-বাছাই ও বহুমুখী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০২৩ সালের মে’তে বীজ পরীক্ষাগারকে বিশ্ব মানসম্পন্ন হিসেবে স্বীকৃতি সনদ অনুমোদন করেছে। ইতিপূর্বে আমাদের পরীক্ষাগার বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি সনদ অর্জন করেছে। এছাড়া বিশ্ব মানদণ্ডে গুণমানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইএসও) কর্তৃক প্রত্যয়িত।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৮৩টি দেশের ১৩০টি ল্যাবরেটরি ইন্টারন্যাশনাল সীড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের স্বীকৃত এবং বীজের মান নির্ণয় ও সনদ দেওয়ার জন্য অনুমোদিত। এসব পরীক্ষাগার আন্তর্জাতিক বীজ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বীজের গুণমানের সনদপত্র (কমলা এবং নীল) ইস্যু করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এই সনদ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে লাল তীর সীড লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি বেসরকারি খাতে প্রথম গবেষণাভিত্তিক বীজ কোম্পানি। এ পর্যন্ত লাল তীর ৩৫টি বিভিন্ন ফসলের ১৯৯টি জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮৭টি হাইব্রিড। পাশাপাশি দেশি জাত সংরক্ষণে এ পর্যন্ত লাল তীর বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ফসলের ১ লাখ ৩০ হাজার জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করেছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এনএস

লাল তীর সীড লিমিটেড


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর