Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপি হ্যাঁ বললেই লড়াই হবে ২ উত্তরসূরির

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুন ২০২৩ ০৮:০০

ঢাকা: ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন নয়’— এই অবস্থান থেকে সরে এসে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি ‘হ্যাঁ’ বললেই ফরিদপুর-২ আসনে লড়াই হবে দুই উত্তরসূরির মধ্যে।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেকমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সংসদ উপনেতা প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য এ আসনের বর্তমান এমপি শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী এবং বিএনপির সাবেক মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেকমন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু আগামী নির্বাচনে এ আসনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী।

বিজ্ঞাপন

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এবং নির্বাচন উন্মুক্ত তথ্যকোষ থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন-উপনির্বাচন মিলে এ আসনে ভোট হয়েছে মোট ১২ বার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ জিতেছে ছয় বার, বিএনপি তিনবার, জাতীয় পার্টি দুই বার এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জিতেছে একবার।

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খন্দকার নুরুল ইসলাম, ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী আব্দুল মতিন মিয়া, ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ কে এম খায়রুজ্জামান মিয়া, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে একই দলের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী, ১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনে বিএনপির আবুল হোসেন মিয়া, ১৯৯৬ সালের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কে এম ওবায়দুর রহমান, ২০০১ সালের নির্বাচনে কে এম ওবায়দুর রহমান, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাজেদা চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০২২ সালে তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে উপনির্বাচনে তার ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

বিজ্ঞাপন

নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুরের কৃঞ্চপুর ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনটি গঠিত। এলাকার সাধারণ ভোটারদের দেওয়া তথ্য মতে, ওবায়দুর রহমানের মৃত্যুর পর এই আসনটিতে বিএনপির ‘দাপট’ অনেকটাই কমে এসেছে। পাশাপাশি সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীও প্রয়াত হয়েছেন কিছুদিন আগে। তাই আওয়ামী লীগের অবস্থানও যে খুব শক্ত সেটা বলা যাচ্ছে না। এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএনপি নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিলে বদলে যেতে পারে হিসাব-নিকাশ। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামতে হবে। কে এম ওবায়দুর রহমানের উত্তরসূরি শামা ওবায়েদকে মোকাবিলা করা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সহজ হবে না— এমনটিই বলছেন এলাকার সাধারণ ভোটাররা।

সম্প্রতি নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ঘরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনের মাঠ। মনোনয়ন দৌড়ে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। এলাকার সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য মতে, বিরোধী শিবিরে নানারকম সমালোচনা থাকলেও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এবং পরবর্তী সময়ে টানা তিনবার সংসদ উপনেতা থাকায় এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিকভাবে দলের শক্ত ভিত তৈরি করেছেন। তার মৃত্যুর পর ছেলে লাবু চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো শক্তিশালী করেছেন। সুতরাং দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনিই এগিয়ে আছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে জিতে আসা তার জন্য খুব একটা কঠিন হবে না। তিনিই হতে যাচ্ছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকার প্রার্থী।

এ আসনে নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) আতমা হালিম এবং জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া। তবে মনোনয়ন যেই পাক দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ব্যাপারে সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

স্থানীয় নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক মুনিবুর রহমান শিমুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত যেই মনোনয়ন পান নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।’

এদিকে, ২০০৭ সালে কে এম ওবায়দুর রহমান মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তার ভাই কে এম জাহাঙ্গীর, স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ এবং কন্যা শামা ওবায়েদ। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ে জয়ী হন শামা ওবায়েদ। মেয়ের কাছে মনোনয়ন লড়াইয়ে হেরে বিএনপির রাজনীতি থেকে বিদায় নেন শাহেদা ওবায়েদ।

এরপর ২০১৩ সালে চাচা কে এম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান শামা ওবায়েদ। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কে এম জাহাঙ্গীর দল থেকে বহিষ্কার হন। ঢাকা থেকে রুহুল কবির রিজভী এক পত্রের মাধ্যমে তাকে বহিষ্কার করেন। এ বহিষ্কারাদেশের পেছনে যে শামা ওবায়েদের হাত ছিল, তা এখন ওপেন সিক্রেট। এভাবে একে একে ঘরের শত্রুকে পরাস্ত করে শামা ওবায়েদই এখন ফরিদপুর-২ আসনে বিএনপির কাণ্ডারী।

শুধু ফরিদপুর নয়, বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। আছেন ফরিদপুর বিভাগের দায়িত্বে। আন্দোলন-সংগ্রামেও মাঠে রয়েছেন বিএনপির তরুণ হেভিওয়েট নেতা। নিজের পরিশ্রম এবং বাবার ব্যক্তি ইমেজ কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন পুনরুদ্ধার করতে চান তিনি।

শামা ওবায়েদ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সদস্য সচিব শহীদুল ইসলাম খান বাবুলও আলোচনায় আছেন। তবে শামা ওবায়েদকে বাদ দিয়ে শহীদুল ইসলাম খান বাবুলকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কমে— এমনটিই বলছেন নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুরের কৃঞ্চপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মী সমর্থকরা।

নগরকান্দার স্কুল শিক্ষক শিকদার জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে, তাহলে এ আসনে প্রার্থী হবেন শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু। শহীদুল ইসলাম খান বাবুলও মাঠে আছেন। কিন্তু তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’

জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব আসনেই আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। আমাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করলে এসব যোগ্য প্রার্থীর মধ্য থেকে সর্বাধিক যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবে দল। আপাত আমরা প্রার্থিতা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের ভাবনায় এখন আন্দোলন।’

আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে ফরিদপুরের এ আসনটিতে অন্যান্য দলের তেমন কোনো প্রভাব নেই। বিভিন্ন ইস্যুতে হেফাজতে ইসলাম মাঝে-মধ্যে হৈ-হুল্লোর করলেও ভোট ব্যাংকে তাদের পুঁজি নিতান্ত নগণ্য। জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব কিছু ভোট থাকলেও সেটা নিয়ে প্রধান দুই দল তেমন মাথা ঘামাচ্ছে না। তবে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে জামায়াতের সমর্থন তাদের দিকেই থাকবে বলে মনে করেন এ আসনের সাধারণ ভোটাররা।

উল্লেখ্য, বর্তমান এই আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৫। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাজেদা চৌধুরী ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৯৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শামা ওবায়েদ পান ৭৫ হাজার ৭২৫। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাজেদা চৌধুরী পান ২ লাখ ১৯ হাজার ২০৬ ভোট। আর শামা ওবায়েদ পান ১৪ হাজার ৮০৫ ভোট।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফরিদপুর-২ আসন শামা ওবায়েদ শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী সাজেদা চৌধুরী

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর