হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে: টিআইবি
২৫ জুন ২০২৩ ১৮:৪৫
ঢাকা: হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাজনৈতিক প্রভাব, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাসহ হাসপাতাল পরিচালনায় বিবিধ দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। ফলে চিকিৎসা সেবার মান নিম্নগামী ও সুনাম নষ্ট হওয়ার কারণে রোগীর পরিমাণ ও হাসপাতালের আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি ক্রমেই একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার (২৫ জুন) সকালে ‘হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় টিআইবি’র এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানানো হয়। টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবি সদস্য তাসলিমা আক্তার ও মাহফুজুল হক।
২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত মুখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার, অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা থেকে গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালটিতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতির পরিপন্থি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বিনষ্ট করছে। হাসপাতালটির সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ১৪ দফা সুপারিশও করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
টিআইবি‘র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণায় হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের বিভিন্ন আইনি দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে। যথাযথ আইন ও বিধিমালা না থাকায়, বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিডিআরসিএস’র চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ট্রেজারার ও ক্ষমতাসীন দলীয় রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছে এবং হাসপাতাল পরিচালনা, নিয়োগ, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ, অনুদানের অর্থের আয়-ব্যয়সহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় বিডিআরসিএস চেয়ারম্যানকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, হাসপাতালের জন্য আলাদা মানবসম্পদ কাঠামো এবং আর্গানোগ্রামও নেই। ফলে অপরিকল্পিত নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিসহ হাসপাতালের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাসপাতালের লাইসেন্স নিয়মিত নবায়ন না করা, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্য নির্বাচন ও চেয়ারম্যানের কথামতো কাজ না করায় হাসপাতাল পরিচালকের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, হাসপাতালে জনবল নিয়োগ, পদায়নে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত পছন্দ ও দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য দেওয়া হয়। ডাক্তার নিয়োগে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে- চাকুরিপ্রার্থীদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ চাওয়ারও অভিযোগ উঠে এসেছে গবেষণায়। রাজনৈতিকভাবে নিয়োগের ফলে প্রশাসনিক কাজে প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ হাসপাতালের প্রাত্যহিক চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনায় চিকিৎসক, নার্স, নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ প্রয়োজনীয় জনবলের ঘাটতি রয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, হাসপাতালের আর্থিক সামর্থ্যে ঘাটতি রয়েছে এবং আয় বৃদ্ধিতে যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ। উল্টো হাসপাতালের ২০ শয্যার একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ডায়ালাইসিস সেন্টার থাকা সত্ত্বেও, বিতর্কিত জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে হাসপাতালে একটি বিশেষায়িত ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হয়। এমনকি জেএমআইকে সুবিধা দিতে হাসপাতালের নিজস্ব মেশিন অকেজো রাখার অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাইরে প্রাইভেট চেম্বার করেন বলে জানা গেছে গবেষণায়। ইন্টার্ন ডাক্তারের মাধ্যমে রোগীকে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ভিজিটিং কার্ড দেন। হাসপাতাল প্রদত্ত পরীক্ষার প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সন্দেহ দূর করা এবং নিশ্চিত হয়ে সেবা দেওয়ার অজুহাতে রোগীকে হাসপাতালের বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে প্যাথলজি পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
একটি মানবিক সহায়তা সংস্থা হলেও হাসপাতালটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকার কর্তৃক অনুদান এবং আয় ও ব্যয়ের হিসাব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে নথিভুক্ত ও নিরীক্ষার আওতায় আনেনি, যা অংশীজনদের আস্থার সংকট তৈরি করেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম