সেই মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও গণমাধ্যমকে দুষলেন সিইসি
২৬ জুন ২০২৩ ১৫:৪৬
ঢাকা: বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছিলেন, ‘উনি (প্রার্থী) কি ইন্তেকাল করেছেন’।
এমন মন্তব্যের পর উঠে সমালোচনার ঝড়। অবশেষে ওই মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন সিইসি। ‘বিতর্কিত’ ওই বক্তব্যের জন্য ১৪ দিন দুঃখ প্রকাশ করলেও গণমাধ্যমের ওপর দোষ চাপালেন তিনি। সিইসি দাবি করেছেন তার বক্তব্য ‘বিকৃতভাবে’ প্রকাশ করা হয়েছে। যার কারণে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (২৬ জুন) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বাক্ষতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন সাধারণ নির্বাচন-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আনুমানিক বিকেল ৫টা সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা ব্রিফ করার সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের পক্ষে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে বর্ণিত প্রার্থীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছেন। ওই বিষয়টি বিকৃতভাবে ও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রার্থীকে কটাক্ষ করেছেন ও তার মৃত্যু কামনা করেছেন- মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও নির্বাচন কমিশনকে হেয়প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন- মর্মে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, “প্রকৃত বিষয় হলো- বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনা অবহিত হওয়া মাত্রই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তপূর্বক বর্ণিত বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মর্মে ১৪ জুন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে মো. মঈনুল ইসলাম স্বপন ও মো. জহিরুল ইসলাম রেজভীকে গ্রেফতার করেও বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপর্যুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও অন্যান্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে শনাক্তকরণসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোনো মন্তব্য/বক্তব্যে কোনো ব্যক্তি মর্মাহত হলে তিনি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সর্বোপরি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে যে, রাজনৈতিক নেতারা ও গণমাধ্যম কর্মীরা সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত যেকোনো বক্তব্য ও সংবাদ প্রচার করবেন এবং বর্ণিত অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত মন্তব্য ও সংবাদ প্রচার-প্রকাশ হতে বিরত থাকবেন।’
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন হামলার শিকার হন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। ভোট শেষে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকেরা সিইসির কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘একজন মেয়রপ্রার্থীকে রক্তাক্ত করা হলেও এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ বলা যায় কি না?’
জবাবে সিইসি বলেছিলেন, ‘এটা আপেক্ষিক। রক্তাক্ত সবকিছু আপেক্ষিক, উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? আমরা দেখেছি—না, উনি কি কতটা…উনার রক্তক্ষরণটা দেখিনি। যতটা শুনেছি—উনাকে কেউ পেছন থেকে ঘুষি মেরেছে। উনিও বলেছেন, ভোট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না, তাকে আক্রমণ করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/জিএস/ এনইউ