Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাবুলের বাসায় মুসা আসতেন, আদালতে দারোয়ানের সাক্ষ্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুন ২০২৩ ১৯:৪৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের বাসার দারোয়ান আবদুস সাত্তার মোল্লা। সাক্ষ্যে বাবুলের বাসায় মিতু হত্যা মামলার পলাতক আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার প্রায়ই আসা-যাওয়া ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার (২৬ জুন) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাক্ষ্যগ্রহণের পর আবদুস সাত্তারকে আসামিপক্ষের জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আদালত আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মূলতবি করেছেন।’

সাক্ষ্যে আবদুস সাত্তার বলেন, ‘বাবুল আক্তারের ছেলে মাহিরকে সবসময় স্কুলের বাসে দিয়ে আসতেন কনস্টেবল সাদ্দাম। নিয়েও আসতেন তিনি। কিন্তু ঘটনার দিন সাদ্দাম আসেনি। তাই বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু ম্যাডাম মাহিরকে নিয়ে সকাল সাড়ে ছয়টায় বাসে তুলে দিতে যান। আমি তখন দায়িত্বে থাকা অন্য সিকিউরিটি গার্ড তারেককে দায়িত্ব দিয়ে চা আনতে ফ্লাস্ক নিয়ে বের হন।’

‘বিল্ডিং থেকে বের হয়ে শেষ মাথার ডানদিকে গিয়ে দেখি ম্যাডাম রাস্তার ওপর পড়ে আছে আর মাহির চোখ মুছে মুছে কান্না করছে। আমি তখন দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বিল্ডিং এর নিচে চলে আসি। এরপর বিল্ডিং-এর সব বাসায় কল দিয়ে ঘটনা জানাই। বাবুল স্যারের বাসায় কল দিয়ে তাদের বাসার কাজের মেয়ে ফাতেমাকে বলি একটি চাদর নিয়ে আসার জন্য। এরপর আমি চাদর দিয়ে ম্যাডামের লাশকে ডেকে দেই। পরে পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায়।’

সাক্ষ্যে তিনি আরও বলেন , ‘আমি চাকরি করাকালীন মুসা নামের একজন বাবুল স্যারের বাসায় প্রায় আসতেন।’

বিজ্ঞাপন

তখন আদালত তিনি মুসাকে চেনেন কিনা জিজ্ঞেস করেন।

জবাবে আবদুস সাত্তার বলেন, ‘প্রথমদিকে চিনতাম না। তিনি বাজার নিয়ে আসতেন। আমি ম্যাডাম থেকে পারমিশন নিয়ে তাকে যেতে দিতাম। কখনো কখনো বাজার নিচে রেখে যেত। ফাতেমা এসে নিয়ে যেতেন। বাবুল স্যারের বাসার জন্য আলাদা রেজিস্ট্রি খাতা ছিল। কেউ আসলে নাম লিখে নিতাম। ঘটনার তিন চারদিন আগে আমি ওয়াশরুমে গিয়েছি। কারা যেন খাতাটি তখন নিয়ে গেছে।’

সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতের হাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে শনাক্ত করেন আবদুস সাত্তার। এরপর তাকে জেরা করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন।

জেরায় আবদুস সাত্তার বলেন, ‘বাবুল আক্তার যে বিল্ডিং-এ থাকতেন সেটিতে আমি ২ বছর ধরে চাকরি করি। তবে কোন সাল থেকে কোন সাল সেটি মনে নেই। বাবুল স্যার কোন বছর থেকে থাকেন বা কত বছর ছিলেন সেটিও আমি জানি না। এগুলো আমার জানার বিষয় না। স্যারের বাসায় যাওয়ার জন্য যে রেজিস্ট্রি খাতা ছিল সেটা কখন, কোন তারিখ বা কে নিয়ে গেছে সেটি জানি না। তবে আরেকজন যে ডিউটিতে ছিলেন তারেক তার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। তবে নিয়ে যেতে আমি দেখিনি। তারেকের কাছ থেকে শুনেছি।’

‘বাবুলের বাসায় শুধু মুসাই আসতেন। সে ছাড়া আর কেউ ওই রেজিস্ট্রিতে আর কারও নাম নেই। আর কেউই আসতেন না। খাতাটির সাইজ ৫/৮ ইঞ্চি ছিল।’

জেরায় খাতাটির রং, সর্বশেষ এন্ট্রি, কোন সময়ে খোলা হয়েছে এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব জানেন না বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘খাতাটি শুধু বাবুল আক্তার স্যারের পারসোনাল ছিল। ফ্ল্যাট মালিক সমিতির চেয়ারম্যান বিষয়টি জানতেন। বাবুল স্যার ওই বিল্ডিং-এর ভাড়াটিয়া ছিলেন। তার ফ্ল্যাট নম্বর ছিল ডি-৭। বিল্ডিং ও এর আশেপাশ এবং রাস্তাঘাট সিসি ক্যামেরার আওতাধীন ছিল। যারা ওখানে আসতেন তাদের সিসি ক্যামেরায় ছবি উঠত।’

বিজ্ঞাপন

জেরায় সাত্তার আরও বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে ওই বাসায় আমি থাকাকালীন আর পুলিশ আসেনি। আমি আড়াইমাসের মতো ছিলাম আরও। সকাল ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমার ডিউটি ছিল। এর মধ্যে ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর আমাকে সাক্ষ্য দিতে আগ্রাবাদ ডিবি অফিসে চারদিন যেতে হয়েছে। তারা গাড়ি করে নিয়ে যেতো আবার দিয়ে যেত। পরে ম্যাজিস্ট্রেটকে সাক্ষ্য দেয়। এরপর আমি গ্রামের বাড়িতে চলে যাই।’

‘আমি ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কাছে একই জবানবন্দি দিয়েছি। মুসা ঘটনার পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে সকাল ১০-১১ টার দিকে বাজার নিয়ে এসেছিল। মুসা ওদের কাজের লোক ছিলও কিনা সেটি আমি জানি না। বাজার করতেও কে বলত সেটিও জানি না।’

সাত্তারের সাথে ওই বিল্ডিং-এ তারেক নয় বরং জসিম নামের সিকিউরিটি গার্ড ছিলো বাবুল আক্তারের আইনজীবীর এমন দাবিতে তিনি বলেন, ‘ইক্যুইটি সেঞ্চুরিয়ান নামক ওই বিল্ডিং এ আমরা চারজন সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্বে ছিলাম। বাকি তিনজনের নাম মনে নেই। জসিম নামের কেউ দায়িত্ব ছিল কিনা জানি না।’

এ সময় বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন দাবি করেন, তারেক নামে কোনো সিকিউরিটি গার্ড ওই বিল্ডিংয়ে ছিল না। তার কাছ থেকে খাতা নিয়ে যাওয়া, মুসা নামের কেউ বাবুলের বাসায় বাজার করে দেওয়া সব মিথ্যা ও বানোয়াট। এ ছাড়া ঘটনার পাঁচ বছর পর ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তার পিবআইয়ের শিখিয়ে দেওয়া তথ্য নিয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি কর্মহীন এবং বেকার তাই তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লাভবান হতে বাবুল আক্তারকে মামলায় জড়াতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।

জবাবে আবদুস সাত্তার এসব সত্য নয় বলে জানান।

জেরা শেষে কফিল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিতু হত্যার পরদিন সাত্তার ন্যাচারাল জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার পাঁচ বছর পর এসে তিনি পুলিশকে অন্যরকম জবানবন্দি দে্ন। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে্ তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছেন সেটি ১০০ শতাংশ মিল। আমরা তাকে মুসাকে চিনত কিনা জিজ্ঞেস করেছি। তিনি চেনেন না বলে জানান।’

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য দেন।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া।

অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে এখন শুধু মুসা পলাতক আছেন।

সারাবাংলা/আইসি/একে

টপ নিউজ বাবুল মিতু হত্যা মুসা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর