ঢাকা: রাজধানী থেকে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের দিকে ভোগান্তি ছাড়াই এখন পর্যন্ত ইদে বাড়ি ফিরছে যাত্রীরা। মেঘনা সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে ঢাকার প্রবেশমুখে জটের কারণে ধীরগতিতে যান চললেও রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে নির্বিঘ্নেই যেতে পারছেন যাত্রীরা। আর তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বড় ধরণের জট ছাড়াই রাস্তায় যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে যাত্রীরা।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে।
এদিন সকাল ৭টায় রাজধানীর আরামবাগ এলাকার বিভিন্ন কাউন্টারে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়।
টিটি পাড়া সংলগ্ন গরুর বাজারের কারণে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরে সোমবার (২৬ জুন) বিকেল থেকে সৃষ্টি হওয়া জ্যামের কারণে আরামবাগ, ফকিরাপুলের অধিকাংশ কাউন্টারেই সময়মতো গাড়ি পৌঁছাচ্ছে না। ঢাকায় প্রবেশের আগেই ভবেরচর এলাকা ও এরপরে মেঘনা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে গাড়ি কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। আর তাই সময়মতো ঢাকায় নির্ধারিত কাউন্টারে পৌঁছাতে পারছে না বাস। ফলে অগ্রীম টিকেট কেটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
প্রায় একই অবস্থা সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ীর বাস টার্মিনাল এলাকাতেও। নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনীসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকার গাড়ি এখান থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে এসব এলাকায় গাড়ি পর্যাপ্ত থাকায় খুব একটা বেশি ভোগান্তি নেই যাত্রীদের। একইসঙ্গে দেখা গেছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসও।
ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করা এশিয়া পরিবহনের চালক মো. জসিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে ইদে দেখা যেত এক ট্রিপেই দিন শেষ। তবে এবার এমনটা হচ্ছে না। গতকাল মারলাম তিন ট্রিপ আর আজকেও আল্লাহ দিলে দুই নম্বর ট্রিপ মারব এখন। যাত্রীও আছে মোটামুটি। তবে মেঘনার পর থেকে ঢাকায় ঢোকার মুখে গাড়ি স্লো না হলে আরও বেশি ট্রিপ হতো।’
এদিন সকাল ৯ টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় তুলনামূলক কম গাড়ির সংখ্যা দেখা যায়৷ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইদযাত্রার আগে সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত থাকা মেডিয়ান গ্যাপগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে এখানে ইউলুপ সিস্টেম চালু করার কারণে কোনো পরিবহনের আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।
সরেজমিনে মেঘনা ব্রিজ এলাকায় দেখা যায়, ধীরগতিতে হলেও রাস্তায় জট বাধা ছাড়াই গাড়ি চলছে। সোনারগাঁও-মোগরাপাড়া এলাকায় রাস্তার কাজ চলার কারণে কিছুটা ধীরগতি এই এলাকার রাস্তায়।
দাউদকাদি গোমতী ব্রিজ এলাকাতেও প্রায় একই রকমের দৃশ্য দেখা গেলেও তুলনামূলক ধীর গতিতে চলছে গাড়ি মাধাইয়া-চান্দিনার বাজার সংলগ্ন সড়কে। মাঝে মধ্যে একটু জট দেখা গেলেও হাইওয়ে পুলিশসহ প্রশাসনের উপস্থিতিতে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, সুয়াগাজী, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী মহিপাল, বারইয়ারহাট, সীতাকুন্ড এলাকায় গাড়ি ধীরগতিতে চললেও কোথাও জ্যাম দেখা যায়নি।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেও তাই দেখা গেছে উচ্ছ্বাস।
বসুরহাটের উদ্দেশে গাড়িতে ওঠা যাত্রী নাজমা আক্তারের সঙ্গে নিমসার সড়কে কথা হয় প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, ‘গত কাইল ছুটি পাইলাম। আর তাই দেরি না কইরা আইজকাই বাইর হইয়া গেলাম। গতবার বেহানে বাইর হইয়াও ইফতার ধরতে পারি নাই। এবার তো প্রায় অর্ধেকই আইসা পড়লাম নিরিবিলি। সমস্যা হয়নি।’
বাসভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ থাকলেও অধিকাংশ যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে ইদে ঝামেলামুক্ত ভাবে বাড়ি ফিরতে পারার এই উচ্ছ্বাস।
কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাসড়কে যাত্রীবাহী পরিবহন ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের পণ্যবাহী যান চলাচল করে। ইদযাত্রায় এই মহাসড়কে যেনো যাত্রীদের কোনো দুর্ভোগ না হয় সেদিকে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়কের যেসব স্থানে বাজার আছে সেগুলোসহ মূল রাস্তায় দেখা যায় একটি গাড়ি নষ্ট হলেই রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি হয়। অনেক সময় আবার দেখা যায় সাধারণ মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে ভুলভাবে। এক্ষেত্রে আসলে সব মিলিয়ে যে বিশৃঙ্খলাগুলো হয় তাতেই যানজট লেগে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা উদ্ধার কাজ চালানোর সময়টাও পাই না। অল্প সময়েই গাড়ি ভুল রাস্তায় ভিন্ন লেইনে চলে আসে। আর এগুলোর কারণে সৃষ্টি হয় জ্যাম। আর তাই এবার প্রতিটা মোড়ে আমাদের সদস্যরা থাকবে নজরদারির জন্য।’
কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এই পুলিশ সুপার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক আছে। আশা করছি বাকি সময়ও এভাবেই চালাতে পারব আমরা। সজাগ দৃষ্টি রেখে আমরা রাস্তায় সবার ইদযাত্রা সহজ করতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’
তিনি জানান, এই মহাসড়কে ২২টি থানা/ফাঁড়ির ২ পালায় ৬৬ টি পেট্রোল টিমের পাশাপাশি কোন ইমার্জেন্সি সামাল দিতে থাকবে ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছে। ইদ যাত্রায় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পাঁচটি সরকারি ও ১২ টি বেসরকারি রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক এম্বুলেন্স থাকছে দুর্ঘটনায় হতাহতের সেবার জন্য।
তিনি বলেন, ‘ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো যানবাহন না থামানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে। এ ছাড়াও ২ টি গোয়েন্দা টিম কাজ করছে ঈদের আগে ও পরের সপ্তাহব্যাপী। একটি পূর্ণাঙ্গ কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি কাজ করছে পাঁচটি সাব কন্ট্রোল রুম।’
কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ বলেন, ‘বিগত বছরের মতো এবারও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে বলে প্রত্যাশা করছি। এছাড়াও নির্দিষ্ট গন্তব্য ব্যতীত কোরবানির পশুবাহী গাড়ি ভিন্ন কোনো জায়গায় জোরপূর্বক নামানো যাবে না। প্রয়োজনে হাইওয়ে পেট্রোল সেই গাড়িকে তার নির্দিষ্ট হাটে পৌছাতে সহায়তা করবে। চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের পাশাপাশি এবারও বিশেষ ইউনিফর্মে থাকবে হাইওয়ে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ১০০ প্রশিক্ষিত সদস্যরা রাস্তায় কাজ করবে।’