Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গরু বেচতে নয়, ফ্যাশন শো দেখাতে এসেছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ জুন ২০২৩ ২১:৪৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদের আর এক দিন বাকি। চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে তাই ক্রেতাদের ভিড় ধীরে ধীরে বাড়ছে। বৃষ্টির বাগড়া থাকলেও বেচাকেনা থেমে নেই৷  তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যাপারীরা।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর সাগরিকা, বিবিরহাট ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডের সিডিএ মাটির মাঠ গরুর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাক ও পিকআপ করে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা এখনো গরু নিয়ে আসছেন।

সকাল থেকে থেমে থেমে আসা বৃষ্টিতে হাটজুড়ে কাদা জমেছে। অনেকে বৃষ্টির জন্য ছাতা নিয়ে ঘুরছেন। হাটের সড়কে কাদা হওয়ায় কেনা গরু নিয়ে বাড়ি ফিরতে ঘাম ছুটছে ক্রেতাদের।

সন্তোষজনক দাম না পাওয়ায় অনেকেই এক হাট থেকে অন্য হাট ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেক ক্রেতা দাবি করছেন, ব্যাপারীরা আগেরবারের চেয়ে এবার দাম বেশি চাচ্ছেন ও গরু ছাড়ছেন না। অন্যদিকে ব্যাপারীদের অভিযোগ, ক্রেতারা যে দাম বলছেন সেটা দিয়ে গরু বিক্রি সম্ভব নয়।

বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছানোয়ারুল হক তার সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন সাগরিকা পশুর হাটে। গরু পছন্দ হলেও দামে না মেলায় কিনতে পারেননি। ছানোয়ারুল হক সারাবাংলাকে বলেন, গতবারের তুলনায় এবারের গরুর দাম বেশি। গত দুই দিন ধরে বেশ কয়েকটি হাটে ঘুরছি। কিন্তু গরু কিনতে পারছি না। তারা গরু ধরে রেখেছে। ছোট গরুও এক লাখ টাকার নিচে ছাড়ছে না। বুঝতে পারছি না কী করব।

ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাটে এবার এক থেকে দেড় মণ ওজনের গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৯০ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। দুই থেকে চার মণ ওজনের গরুর দাম পড়ছে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা। পাঁচ মণ ওজনের গরুর দাম বলা হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। ১০ মণ বা তার বেশি ওজনের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে চার থেকে সাত লাখ টাকা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২১টি গরু নিয়ে এবার চট্টগ্রামের সাগরিকা পশুর হাটে এসেছেন ব্যাপারী সিরাজুল ইসলাম। সব কয়টিই দেশি জাতের গরু। তবে এখনো বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র একটি গরু।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, হাটে এসেছি গত পরশু (রোববার)। কিন্তু এখন পর্যন্ত গরু বিক্রি করতে পেরেছি একটি। ক্রেতারা যে দাম বলছে সে দামে আমার কেনাই নেই। এরমধ্যে গাড়িভাড়া খরচ আছে। এতদূর থেকে তো আর লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করতে আসিনি। বিক্রি হলে হবে। না হলে এগুলো নিয়ে আবার চলে যাব।

মাগুরা থেকে বিবিরহাট বাজারে আসা গরুর ব্যাপারী আকতার আলী বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, বাজারের অবস্থা তেমন ভালো নয়। লাভ দিয়ে গরু বিক্রি করতে পারছি না। দাম চায় কম। আমি ১২টি গরু এনেছি। এরমধ্যে সীমিত লাভ দিয়ে আটটি গরু বিক্রি করে দিয়েছি। যে চারটি আছে ওগুলো নিয়েও কোনো আশা-ভরসা পাচ্ছি না।

সারিকুল ইসলাম নামে এক গরুর ব্যাপারী বলেন, এবার কাস্টমার কম। অনেক জায়গায় হাট বসেছে। যারা আসছে তারা দাম শুনে চলে যাচ্ছে। বললেও অনেক কম বলছে। এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা গরু এক লাখ টাকায় চাচ্ছে। বাড়িতে কসাইরা এর চেয়েও বেশি দামে কিনতে চেয়েছে। কিন্তু দেইনি। এখানে আনলে বেশি দামে বিক্রি করতে পারব বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু যে দাম বলছে সেটাতে গরু ছাড়তে পারছি না।

মনসুর আহমেদ নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে সারাবাংলাকে বলেন, মনে হচ্ছে তারা গরু বিক্রি করতে আনেননি। গরু নিয়ে ফ্যাশন শো দেখাতে এসেছে। ছোট ছোট গরুর যে দাম চাওয়া হচ্ছে সেটা গতবারের চেয়ে আকাশ পাতাল তফাৎ। এরকম হলে মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তদের গরু দিয়ে কোরবানি দেওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে ছাগল দিয়ে কোরবানি করতে হবে।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যাপারী সারিকুল ইসলাম বলেন, এবার তেলের দাম বাড়ায় গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সবরকম পশুর খাদ্যের দাম চওড়া। হাটে গরু রাখার খরচও বেড়েছে। খুঁটিতে যেখানে আগে গরুপ্রতি এক হাজার টাকা নিতো সেখানে নেওয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। তাই গরু বা ছাগল যা কেনেন বাড়তি দাম গুনতে হবে। ছোট ও মাঝারি গরুর দাম বাড়তি।

আগামী ২৯ জুন (বৃহস্পতিবার) পবিত্র ঈদুল আজহা। এবার নগরীতে সাতটি অস্থায়ী ও তিনটি স্থায়ী হাট বসেছে। সাতটি অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে আছে কর্ণফুলী অস্থায়ী পশু বাজার, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন আহম্মদপাড়া-সংলগ্ন টিএসপি মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড় পোলের গোডাউনের মাঠ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডের সিডিএ মাটির মাঠ।

এছাড়া তিনটি স্থায়ী পশুর হাট হচ্ছে সাগরিকা বাজার, বিবিরহাট বাজার ও পোস্তারপাড় ছাগলের হাট।

সারাবাংলা/আইসি/আইই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর