Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পদ্মা রেল সংযোগ সেতু: ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন চলবে সেপ্টেম্বরে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুন ২০২৩ ১৩:০৫

ঢাকা: কথা ছিলো প্রমত্তা পদ্মার বুকে গড়ে ওঠা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি, নিচ দিয়ে ছুটবে ট্রেন। দুই যানবাহন চলবে একইসঙ্গে। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণ জটিলতায় একসঙ্গে তার উদ্বোধন সম্ভব হয়নি। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের একবছর পার হয়েছে, এরপর এই পথে ট্রেন চালু করা যায়নি। বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে আগে ট্রেন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, পদ্মাসেতু অংশের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে, এখন ঢাকার অংশ পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত করতে ৪ কিলোমিটার রেললাইনের নির্মাণকাজ চলছে। এই অংশের কাজ শেষ হলে আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আর পরের বছরের জুনে চলবে যশোর পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

সূত্র অনুযায়ী, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলা। সেই পরিকল্পনায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ। এরইমধ্যে রাজধানী ঢাকার কমলাপুর থেকে ভাঙা পর্যন্ত ৮১ কিলোমিটার লাইন স্থাপন শেষ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ লিমিটেড এই রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু করে।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে মাওয়া ৪০ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং তৃতীয় ধাপে ভাঙা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ হবে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত ৮১ কিলোমিটার পথে রেল লাইন বসানো শেষ। এই পথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরুও হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে এই পথে যাত্রী পরিবহন শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। পাশাপাশি যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারে ট্রেন চলবে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ বাসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের কাজ বাকি আছে ৩০ শতাংশ। ঢাকার পথকে পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত করতে আধা কিলোমিটারে পাথর এবং চার কিলোমিটার পাথরবিহীন রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই অংশের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা তাদের।

জানা যায়, ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মাসেতু এরপর ভাঙা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ লাইনের ২৩.৩৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, মাইনর সেতু ও কালভার্ট মিলিয়ে ২৭৪টি, ৩০টি লেভেল ক্রসিং, ১৩১টি আন্ডারপাস, ৫৮টি মেজর ব্রিজসহ ২০টি আধুনিক স্টেশন করা হবে এই রেলপথে।

এরমধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে হবে ৫টি স্টেশন। এরমধ্যে ভাঙ্গায় নির্মিত হচ্ছে সবচেয়ে বড় ও আধুনিক স্টেশন। এই স্টেশনটি হবে উন্নত দেশের মতো। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক রেল জংশন। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ২০ স্টেশনের ১৬টি নতুন করে নির্মাণ করতে হচ্ছে। আর পুরনো চারটি স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হবে।

এছাড়া সেতুর দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হচ্ছে চারটি রেলস্টেশন। প্রতিটি স্টেশনে থাকবে অফিস ভবনসহ আধুনিক সব সুবিধা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে দেশের উড়াল ও লেভেলক্রসিংবিহীন প্রথম রেললাইন।

জানা গেছে, ২০টি রেলস্টেশনের কাজ প্রায় শেষ। কাজ চলছে মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণের। এই রেলপথের ২৩ কিলোমিটার হবে পাথর ছাড়া উড়াল রেলপথ। ঘণ্টায় ছুটবে ১২০ কিলোমিটার গতিতে। ফলে ঢাকা থেকে যশোর পৌঁছানো যাবে মাত্র দুই ঘণ্টায়।

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘পদ্মাসেতুর দুই পাড়ের ৬.৬৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্টসহ ১৩ কিলোমিটার পাথরবিহীন রেলপথ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। আর পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশের বেশি। প্রকল্প তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতির ৮০ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। তবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশে আগামী সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী রেল চলাচল করবে।’

সারাবাংলা/জেআর/এমও

ট্রেন চলাচল ঢাকা-ভাঙ্গা পদ্মা রেলসংযোগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর