Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নামাজ-কোরবানিতে উৎসবে মেতেছে বন্দরনগরী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুন ২০২৩ ০৯:১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল আজহার নামাজ আদায়, পশু কোরবানিসহ উৎসবের নানা রঙে মেতেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নামাজে নানা শ্রেণি-পেশার নির্বিশেষে লাখো মানুষ এক কাতারে এসে ত্যাগের মহিমায় আত্মশুদ্ধির ফরিয়াদ জানিয়েছেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। পাশাপাশি বিশ্ব শান্তির প্রার্থনাও ছিল মুসল্লিদের।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদে বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকালে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন। এরপর শুরু হয়েছে পশু কোরবানি।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে সকাল সাড়ে ৭টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইমামতি করেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী। একইস্থানে সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় জামাত।

জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রথম জামাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মুসল্লিদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠ নামাজ আদায় করেন। তবে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় মসজিদেই নামাজ আদায় করেছেন রাজনীতিক-জনপ্রতিনিধিরা।

চট্টগ্রাম নগরীতে এবার সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে আরও ৮টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- শেখ ফরিদ চশমা ইদগাহ জামে মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন শাহী জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফিন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরু বাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দীক চসিক জামে মসজিদ।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া চসিকের ৪১ ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে একটি করে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দেশবাসীর জন্য দোয়া করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে যে সংকট চলছে, দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে গেছে, সাধারণ মানুষ যে কষ্ট পাচ্ছে, সেটা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছি। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি যেন শতায়ু হন এবং আমৃত্যু নেতৃত্ব দিতে পারেন, সেই প্রার্থনা করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। কিন্তু আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র নির্বাচনের রাজনীতি কেন্দ্রিক দল নয়। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু একজন রাজনীতিক নন, তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক। তিনি শুধু নির্বাচনের চিন্তা করেন না, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চিন্তা করেন। সুতরাং নির্বাচন সঠিক সময়ে সবাইকে নিয়েই হবে।’

নামাজ আদায়ের পরপরই নগরীর বিভিন্ন অলিগলি, রাস্তায়, মাঠে, বাসা-বাড়ির সামনে কোরবানি শুরু হয়। পশু জবাইয়ের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৩০৪টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে কোরবানির জন্য সিটি করপোরেশনের আহ্বানে তেমন সাড়া মেলেনি।

কোরবানি শুরুর আগে সকাল থেকেই বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এবার চসিকের পক্ষ থেকে বর্জ্য অপসারণে ৩৪৫টি গাড়ি নিয়ে নিয়োজিত আছেন ৪৩০০ কর্মী।

চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সকাল ৮টা থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। প্রথমে সড়কে, অলিগলিতে এবং হাটের আশপাশে খড়কুটোসহ যেসব বর্জ্য আছে, সেগুলো পরিস্কার করা হচ্ছে।

এছাড়া অলিগলিতে কোরবানি হওয়া পশুর বর্জ্য সংগ্রহ করে জমা করা হচ্ছে। ছোট গাড়িতে সেগুলো মূল সড়কে এনে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হবে। পশুর চামড়া, লেজ-মাথাসহ শরীরের অবশিষ্টাংশ যাতে যত্রতত্র ফেলতে না পারে সেজন্য সতর্ক অবস্থায় আছে চসিক।

এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে দু’জন কাউন্সিলরকে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

কাউন্সিলর মোবারক আলী জানিয়েছেন, তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ পশু এবার কোরবানি হবে বলে তাদের ধারণা। নিয়মিত দুই থেকে আড়াই হাজার টন এবং কোরবানির ৫ হাজার টন মিলিয়ে সাত থেকে সাড়ে ৭ হাজার টন বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে চসিক।

মেয়র সকাল ৯টা থেকে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ বিকেল ৫টার মধ্যে বর্জ্য পুরোপুরি অপসারণের সময় বেঁধে দিয়েছেন। তবে এরপরও চসিকের টহল টিম কাজ করবে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর মোবারক আলী।

এদিকে কোরবানির পশুর চামড়া যত্রতত্র রেখে যাওয়া এবং কেনাবেচাকে ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে নগর পুলিশেরর একাধিক টিম মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত উপ কমিশনার (জনসংযোগ) স্পিনা রাণী প্রামাণিক।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

ঈদুল আজহা নামাজ-কোরবানি বন্দরনগরী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর