ঈদের ছুটির ফাঁদে চিকিৎসাসেবা, ভোগান্তিতে রোগীরা
২৯ জুন ২০২৩ ১৬:২৪
ঢাকা: আশিষ-জয়া দম্পতির ছেলে ঋদ্ধিমানের খুব জ্বর গতকাল বুধবার (২৮ জুন) রাত থেকে। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকালে তার সঙ্গে দেখা দেয় খিঁচুনি। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। বাইরে বৃষ্টি, তার ওপর কোরবানির পশু জবাই বাড়ির আঙ্গিনা জুড়ে। এ পরিস্থিতিতে আধভেজা হয়ে দুপুরে রাজধানীর মুগধা হাসপাতালে পৌঁছান তারা।
জরুরি বিভাগ খোলা থাকায় কোনো ঝামেলা না হলেও বিপত্তি দেখা দেয় ছেলের রক্ত পরীক্ষা নিয়ে। ডাক্তার জরুরি ডেঙ্গু পরীক্ষা করার কথা লিখেছেন, কিন্তু সব ধরনের টেস্ট বন্ধ হাসপাতালটিতে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেডিনোভা, পদ্মা, পপুলার ও ইবনে সিনাসহ বিভিন্ন ল্যাবে যান বিকেল পর্যন্ত। ঈদের কারণে সব বন্ধ। শেষ পর্যন্ত ঘরে ফিরে যেতে হয় তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও অন্যান্য বিভাগ এদিন বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলো পুরোপুরি বন্ধ থাকায় রোগীদের দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগ খোলা। রোগীরা আসছেন চিকিৎসা নিতে। তবে স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদের সময় মূলত কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। তাই এদিন কাটা-ছেঁড়ার রোগী বেশি আসে। আরও আসে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে। এসব রোগী বিকেলের দিকে বেশি আসে।
জরুরি বিভাগে থাকা হাসপাতালের কর্মী মো. শাহজাহান সারাবাংলাকে জানান, হাসপাতালের বেডেও প্রচুর রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
চিকিৎসা নিতে আসা মনিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোরবানির পশু জবাই করতে গিয়ে পায়ে কোপ লেগেছে। তিনটি সেলাই লেগেছে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েও এমন চিত্র দেখা গেছে। জরুরি বিভাগে বেশিরভাগ রোগী নানা দুর্ঘটনার।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঈদের সময় চিকিৎসকদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদের সময় আলাদা শিডিউল করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। অন্যান্যবারের মতো এবারও আলাদা সূচি তৈরি করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
ঈদের কারণে বন্ধ ছিল রাজধানীর নামিদামি ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলো। মেডিনোভা, পদ্মা, পপুলার, ইবনে সিনা, ইসলামিয়া হাসপাতালের মতো ল্যাবগুলোতে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো ধরনের সেবা দিতে দেখা যায়নি। তবে ল্যাবএইড, স্কয়ার ও পপুলারের মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলো খোলা ছিল। এসব হাসপাতালে ঈদের জন্য আলাদা শিডিউল করে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবছরই ঈদের ছুটির ফাঁদে পড়ে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা। ঈদের ছুটিতে বন্ধ থাকে বিশেষায়িত হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ, প্যাথলোজি ও রেডিওলোজিসহ অন্যান্য সেবা। চিকিৎসকদের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্স, টেকনোলজিস্ট এমনকি অফিস সহকারী ক্লিনারও থাকেন ছুটিতে। এতে করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এক ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়। তবে ঈদের সময় রোগীদের সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস