Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চামড়ার মৌসুমি ক্রেতা নেই, মসজিদ-মাদরাসায় দান করে নিস্তার!

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুন ২০২৩ ২১:০৮

ঢাকা: কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে এক সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিযোগিতা চলত। এই প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কোনো কোনো এলাকায় চামড়া কিনতে অধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা মিলছে না। ফলে অধিকাংশ রাজধানীবাসী ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় কোরবানির চামড়া বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় ধান করে দিয়েছেন। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকার মাদ্রাসার ছাত্ররা ভ্যানে করে বিনামূল্যে দেয়া কোবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) রাজধানীর মতিঝিল, মগবাজার, পুরনা পল্টন, মিরপুর ও মোহামম্মদপুর, শ্যামলী এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সূত্র জানায়, টানা কয়েক বছর চামড়া কিনে বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়ায় এখন আর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে দেখা যায় না। ফলে আগের কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও রাজধানীর কোথায়ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের আনাগোনা নেই। কোরবানির ঈদের দিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ও খবর নিয়ে মৌসুমি চামড়া ব্যাবসায়ীর তেমন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ফলে কোরবানি করা পশুর চামড়া সবাই নিকটবর্তী মসজিদ মাদরাসায় বিনামূল্যে দান করছেন। চামড়া বিনামূল্যে দিয়েও স্বস্তি পাচ্ছেন। তাদের অভিমত চামড়ার কোনো ক্রেতা নেই, তাই মসজিদ মাদরাসায় দান না করলে এই চামড়া পচে নষ্ট হয়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত হবে।

এ ব্যাপারে মতিঝিল এজিবি কলোনীর বাসিন্দা মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে এক বাউন্ডারির ভেতর ৬টি ভবনে ৪০০ বেশি পরিবার বসবাস করে। বরাবরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে কেউ আসেনি। আমরা আশার প্রত্যাশাও করিনি। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার গরু স্থানীয় গোলাপশাহ মাজার সংলগ্ন মসজিদে দান করে দিয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্ররা এসে চামড়া নিয়ে গেছেন।’

বিজ্ঞাপন

একই কথা বলেন কমলাপুরের বাসিন্দা মো. আবদুল আহাদ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন আর কেউ চামড়া কিনতে আসে না। সবাই চামড়া নিকটবর্তী মসজিদ মাদরাসায় দান করে দিচ্ছেন। এটি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এমন একসময় ছিল যখন কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য মহল্লায় মহল্লায় তরুণদের মধ্যে রীতিমতো মারামারি হতো। কে কোন এলাকার নিয়ন্ত্রণ করে চামড়া কিনবে তা নিয়ে টেন্ডারবাজির মতো বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যেত। তখন চামড়ার দামও ছিল প্রচুর। প্রতিটি গরুর চামড়া আড়াই থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হতো। একই অভিযোগ এজিবি কলোনীর আহম্মদ আলী, কাউসার আহমেদ।

অন্যদিকে মিরপুর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাত সারাবাংলাকে বলেন, ‘চামড়া বিক্রি করা হয় না। স্থানীয় মাদরাসায় দিয়ে দিই। মজার বিষয় শুনেছি কেউ একজন নাকি চামড়া কিনতে এসেছিল, দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়া ৪০০ টাকা বলেছে। বিক্রি করা হয়নি, কারণ তা মসজিদে দান করা হবে।’

এদিকে মিরপুর এলাকায় নিয়মিত চামড়া কিনতেন এমন একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী শামীম ভুইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত দেড় দশক ধরে চামড়ার ব্যবসা মন্দা। এখন আর কেউ চামড়া কিনে লোকসানের ঝুঁকি নিতে চাই না। কারণ চামড়া কিনে এখন আর লাভ করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে চামড়ার পরিবর্তে অন্যখাতে বিনিযোগ করা লাভজনক।’

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে রাস্তার মোড়ে এনে বিক্রি করার জন্য জমা করেছেন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কাঁচা চামড়া নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় কাঁচা চামড়ায় লবণ লাগিয়ে সংরক্ষণ হচ্ছে। পরে সেখান থেকে নিয়ে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হবে।

এদিকে মগবাজার এলাকার বাসিন্দা সালাম ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর চামড়াজাত পণ্যের দাম বাড়লেও কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। সরকারও সব সময় ব্যবসায়ীদের কথা শুনেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করছে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)’র চেয়ারম্যান, মো. শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সাধারণত কোরবানির ঈদের দিন কাঁচা চামড়া কিনি না। ঈদের কয়েক দিন পর আমরা লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ শুরু করি। তবে এই সময় বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসা থেকে কিছু কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হবে।’

উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন চামড়ার নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দাম অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। গত বছর এই দাম ছিল ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। আর ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।

সারাবাংলা/জিএস/একে

ঈদুল আজহা কোরবানি চামড়া বিক্রি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর