Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে কোরবানি কম, চামড়া কেনাবেচা সুশৃঙ্খল

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুন ২০২৩ ২২:২০

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে সুশৃঙ্খল পরিবেশে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনাবেচা চলছে। গতবছরের মতো এবারও মৌসুমি সংগ্রহকারী-আড়তদার এবং তাদের প্রতিনিধি সিন্ডিকেটকে হটিয়ে দিয়েছে আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অঙ্গ সংগঠন গাউছিয়া কমিটি। তাদের তত্ত্বাবধানে কয়েক হাজার মাদরাসার ছাত্র ট্রাক নিয়ে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি ও গ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে বিনামূল্যেই চামড়া পেয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এর ফলে চামড়া সংগ্রহ ও কেনাবেচার ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও কাঁচা চামড়ার আড়তদারেরা বলেছেন, এবার কোরবানির পরিমাণ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) দুপুর থেকে নগরীর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের স্থানগুলোতে ঘুরে এবারও চিরচেনা দৃশ্যের দেখা মেলেনি। অলিগলির মুখে কিংবা সড়কে কাঁচা চামড়া নিয়ে তরুণ-যুবকদের জটলা ছিল না। নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ঈদগাহ বৌবাজারসহ যেসব স্পটে কাঁচা চামড়া এনে জড়ো করা হয়, সেখানে গতবছরের মতো এবারও তেমন ভিড়-হাঁকডাক দেখা যায়নি।

চট্টগ্রামে কোরবানির কাঁচা চামড়ার বাজার প্রতিবছর ‘চার হাত চক্রে’ নিয়ন্ত্রণ হতো। কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করতেন এলাকার উঠকি তরুণ-যুবকরা, যাদের মৌসুমি সংগ্রহকারী বলা হয়। তারা কয়েকজন মিলে ৫-৬টি করে চামড়া সংগ্রহ করতেন। তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে নিতেন বড়-মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা, যারা শুধু কোরবানির সময়ই চামড়া কিনতে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন এবং সেই চামড়া বিক্রি করেন আড়তদারের কাছে। সেই ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া বিক্রি করতেন আড়তদারের প্রতিনিধির কাছে। প্রতিনিধির কাছ থেকে চামড়া যেত আড়তদারের ডিপোতে।

তবে সেই ‘চার হাত চক্র’ ২০২০ সাল থেকে ভেঙে যায়। ২০১৯ সালে আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিরা ‘অস্বাভাবিক দরপতন’ ঘটিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনা বন্ধ রেখেছিলেন। এতে কাঁচা চামড়া সড়কে ফেলে দিয়ে তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল। ২০২০ সালে মৌসুমি সংগ্রহকারীর সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে নেমে আসে। কাঁচা চামড়ার বাজারের ওপর প্রায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিরা। ২০২০ সালেও মৌসুমি সংগ্রহকারীদের একই কৌশলে চামড়া ফেলে যেতে বাধ্য করা হয়।

বিজ্ঞাপন

২০২১ সাল থেকে কাঁচা চামড়ার বাজারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে। কিন্তু ২০২২ সালে এসে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও কেনাবেচার নিয়ন্ত্রণ নেয় সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী সংগঠন ‘গাউছিয়া কমিটি’, যা অব্যাহত আছে এবারও। চামড়া সংগ্রহে শৃঙ্খলা ফিরে আসায় আড়তদার এবং সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

কোরবানির পর বৃহস্পতিবার দুপুরে চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, হাতেগোণা তিন-চারজন চামড়া সংগ্রহকারী নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে রিকশা-ভ্যানে আসা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন। বিকেল ৪টার পর্যন্ত সেখানে মাত্র ৭টি চামড়ার স্তূপ দেখা গেছে। সব মিলিয়ে হাজারখানেকের কিছু বেশি চামড়া ছিল।

চামড়া সংগ্রহকারী মো. নাছের জানান, এক থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরু অর্থাৎ ছোট গরুর চামড়া তারা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় কিনেছেন। আর তিন লাখ টাকা বা এর বেশি দামের গরুর চামড়া তারা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনেছেন। ছাগলের চামড়ার কোনো দামই নেই।

নাছের সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার কোরবানি কম হয়েছে। চামড়া খুব কম আসছে। গরু, ছাগলের দাম বেশি ছিল। মানুষের পকেটে টাকা নেই। কোরবানি দিতে পারেনি। এবার গাউছিয়া কমিটিও চামড়া নিয়ে গেছে। তারপরও শহরের বিভিন্ন পাড়া থেকে ছেলেপেলেরা অল্প কিছু চামড়া এনেছে।’

এর মধ্যেও চৌমুহনী এলাকায় চামড়ার বড় ক্রেতা চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সহ সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন বিকেল ৪টার মধ্যে প্রায় এক হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছেন। বিকেলেই সেগুলো তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুব আলমের কাছে।

মোহাম্মদ ইয়াসিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবছর ১১০০ চামড়া কিনেছিলাম। এবার এক হাজার কিনেছি। আর চামড়া তেমন নেই। গাউছিয়া কমিটি নিয়ে গেছে। আগে একটা চামড়া বিক্রি করলে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকতো। এখন ১০০-১৫০ টাকা লাভ তুলতে কষ্ট হয়। কোরবানি কম, চামড়া কম, কাস্টমারও কম।’

আড়তদার মাহবুব আলম জানালেন, তিনি ৪ থেকে ৫ হাজার কাঁচা চামড়া সংগ্রহের টার্গেট নিয়েছিলেন। চৌমুহনী থেকে দুই হাজারের মতো সংগ্রহ করেছেন প্রতিটি গড়ে ৫৫০ টাকা দরে। তবে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না সেটা নিয়ে সন্দিহান এই আড়তদার।

‘মানুষের আয় কমে গেছে। কোরবানি তেমন হয়নি। আমাদের হিসেবে গতবছরের চেয়ে অন্তঃত ৩০ শতাংশ কোরবানি কম হয়েছে। একটি চামড়া লবণ দিয়ে আড়তে রেখে বিক্রি করা পর্যন্ত খরচ পড়ে ৮০০ টাকার ওপরে। ৪-৫ হাজার চামড়া কিনতে না পারলে আড়ত আর কামলার খরচ মিলিয়ে পোষাবে না। লোকসান হয়ে যাবে’- বলেন মাহবুব আলম।

চট্টগ্রামে ছোট-বড় ২২৫টি আড়তে চামড়া সংরক্ষণ হয়। আড়তদার আছেন ৩৭ জন। অধিকাংশ আড়ত নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায়। কোরবানির দিন চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর থেকে আসা কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বেশি সমাহার ঘটে এই আতুরার ডিপো এলাকায়। ডিপোর বাইরে সড়কে লাখো চামড়ার হাতবদল হয়। হাজার-হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন জানিয়েছেন, এবার তারা সাড়ে তিন লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের টার্গেট নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আড়তে গেছে প্রায় ৪০ হাজার চামড়া। এর বাইরে গাউছিয়া কমিটি আলাদাভাবে চামড়া সংগ্রহ করছে।

মুসলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চামড়া সংগ্রহের পরিমাণ অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক কম। কোরবানি কম হয়েছে। আবার গাউছিয়া কমিটি বিভিন্ন মাদরাসার মাধ্যমে অনেক চামড়া সংগ্রহ করে ফেলেছে। সেজন্য আড়তে চামড়া কম আসছে। আমরা বলেছিলাম- গ্রামগঞ্জের চামড়া কোরবানির দিন নেব না। সেজন্য গ্রাম থেকে সেভাবে চামড়া আসেনি। সেখানেও মাদরাসার লোকজন গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছে।’’

‘গাউছিয়া কমিটির কারণে এবার ফড়িয়ারা সুবিধা করতে পারেনি। বাজারে বিশৃঙ্খলা নেই। সরকার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার চেয়ে কম দামে আমরা চামড়া কিনতে পারছি। সেটা আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে।’

সরকারিভাবে নির্ধারিত দর অনুযায়ী ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ হয়েছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া গত বছরের মতই প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গাউছিয়া কমিটি চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ থানা, ৪৯ সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং ৫৩৭টি ইউনিট কমিটির মাধ্যমে প্রায় পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, যাদের অধিকাংশই মাদরাসার ছাত্র, তাদের মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহ করেছে। প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে এক বা একাধিক চামড়া সংগ্রহের বুথ স্থাপন করা হয়। ১০০টি ছোট-বড় ট্রাকের মাধ্যমে নগরীর অলিগলি ও বাসাবাড়িতে গিয়ে কর্মীরা সংগ্রহ করেন কোরবানির চামড়া।

সংগ্রহ করা চামড়া জমা করে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে নগরীর বিবিরহাট এলাকায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার বিশাল মাঠে। সেখানে নগরীর ১৪ থানা এলাকা থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়া রাখা হচ্ছে। বাকি দুই থানা পতেঙ্গা ও হালিশহর থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়া রাখা হচ্ছে হালিশহরে একটি সুন্নিয়া মাদরাসার মাঠে। সেখানেও আলাদাভাবে লবণ দিয়ে চামড়াগুলো প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। এবারও হাজী মোহাম্মদ আলী নামে একজন আড়তদারের তত্ত্বাবধানে চামড়া প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম চলছে।

অন্যদিকে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে আলাদাভাবে ৫০টি করে ১০০টি ট্রাকের মাধ্যমে গাউছিয়া কমিটি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছে। উত্তরের সংগ্রহ করা চামড়া রাউজানে এবং দক্ষিণেরগুলো চন্দনাইশে নির্ধারিত স্থানে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর গাউছিয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এক লাখ ৩০ হাজার কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। গতবছরও আমরা এক লাখের কাছাকাছি সংগ্রহ করেছিলাম। এবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার চামড়া এসেছে। আশা করছি লাখের বেশি চামড়া এবার সংগ্রহ করতে পারব। আমরা এবার বেশি জোর দিচ্ছি, একটি চামড়াও যেন নষ্ট না হয়। আমাদের হটলাইন চালু করা হয়েছে। একটি চামড়া কোথাও পড়ে থাকার খবর পেলে সেখানেও আমরা ট্রাক পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

আবদুল্লাহও জানালেন, এবার নগরীতে কোরবানি কম হয়েছে বলে তাদের মাঠ পর্যায়ের চামড়া সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন। কারণ, গতবছর নির্দিষ্ট এলাকা থেকে যে পরিমাণ চামড়া পাওয়া গিয়েছিল, এবার সে পরিমাণ সংগ্রহ হয়নি।

তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলীর মতে, এবার নগরীতে কোরবানি গতবছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। গরু-ছাগল মিলিয়ে এক লাখ ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোরবানি হয়েছে বলে বর্জ্য সংগ্রহের অভিজ্ঞতায় তার ধারণা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে গতবছর আট লাখ ১৩ হাজার ৫০টি পশু কোরবানি করা হয়েছিল। আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে সাত লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি পশু কোরবানি হয়েছিল।

এবছর প্রাণিসম্পদ কার্যালয় চট্টগ্রামে প্রথমে আট লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি পশু কোরবানি হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে গরু পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫, মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩, ছাগল ও ভেড়া দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি।

কিন্তু পরবর্তীতে সেটি কমিয়ে আট লাখ ৭৪ হাজারে নামিয়ে আনে। তবে কোরবানি সাড়ে সাত লাখের বেশি হয়নি বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের।

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা যেসব তথ্য পাচ্ছি, তাতে আমাদের ধারণা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম কোরবানি হয়েছে। তবে আমরা চূড়ান্ত হিসাব দিতে পারব আরও দু’য়েকদিন পর।’

আতুরার ডিপোর আড়তে শুক্রবারও কাঁচা চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কাজ চলবে। একমাস পরে ট্যানারি থেকে প্রতিনিধিরা এসে প্রক্রিয়াজাত করা শুকনো চামড়া যাচাই করবেন। এরপর সেই চামড়া বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আড়তদারেরা।

সারাবাংলা/আরডি/একে

কোরবানির পশু চট্টগ্রাম চামড়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর