ঝড়-বৃষ্টিতে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী অর্ধেকে নেমেছে
৩০ জুন ২০২৩ ২০:০৯
ঢাকা: ঈদের দিন থেকে পরের ২/৩ দিন রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবার চিত্র সম্পৃন্ন ভিন্ন। মৌসুমি ঝড়-বৃষ্টির প্রভাবে রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অন্য যে কোনো ঈদের সময়ের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। দুপুরের পর রাজধানীতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা নতুন করে দর্শনার্থী প্রবেশ একেবারেই কমে যায়।
বিকেলে বৃষ্টি শুরুর আগে যে সব দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেছিল বৃষ্টি নামার ফলে তাদের অনেকেই ভিজে বিপাকে পড়েন। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির তেমন না থাকায় মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা ৬০ থেকে ৭০ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ। তবে দর্শনার্থীর এই সংখ্যা অন্য যে কোনো ঈদের স্বাভাবিক আবহাওয়া থাকাকালীন সময়ের তুলনায় অনেক কম।
এ ব্যাপারে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার শুক্রবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদের দিন, ঈদের পরের ২/৩ দিন জাতীয় চিড়িয়াখানায় গড়ে এক থেকে দেড় লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করলেও এবার ঈদুল আজহায় তা কমেছে অর্ধেকে নেমেছে। ঈদের পরদিন আজ আমরা দেড় লাখের মতো দর্শনার্থী আসবে এমন আশা করলেও এই সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ হাজারে নেমে গেছে বলে ধারণা করছি।’
তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানা যে সব দর্শনার্থী বৃষ্টিতে এবং বৃষ্টির আগে প্রবেশ করেছে তাদের যাতে দুর্ভোগ কমানো যায় সে জন্য আমরা যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। চিড়িয়াখানা শেডগুলোতে প্রতিকূল আবহাওয়ায় দর্শনার্থীরা যেন নিরাপদে অবস্থান করতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমরা সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। চিড়িয়াখানার ভেতরে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র্যাব কাজ করছে। এছাড়াও আনসার এবং আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী কাজ করছে। পাশাপাশি দর্শনার্থীরা যেন পশু-পাখিকে বিরক্ত করতে না পারে সে জন্য আমাদের কর্মীরা খেয়াল রাখছে।’
তিনি জানান, বরাবরের মতো এবার দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানা প্রবেশ করে বাঘ, সিংহ, জিরাফ, হাতি, জেব্রা‘র খাঁচাগুলোতে বেশি ভিড় করছে। এছাড়াও জেব্রার বাচ্চাগুলো এবার বেশ বড় হয়েছে, দর্শনার্থীরা বেশ মজা পাচ্ছে।
রাজধানীর খিলগাঁও থেকে স্বপরিবারে চিড়িয়াখানায় আসা মো. কামরুল ইসলাম সরাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স ৮ বছর, তাকে পশুপাখির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চিড়িয়াখানায় এসেছি। ছেলে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় হয়ে বেশ আনন্দ পাচ্ছে। তবে বৃষ্টি নেমে যাওয়ায় কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে চিড়িয়াখানায় আসা শারমিন আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছি, বাচ্চারা বেশ মজা পাচ্ছে। তবে ভিড় কম থাকায় খাচার কাছাকাছি স্থানে গিয়ে প্রাণীগুলোকে দেখাতে পারছি। অন্য সময়ে ঈদের সময়ে আসলে প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে খাঁচার কাছাকাছি যাওয়া যায় না।’
অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ ভালো, আগের মতো হকারদের উৎপাত নেই। তবে বৃষ্টি পেতে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শেড নেই। এই সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত।’
এদিকে শুক্রবার ঈদের পরদিন জাতীয় চিড়িয়াখানা সকাল থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত প্রায় ৫০ দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে। দুপুরের পর আরও ৫০ থেকে ৭০ হাজারের মতো দর্শনার্থী প্রবেশ করা কথা থাকলেও তা হয়নি। দুপরের পর হাজার দশেক দর্শনার্থী মিরপুর চিড়িযাখানায় প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার পরিচালক। ফলে ঈদের পরদিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন। অথচ গত রোজার ঈদের পরের দুই গড়ে দেড় তেকে দুই লাখ দর্শনার্থী জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেছিল।
এদিকে মিরপুর চিড়িয়ানার প্রতিটি পশু পাখির খাঁচার সামনে দাড়িয়ে পছন্দের পশু পাখিকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হযেছে দর্শনার্থীদের। তবে বাঘ, সিংহ, জলহস্তি, বানর, ক্যাঙ্গারু, জিরাফ, জেব্রা, হাতি, ময়ুরের খাচাঁয় দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও জলহস্তি আর জেব্রার ঘরে জন্ম নেওয়া নতুন দুই অতিথি ছাড়াও বছরজুড়ে চিড়িয়াখানা জন্ম হওয়া অসংখ্যা হরিণ শাবক দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দিয়েছে। এছাড়াও চিড়িয়াখানা সম্প্রতি আনা পেলিকেন্ট, লামা, ক্যাঙ্গারু ও আফ্রিকান সিংহের ছোটাছুটি দর্শনার্থীদের বাড়তি মনের খোরাক জুগিয়েছে। পাশাপাশি চিড়িয়াখানার পার্কে শিশুদের ট্রেনে ভ্রমণ, বিভিন্ন দুলনায় চড়তে পেরে শিশুরা বেশ বাড়তি আনন্দ পাচ্ছে।
উল্লেখ্য দর্শনার্থীর বিনোদন, দুর্লভ ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী সংগ্রহ ও প্রজনন, শিক্ষা-গবেষণা, প্রাণিবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও এ বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য ১৯৬১ সালে রাজধানীর মিরপুর ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ১৩৩টি প্রজাতীর প্রাণীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৮টি।
সারাবাংলা/জিএস/একে