হবিগঞ্জ জলাবদ্ধতার শহর হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে
১ জুলাই ২০২৩ ২০:১০
ঢাকা: নদ-নদী, হাওর, জাতীয় উদ্যান, বনভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশের অন্যতম সুন্দর অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে জলাবদ্ধতার শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে হবিগঞ্জ জেলা। সামান্য বৃষ্টিতেই শহরে দেখা দেয় কৃত্রিম বন্যা। শহরের উঁচু নিচু এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে অহরহ। রাস্তাঘাট ঘরবাড়িতে ঢুকছে বৃষ্টির পানি। বৃষ্টির পানির প্রধান আঁধার পুরাতন খোয়াই নদী, পুকুর–জলাশয়, খাল দখল-ভরাট হবার কারণে হবিগঞ্জ জলাবদ্ধতার শহরে পরিচিত লাভ করেছে। প্রায় দুই দশক ধরে কিছু অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের জন্য পরিবেশগত সংকট চরম আকার ধারণ করছে।
শনিবার (১ জুলাই) ‘হবিগঞ্জের পরিবেশ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। শহরের আমির চান কমপ্লেক্স-এর কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখা ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার পরিবেশ বিষয়ক এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ‘শিল্পায়নের নামে কলকারখানাগুলো মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে আসছে। যত্রতত্র কৃষিজমি, খাল, ছড়া এবং নদীসহ সব প্রকার জীবন ও জীবিকা কলকারখানার দূষণের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নদী, পুকুর, জলাশয়গুলো বছরের পর বছর ধরে দখল, দূষণ, পলি ও আবর্জনা পতিত হয়ে অনেকাংশে বুজে এসেছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েক বছর ধরে হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশে জলাবদ্ধতা তীব্র আকার ধারণ করছে।’
বাপা হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ হবিগঞ্জ সমিতির সভাপতি দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার। মূল আলোচক ছিলেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক ও বাপা’ র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। আলোচনার শুরুতে ধারণা বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক কামরুল হাসান হবিগঞ্জের পরিবেশ সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি হবিগঞ্জের পরিবেশ বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ঢাকাস্থ হবিগঞ্জ সমিতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন বলে জানান। এছাড়াও শহরের যানজট ও শব্দদূষণ সমস্যার কথা উল্লেখ করে পরিবেশের সংকট সমূহ সমাধানে সরকারি উচ্চ পর্যায়েও আলোচনা উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করেন।
শরীফ জামিল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকে হবিগঞ্জ পৌরসভার জন্য প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রকে গুরুত্ব দিয়ে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছি। হবিগঞ্জের জলাবদ্ধতা ও পানিসংকট নিরসনে শুধুমাত্র পুকুর সংরক্ষণই না, অবিলম্বে পুরনো খোয়াই নদী পুনরুদ্ধার জরুরি।’
আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক শেখ ফজলে এলাহি, সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহান আর খাতুন, বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াছ বখত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সাখাওয়াত হোসেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজি ও পাবলিক হেলথ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ, বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, তাহমিনা বেগম গিনি, সাবেক জনপ্রতিনি মো. হাবিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট বিজন বিহারি দাস, ব্যাংক কর্মকর্তা মো. নোমান মিয়া, চলচ্চিত্র পরিচালক মুক্তাদির ইবনে সালাম, মো. আব্দুল কাইয়ুম, অ্যাডভোকেট শায়লা খান, এম এ ওয়াহেদ, মো. বাহার উদ্দিন, তৌহিদুর রহমান রানা, ওসমান গনি রুমি, মো. আবিদুর রহমান, মো. আমিনুল ইসলাম।
সারাবাংলা/আরএফ/একে