Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বরদাস্ত করবো না: শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ জুলাই ২০২৩ ১৮:০৬

ঢাকা: বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বরদাস্ত করবো না।

রোববার (২ জুলাই) সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তিনি এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্র নীতি খুব ভালো- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিই মেনে চলি। কিন্তু আমাদের উন্নয়নে বা আমাদের অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক, সেটা আমরা চাই না, সেটা আমরা বরদাস্ত করবো না।’

বিরোধীদের বিদেশিদের কাছে অভিযোগ করার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের নিজের মাটিতে খুঁটায় জোর থাকে না, নিজের দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস যাদের থাকে না। দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। ঐ তারাই যেয়ে ওখানে…আর নালিশ। আর ওই সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা কথা, গুজব ছড়ানো ওই তারা করে বেড়ায়।’

তিনি বলেন, ‘কিছু লোক আছে, কথায় কথায় নালিশ করে, তো নালিশ করে কি হয়, ওই যে কথায় আছে না নালিশ করে বালিশ পাবে। ওরা কিন্তু ওটাই পাওয়ার যোগ্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের মাটি ও মানুষের সংগঠন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন দিয়ে তিনি দেশকে স্বাধীন করেছেন। এই সংগঠন দিয়ে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন।’

বিএনপি-জামায়াত যাতে আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা যদি আবার ক্ষমতায় আসে, আবার এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, দেশের সর্বনাশ করে দিবে।’

বিজ্ঞাপন

‘কাজেই সেটা যেন তারা করতে না পারে সে জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা চাই আমাদের দেশে এগিয়ে যাক।’

বিএনপির কাছে ক্ষমতা মানে ‘অর্থ বানানোর মেশিন’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের কাছে রাজনীতি বলে কিছু নেই, ক্ষমতা হচ্ছে তাদের অর্থ বানানোর মেশিন, ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা।’

বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি জামায়াতের যে সন্ত্রাসী রূপ, এটাতে এদেশের মানুষ দেখেছে। তারা দেশের কোনো উন্নতি না, নিজের অর্থ-সম্পদ গড়েছে, বিদেশে পাচার করেছে, খালেদা জিয়ার ছেলেদের পাচার করা ৪০ কোটি টাকা আমরা ফেরতও এনেছি।’

‘ওই অর্থ পাচার, সন্ত্রাস, দূর্নীতি, মানুষকে গুম করা, ভোট চুরির জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করা, এই সমস্ত অপকর্ম তারা করে গেছে।’

বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কানাডার ফেডারেল কোর্ট এই কথাই বলেছিল যে বিএনপি একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের কোন অধিকার নেই বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে কথা বলার।’

বিএনপির হাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতিত হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ এ ক্ষমতায় এসে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান, কেউই বাদ যায়নি তাদের অত্যাচার নির্যাতনের থেকে, মানুষকে গুলি করে মারা, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মারা, চোখ তুলে নেওয়া, হাত কেটে নেওয়া, এমন কোনো সন্ত্রাসী কাজ নাই বিএনপি না করেছে।’

বিএনপি-জামায়াত সরকার আমল এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড এবং সন্ত্রাসে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতে আওয়ামী আইনজীবীদের কাজ করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অগ্নি সন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে মারা, পুলিশ মারা, বিভিন্ন সময় আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা, বহু আসামি এখন ঘুরে বেড়ায়। এরা যেন ঘুরে বেড়াতে না পারে। এদের যেন যথাযথ শাস্তি হয়। এদের যেন বিচার হয়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিউজিটিভ (পলাতক) হয়ে লন্ডনে বসে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় বড় কথা বলে। চোরের বড় গলা কথায় আছে, সেই চোরের বড় গলাই আমরা শুনি। এত সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসে না কেন? তা তো আসতে পারে না। সাহস তো দেখাতে পারে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের হত্যার চেষ্টা, আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী হত্যা করেছে, মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি এমন কোনো অপকর্ম নাই যে না করে গেছে। আজকে সাজাপ্রাপ্ত, পলাতক।’

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার দোয়া-আর্শিবাদ চাই আমার বাবার স্বপ্ন যেন পূরণ করতে চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’

উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমার বাবা যে কাজটা শুরু করেছিলেন সেটা সম্পন্ন করা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমিও আমার বাবার মতো জীবনটা উৎসর্গ করেছি এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে।’

তিনি বলেন, ‘সেই কষ্ট-ব্যাথা বুকে নিয়েই আমার প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর কখনও কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এ দেশ হবে ক্ষুধা মুক্ত-দারিদ্র মুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ একটি জাতি।’

মতবিনিময়ের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিরা টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় শেখ হাসিনা বয়সের কথা তুলে ধরে অবসরে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় নেতাকর্মীরা তাকে দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে দায়িত্বপালন করে যাওয়ার অনুরোধ করেন।

স্থানীয়রা বলেন, তারা শেখ হাসিনাকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান এবং আগামীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

মতবিনিময় সভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ।

এর আগে, গোপালগঞ্জে দুই দিনের সফরের অংশ হিসেবে শনিবার (১ জুলাই) সকালে গণভবন থেকে সড়ক পথে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া যান। সেখানে তিনি নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

কোটালীপাড়ার কর্মসূচি শেষে দুপুরের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা টুঙ্গিপাড়ার নিজের গ্রামের বাড়িতে যান এবং রাতে সেখানে অবস্থান করেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি শেষে বিকেলে গণভবনে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

সারাবাংলা/এনআর/ইআ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর