আরপিও সংশোধনী ইসিকে ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে: সুজন
৫ জুলাই ২০২৩ ২২:১৭
ঢাকা: জাতীয় সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস করার প্রতিবাদ জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুজন। সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমনিতেই নির্বাচন কমিশন সকল রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠনের কাছে আস্থা অর্জন করতে পারেনি। আরপিও-এর এই সংশোধনী নির্বাচন কমিশনকে আরও আস্থার সংকটে ফেলবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে একটি ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সকল দলের অংশগ্রহণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে কি না, তা নিয়ে আমরা যখন সংকটে নিমজ্জিত, তখন এই ধরনের একটি উদ্যোগ এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে- যা কোনো সচেতন নাগরিকের কাম্য নয়।
বুধবার (৫ জুলাই) সুজন সভাপতি এম. হাফিজ উদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সব কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনে অনিয়ম ও বল প্রয়োগের মতো ঘটনায় নির্বাচনের দিন কোনো কেন্দ্র বা আসনের ভোট বন্ধ করাসহ তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো নির্বাচনি এলাকার নির্বাচন স্থগিত ও ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, এই সংশোধনীর পর নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র ভোটের দিন কোনো অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করতে পারবে; ভোটের দিন ব্যতীত অন্য কোনো সময় নির্বাচন স্থগিত বা ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না।
সুজনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন থেকেই ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করার বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য একটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। অথচ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ৯১ (ক) ধারায় বলা ছিল, কমিশন যদি এই মর্মে সন্তষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি-প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করিতে সক্ষম হইবেন না, তাহা হইলে ইহা যে কোনো ভোট কেন্দ্র বা ক্ষেত্রমত, সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করিতে পারিবে।
৯১ (কক) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ভোটকেন্দ্র বা সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকার ফলাফল প্রকাশ স্থগিত করিতে পারিবে, যদি কমিশন নিশ্চিত হয় যে, সেই ভোট কেন্দ্র বা পুরো নির্বাচনী এলাকার ফলাফল বল প্রয়োগ, হুমকি, কারসাজি বা অন্য কোনো অসদাচরণ দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হইয়াছে এবং প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে দ্রুত তদন্ত শেষে সরকারি গেজেটে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফলাফল প্রকাশের নির্দেশনা দিবে অথবা নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রের বা পুরো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন বাতিল পূর্বক নতুন করিয়া নির্বাচন করিতে পারিবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উচ্চ আদালতের রায়েও গেজেট প্রকাশের আগপর্যন্ত নির্বাচনি ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে প্রদান করা হয়েছে। আমাদের কাছে বোধগম্য নয় যে, উল্লিখিত ধারাদুটিসহ উচ্চ আদালতের রায় থাকার পরেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কেন এই সংশোধনী প্রস্তাব দেয়া হলো। এটি কি কোনো পাতানো খেলা?
সুজনের বিৃবতিতে আরও বলা হয়েছে, গতকালের আরও একটি বিষয়ের সংশোধনীর দিকে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বিষয়টি হলো পূর্বে মনোনয়নপত্র দাখিলের ন্যূনতম সাত দিন আগে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের বিধান থাকলেও এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত তা পরিশোধের বিধান করা হয়েছে। বিষয়টি মোটেও ইতিবাচক নয়; কেননা এতে ঋণ খেলাপিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হবে।
সারাবাংলা/জিএস/একে