মশা মারতে গাফিলতি, চসিকের ৯ কর্মীকে শোকজ
৬ জুলাই ২০২৩ ২১:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে মশা নিধনে গাফিলতির জন্য নয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে সিটি করপোরেশন এ সিদ্ধান্ত নিল।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিকেলে সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম মাহী।
শরিফুল ইসলাম মাহী সারাবাংলাকে জানান, বুধবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নগরীর সব ওয়ার্ডে একযোগে মশার ওষুধ ছিটানোর কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ছয় ওয়ার্ডে সঠিকভাবে মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য এসব ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা জোন কর্মকর্তা, সুপারভাইজার, স্প্রে ম্যান ও তত্ত্বাবধায়ককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ কাট্টলী, দেওয়ানবাজার, জামালখান, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, পশ্চিম মাদারবাড়ি ও গোসাইলডাঙ্গা।
মাহী বলেন, ‘নির্দেশনা ছিল, বিকেল চারটা থেকে সাতটা পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্থানে মশার ওষুধ স্প্রে করা হবে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেখানে মশার ওষুধ ছিটাননি বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অবশ্য তারা বলছেন, স্প্রে করেছেন। কিন্তু তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের জোন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাজ নগর পরিচ্ছন্ন রাখা। সব কাজ আমাদের করতে হয়। স্প্রে আমরা করেছি। শুধু ছবি দিতে পারিনি বলে আমাকে শোকজ দেওয়া হয়েছে। নিজেদের দোষ ঢাকতে আমাদের শোকজ করা হয়েছে। তবে এখনও চিঠি হাতে পাইনি। পেলে জবাব দেব।’
গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের জোন কর্মকর্তা কল্লোল দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা স্প্রে মেরেছি। শুধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে ছবি দিতে পারিনি। শোকজের ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট কিছু জানি না। শোকজ নোটিশ পেলে জবাবে যা সত্য তাই বলব। লুকোচুরি করার কোনো বিষয় নেই।’
মশক নিধনে গত মাসে (জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে নগরীতে দুই দফা ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করে চসিক। প্রতিদিন ৪২ থেকে ৫০ জন স্প্রে–ম্যান ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন বলে দাবি চসিক কর্মকর্তাদের।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাতে নগরীর সদরঘাট পোস্টঅফিস গলির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সরকারের মেয়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ১১ বছর বয়সী শ্রাবণী সরকার মারা যান। সেন্ট স্কলাস্টিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্রীর মৃত্যু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। গণমাধ্যমেও বিশ্বজিৎ সরকারের করুণ আর্তি উঠে আসে। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ সিটি করপোরেশন।
বৃহস্পতিবার জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এ সময়ের মধ্যে কারও মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ৬৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
২০২২ সালে রেকর্ড পরিমাণ ৪ হাজার ৪৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল, মারা যায় ৪১ জন। ২০২১ সালে চট্টগ্রামে ২৭১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল, মারা যায় পাঁচ জন।
ভবনে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা
নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের নিচে ও ফুলের টবে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় আট ভবন মালিককে ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে চসিক।
বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) সকালে নগরীর খুলশী থানার উত্তর খুলশী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানা করা হয়। চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন এ অভিযান পরিচালনা করেন।
এদিকে, নগরীর বক্সিরহাট ওয়ার্ডের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন খাল, নালা, সড়ক পরিদর্শন করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েও অনেকেই ওষুধের দোকান থেকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই সাধারণ জ্বরের ওষুধ গ্রহণ করছেন। একদম শেষ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। জনগণের প্রতি আহ্বান, ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হোন। দ্রুত সুচিকিৎসা গ্রহণে ডেঙ্গু ভালো হয়।’
মেয়র আরও বলেন, ‘মশা নিধনে চসিকের ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান আছে। তবে মশার উপদ্রব কমাতে জনগণকেও ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে ঘর ও ছাদে জমে থাকা পানিতে বিপুল মশা জন্ম নিচ্ছে। এক্ষেত্রে জনগণকে স্ব-উদ্যোগে নিজ নিজ বাসভবনে জমে থাকা পানি সরাতে হবে। তবেই ক্রাশ প্রোগ্রামের প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে।’
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম