দিনে ভোট ডাকাতির জন্য আরপিও সংশোধন করেছে সরকার: গণতন্ত্র মঞ্চ
৮ জুলাই ২০২৩ ১৪:২৫
ঢাকা: এবার রাতে নয়, দিনে ‘ভোট ডাকাতি’ করার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিল সংসদে পাস করেছে সরকার। এই সংশোধনী কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শনিবার (৮ জুলাই) রাজধানীর মেহেরবা প্লাজায় রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলা হয়। এসময় অনতিবিলম্বে আরপিও সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাববলুসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গত ৪ জুলাই সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর সংশোধনী বিলটি পাশ করে ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে আনা হয়েছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ছিল বাস্তবে তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আরপিওর ১১(ক) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে তারা আইনানুগভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না তাহলে নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ রাখতে পারে। অর্থাৎ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল না হলে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের আগেই নির্বাচন বন্ধ করতে পারত। এখন এই ক্ষমতা সীমিত করে কেবল ভোটের দিন সংসদীয় আসনের কতিপয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখতে পারবে। পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বন্ধ রাখতে পারবে না। সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচনের পরিবর্তে ভোটগ্রহণ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের আসল ক্ষমতা ছিল আরপিওর ১১ (ক) ধারা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর সংশোধনী বিল পাশ করে এখন নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হয়েছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরও সংকুচিত করা হলো।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘এমনিতেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নানা দিক থেকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। গোটা নির্বাচনি ব্যবস্থাই যেখানে ভেঙে দেওয়া হয়েছে, সেখানে নির্বাচন কমিশনের অবশিষ্ট ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার এই তৎপরতা নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারি দলের স্বেচ্ছাচারিতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও সরকারি দলের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতেই যে এই সংশোধনী আনা হয়েছে তাও পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের হাত পা বেঁধে ফেলা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এই সরকারকে পাগলেও বিশ্বাস করে না। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভোট ডাকাতির জন্য আরপিও সংশোধন করা হয়েছে।’
মাহামুদর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে ইতোমধ্যে গণআন্দোলন শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক চাপ। এই সরকারকে অচিরেই পদত্যাগ করতে হবে। আগামী ১০ জুলাই সরকার পতনের জন্য এক দফা যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা হবে। আমারা বিজয়ের দিকে যাচ্ছি।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রতিদিন মিথ্যা কথা, অসত্য তথ্য ও ভাঁওতাবাজির আশ্রয় নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।’
তিনি সংবিধানের কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে বলেন, ‘আরপিও অধ্যাদেশটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সরকারের উদ্দেশ্য বা নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য আরপিও সংশোধনী করা হয়েছে।’
শেখ রফিসকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘সংসদে তারা ছাড়া আর কেউ নেই। এমন ষড়যন্ত্র করছে কাউকে ১০টি আসন কাউকে ২০টি আসন দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়াবে। এক্ষেত্রে যারা সরকারের টোপে পরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা ৭১ সালের রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত হবে দেশবাসীর কাছে।’
গত সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় আন্দোলনে জনগণকে রাজপথে নামাতে পারেননি- আগামী ৪ মাসে কী করে জনগণকে আন্দোলনে শরিক করবে—এমন এক প্রশ্নের জবাবে আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘সন্তান পয়দা করতে সময় লাগে। ইতোমধ্যে তাওয়া গরম হয়েছে। বিএনপি কর্মসূচি দিলে জনগণ মাঠে নামবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আইই