আশা দেখাচ্ছে জুয়েলারি শিল্প, চাঙ্গা হচ্ছে অর্থনীতি
২৬ জুন ২০২৩ ১৬:১৭
ঢাকা: বছরের পর বছর দেশে সোনা নীতিমালা তৈরির কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেরকম নীতিমালা হয়নি। সংকটে পড়ে জুয়েলারি শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অনেকে পথে বসলেও নতুন করে সাজানো এ শিল্পের ছোঁয়ায় অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে জুয়েলারি শিল্পের বদান্যতায় বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা অনন্য নজির স্থাপন করবে। ঘুরে দাঁড়াবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা ও কারিগররা।
এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, স্বর্ণের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন স্বর্ণ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি স্বর্ণ কিনলেও তা খুব বেশি নয় শুধু অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক অলঙ্কার বানানোর চিন্তা করছেন। একইসঙ্গে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ করে অন্যকিছু করছেন।
আবার যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগর, তাদের অনেকে পেশা বদল করে সেখানে ভালো না করায় নিদারুণ জীবনযাপন করছেন। অনেকে পুনরায় জুয়েলারি শিল্পে ফিরছেন।
রাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে জুয়েলারি ব্যবসা করে আসছেন সুমন গাজী। তার বাপ চাচারাও এই ব্যবসায় জড়িত। তার দোকানের নাম শিল্পী জুয়েলার্স।
সুমন গাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০২০ সালে প্রথম ধাক্কা আসে এই শিল্পে। করোনার কারণে অন্তত ২০২২ সাল পর্যন্ত বেচাকেনা নেই বললেই চলে। ২০১৯ সালে প্রতিমাসে অন্তত বেচাকেনা হতো ২৫ লাখ টাকার মতো। ২০২০ সালে এসে তা ২-৩ লাখ টাকায় ঠেকে গেছে। করোনা শেষ হলেও স্বর্ণের বাড়তি দরের কারণে সেই বিক্রি এখন ৫ লাখ টাকায় উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ দিশেহারা। তারা আগে খাবে, চিকিৎসা করবে, কাপড় পড়বে নাকি স্বর্ণের অলঙ্কার তৈরি করবে? গেণ্ডারিয়া এলাকায় অন্তত ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। আগে যারা এক ভরি অলঙ্কার তৈরি করত তারা এখন ৪ আনি বা ৬ আনি সোনার অলঙ্কার তৈরির জন্য অর্ডার করেন। আবার যারা ছোট ছোট অলঙ্কার তৈরি করতেন তারা এখন পিতলের ওপর স্বর্ণের প্রলেপ দিয়ে অলঙ্কার তৈরির জন্য অর্ডার করেন।’
এ থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চাইলে সুমন গাজী বলেন, ‘এ শিল্পের যেমন ধ্বস দেখা যাচ্ছে, আবার এই শিল্পই ঘুরে দাঁড়ালে বিপ্লব ঘটে যেতে পারে। এর জন্য বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে অদূর ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়াবে এই শিল্প। আগে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সিঙ্গাপুর ও দুবাই থেকে স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করে বিক্রি করা হতো সেখানে এখন একটি বড় শিল্প গ্রুপ এই শিল্পের হাল ধরেছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন যেন এই শিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই খাত হয়ে উঠতে পারে রেমিটেন্সের জন্য নতুন মাইলফলক।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি এই শিল্পগোষ্ঠীটি জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি শিল্প পার্ক তৈরি করেছেন। যেখানে বিশ্বের সব নামিদামি ডিজাইনের স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করা হবে। যেখান থেকে এশিয়ার অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করে নিয়ে যাবে। এটি হলে রফতারি খাতায় নতুন পণ্য যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো আরও চাঙ্গা হবে বলে আশা করছি।’
মুন্সীগঞ্জের কাঠেরপুল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জুয়েলারি ব্যবসা করে আসছেন অরবিন্দ রায়। বর্তমানে তার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এরপরও তিনি আশা করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাবিশ্বে আধুনিক মেশিনারিজ ব্যবহার করে নতুন নতুন ডিজাইনের স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু এর আগে বাংলাদেশে সোনার গহনা হাতে তৈরি করা হতো। ফলে বাজার হারানোর এটিও একটি কারণ বলে মনে করি। তবে আশার বাণী হচ্ছে দেশে যেহেতু স্বর্ণ শিল্প পার্ক তৈরি হয়েছে। এখন দেশেই আধুনিকমানের উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিত্য নতুন ডিজাইনের স্বর্ণলঙ্কার তৈরি হবে। তখন সিঙ্গাপুর, দুবাই বা অন্য দেশ থেকে স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করতে হবে না। উল্টো অন্য দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করে নিয়ে যাবে। এতে দেশে রেমিট্যান্সের নতুন খাত তৈরি হবে।’
অরবিন্দ রায় আরও বলেন, ‘পাশাপাশি ক্ষুদ্র জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতে হবে। এই খাতে তাদের অবদান অনেক বেশি। সোনার দাম বেড়ে যাওয়া ও বাজার বিদেশে চলে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে পথে বসে গেছে। অনেকে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও ভালো করতে পারছে না। তাদের অনেকে আবার ব্যাক করছে জুয়েলারি ব্যবসায়। এ খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে তাদের ঘুড়ে দাঁড়াবার জন্য কাজ করতে হবে।’
রাজধানীর তাঁতীবাজার এলাকা। যুগযুগ ধরে সোনার মার্কেটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এখানে অনেকে রাজা থেকে ফকির হয়েছে আবার অনেকে জীর্ণকুটির থেকে কোটিপতি হয়েছেন। এ মার্কেটে কত ধরনের স্বর্ণ বেচাকেনা হয় তা সাধারণ মানুষ হয়ত জানেন না। বলা হয়ে থাকে এখানে দেশে স্বর্ণের মোট বিক্রির ৪০ শতাংশ বেচাকেনা হয়ে থাকে। বিদেশ থেকে বৈধ পথে আনা সোনার বিস্কুট গলিয়ে বাংলা করা হয় এই তাঁতী বাজারের শাখারী পট্টিতে।
জুয়েলারি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার গার্মেন্ট শিল্পের পাশাপাশি জুয়েলারি খাতে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে তা বৈদেশিক আয়ে রেকর্ড তৈরি করতে পারে। এ জন্য দরকার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, পাশাপাশি ব্যবসা সংক্রান্ত নীতি ও বিধিগুলোর বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তা করা।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষের স্বর্ণ নীতিমালা
ব্যাগেজ সুবিধায় বিমানবন্দর দিয়ে আসা একজন যাত্রী ২৩৬ গ্রাম স্বর্ণের বার এবং ২০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণালংকার (১০০ গ্রাম বিনা শুল্কে, বাকি ১০০ গ্রাম শুল্ক দিয়ে) আমদানি করার সুযোগ ছিল এতদিন। এতে যাত্রীকে ভরিপ্রতি মাত্র ২ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হতো। অন্যদিকে বাণিজ্যিকভাবে অনুমোদিত ডিলাররা স্বর্ণ আমদানি করলে শুল্ককর দিতে হতো ভরিপ্রতি প্রায় ১২ হাজার টাকা। আমদানি পর্যায়ে প্রতি ভরির শুল্ক কর হবে নির্ধারিত ২ হাজার টাকা এবং মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আগাম করসহ মোট ২০ শতাংশ। যেখানে ব্যাগেজে একজন যাত্রী মাত্র ২ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ আনতে পারে। কিন্তু নতুন অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) একজন যাত্রী তার অর্ধেক অর্থাৎ ১১৮ গ্রাম স্বর্ণ আনতে পারবে বলে প্রস্তাব করা হয়। তাতে বাজার আরও বেশি সংকীর্ণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন জুয়েলারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে পারলে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানি করার অপার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এজন্য বন্ড সুবিধা প্রদান, শুল্ক রেয়াত এবং প্রত্যর্পণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে নীতিমালায়।
গোল্ড রিফাইনারি যুগান্তকারী
সোনা রিফাইনানির জন্য কারখানা তৈরি হচ্ছে দেশে। অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির পর তা কারখানায় পরিশোধনের মাধ্যমে সোনার বার ও কয়েন উৎপাদন করা হবে। সেগুলো রফতানির পাশাপাশি দেশে অলংকার তৈরিতে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি অলঙ্কার রফতানির সুযোগও তৈরি হবে।
জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আধুনিকমানের একটি স্বর্ণ রিফাইনারি কারখানা স্থাপন করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ দরকার। বাংলাদেশে দুটি কোম্পানি এই রিফাইনারি কারখানা করতে চায়। একটি বসুন্ধরা গ্রুপ, আরেকটি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। এ জন্য কোম্পানি দুটির আবেদনের পর প্রাথমিক অনুমোদনও মিলেছে।’
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা আরও বলেন, ‘রিফাইনারি কারখানা হলে কঙ্গো, মালিসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে অপরিশোধিত সোনা আমদানি করা যাবে। তবে পরিশোধিত সোনায় কী রকম শুল্ক ও কর আরোপ করা হবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিদেশ থেকে অপরিশোধিত সোনা দেশে এনে পরিশোধনের বিষয়টি আমাদের জন্য একেবারেই নতুন।’
দরকার গোল্ড এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক
জুয়েলারি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বর্ণ শিল্পকে বিকশিত করতে হলে দরকার দেশে একটি গোল্ড ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ। এখানে দুটি ধাপ থাকবে। একটি হচ্ছে যে কোনো ব্যাংকে গিয়ে একজন গ্রাহক তার কাছে থাকা গোল্ড জমা রাখতে পারবেন। জমাকৃত গোল্ডের বিপরীতে লোন নিতে পারবেন। আবার বিক্রিও করতে পারবেন। লোন পরিশোধ করে জমাকৃত টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। ব্যাংকগুলোতে এটি ছিল যা বর্তমানে নিয়মটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এতে কিছু জুয়েলারির মালিক গোল্ড নিয়ে উচ্চ সুদে লোন দিচ্ছেন। সেই উচ্চ সুদের টাকা পরিশোধ করে গোল্ড ফেরত নিচ্ছেন। আবার অনেকে টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গোল্ডই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
অন্যদিকে গোল্ড এক্সচেঞ্জ হচ্ছে অবিকল শেয়ার বাজারের মতো। একজন গ্রাহক চাইলে শেয়ার বাজার থেকে গোল্ডের কয়েন কিনতে পারবেন। আবার যখন ইচ্ছা তখন বিক্রিও করতে পারবেন। ধরা যাক কেউ একজন এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের কয়েন এক লাখ টাকা দিয়ে কিনলেন। কিছুদিন পর ওই এক ভরি কয়েনের দাম এক লাখ ৫ হাজার টাকা হলো। এতে তার ৫ হাজার টাকা লাভ হলো। এভাবে অনেক গ্রাহক এ ব্যবসায় আসতে পারবেন। তখন কেউ ইচ্ছে করলে (নতুন ব্যবসায়ী) জুয়েলারি ব্যবসা না করে শেয়ার বাজারে গোল্ডের ব্যবসা করবেন। এতে স্বর্ণশিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে জুয়েলারি খাত
স্বর্ণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিশ্বে অলংকার উৎপাদক ও রফতানিকারক দেশের মধ্যে বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং ভারত, চীন অন্যতম। ২০১৯ সালে বিশ্বে মেশিন ও হাতে তৈরি সোনার অলংকারের বাজার ছিল ২২ হাজার ৯৩০ কোটি মার্কিন ডলারের। ২০২৫ সালে আকার বেড়ে ২৯ হাজার ১৭০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।
সুনির্দিষ্ট হিসাব না থাকলেও দেশে বছরে প্রায় ২০-৪০ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা রয়েছে। তার মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদা পুরনো অলংকার দিয়ে মেটানো হয়। বাকিটা ব্যাগজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে আসে। অবৈধভাবেও বিপুল সোনা আসে। তাই সোনার বাজার ও জুয়েলারি ব্যবসায় স্বচ্ছতা ফেরাতে ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সোনা রিফাইনারি কারখানা, গোল্ড নীতিমালা, স্বর্ণ শিল্পের বাস্তবায়ন এবং গোল্ড ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ সম্পন্ন হলে একটা সময় গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে জুয়েলারি খাত। এখন যে পরিমাণ বৈদিশিক মুদ্রা আসে এরচেয়েও বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
আলোর মুখ দেখেনি স্বর্ণ নীতিমালা
২০১৭ সালে যে গতিতে স্বর্ণের নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা গত ৬ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। এখনও এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্পন্ন না হওয়ায় অনেকের মাঝে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। জুয়েলারি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা এটির দ্রুত বাস্তবায়ন চান। তাদের স্বার্থেই এর দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ এর ফলে তাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা একটা নৈতিক ও আইনি ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। তারা মাথা উঁচু করে ব্যবসা করতে পারবেন। প্রায় ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের এ শিল্প আরো বিকশিত হবে। নীতিমালার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এতে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। একজন ক্রেতা তার কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে যে গহনা কিনছেন, তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চয়তা পাবেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে সুখ্যাতি অর্জন সম্ভব
স্বর্ণ নীতিমালা ও স্বর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে দক্ষিণ এশিয়াসহ আন্তর্জাতিক বাজারে সুখ্যাতি অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি— গার্মেন্টস শিল্পের পর দ্বিতীয় কোনো খাত নেই যেখাত সুখ্যাতি অর্জন করেছে। নানান জায়গা থেকে একেকজন চেষ্টা করছেন আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির মাধ্যমে সুখ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের। কিন্তু কোনো খাত এগুতে পারছে না। প্রবাসী আয় এই বাড়ে এই কমে। এখন পর্যন্ত শক্ত ভীত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গার্মেন্টস খাত। স্বর্ণ শিল্প সবধরনের পৃষ্টপোষকতায় দাঁড়াতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে গার্মেন্টস শিল্পকে পাল্লা দেবে এবং বৈদিশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি সুখ্যাতি অর্জন হবে।
বাজেট, শুল্ক-কর বৈষম্য
নতুন নিয়মে বিদেশ থেকে একজন যাত্রী শুল্ক পরিশোধ করে ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণের বার আনতে পারবেন। ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা অনুযায়ী আগে একজন যাত্রী বিদেশ থেকে ২৩৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার আনতে পারতেন।
বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ থেকে আসা একজন যাত্রীকে ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম বা ১ ভরি স্বর্ণ আনার জন্য শুল্ক ছিল ২ হাজার টাকা। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে একই পরিমাণ স্বর্ণ আমদানিতে শুল্ক ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে।
জুয়েলারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ‘বাজেটে শুল্ক কর বৈষম্য করা হয়েছে নতুন বাজেটে। এই শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সবধরনের চেষ্টা করছে। ঠিক এমন সময়ে বাজেটে শুল্ক বাড়ানোয় এই খাতের ব্যবসায়ীরা অনেকটা ধাক্কা খাওয়ার মতো অবস্থায় পড়েছেন।’
সারাবাংলা/ইউজে/একে