Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জ্বর-সর্দি বোধ করলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাবেন কোথায়?

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট 
১০ জুলাই ২০২৩ ১০:০৯

ঢাকা: দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একইসঙ্গে এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে ভর্তির প্রথম তিন দিনেই মারা যাচ্ছেন। সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় রোগীরা চলে যাচ্ছেন শক সিনড্রোমে।

এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে জ্বর-সর্দি অনুভব করলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে যথাসময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোটাও খুবই জরুরি। জ্বর-সর্দিসহ ডেঙ্গুর যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে পরীক্ষার পরামর্শ তাদের।

বিজ্ঞাপন

কোথায় করাবেন নমুনা পরীক্ষা?

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেও প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় এনএস-১ নমুনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই ডেঙ্গুর পরীক্ষা হচ্ছে। এর বাইরে যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষাটি করার সক্ষমতা আছে, তারাও সেটি করতে পারবে। এক্ষেত্রে জেলাপর্যায়ে সিভিল সার্জন অফিস এটি মনিটরিং করবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকা মূল্যে এনএস- ১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে এনএস-১ নমুনা পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ডেঙ্গু পরীক্ষার মূল্য খুবই কম। তাই সবার উচিত কারও জ্বর, সর্দি বা কাশি হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষাটা করিয়ে নেওয়া উচিত। কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। আগেই যদি ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসাও আগে শুরু করা যায়। এতে করে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আক্রান্তদের ঝুঁকিও অনেকটা কমে যায়।’

ডেঙ্গু পরীক্ষা বিষয়ে জানতে চাইলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিয়াতুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টাই ডেঙ্গু পরীক্ষা হয়। ১০০ টাকার বিনিময়ে যে কেউ এসে পরীক্ষা করাতে পারেন। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি যে হাসপাতালে যেকোনো ভর্তির রোগী আসলেই প্রথমে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করানো, এরপর ইনডোরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্যাথলজি বিভাগে রাত ৮টা পর্যন্ত যে কোনো পরীক্ষা করানো যায়। ডেঙ্গু ও করোনার পরীক্ষা ২৪ ঘণ্টাই করা হয়। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে এসেই এনএস- ১ পরীক্ষাটি করে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এটি ডেঙ্গু নয়।’

কখন করানো প্রয়োজন নমুনা পরীক্ষা?

ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘যখনই রোগী জ্বর বা অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া অনুভব করবেন তখন তার প্রথম কাজই হবে রেজিস্টার্ড (নিবন্ধিত) চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। এছাড়া তিনি হাসপাতালে এসে জরুরি বিভাগেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। উভয় ক্ষেত্রে দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। যদি ডেঙ্গুর রিপোর্ট পজিটিভ হয়, তাহলে তার চিকিৎসা এক রকম হবে, নেগেটিভ আসলে চিকিৎসা হবে অন্য রকম।’

কোন কোন উপসর্গ দেখলে নমুনা পরীক্ষা প্রয়োজন?

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘এবার আমাদের এখানে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে তাদের মাঝে অন্যতম যে লক্ষণ দেখা গেছে তা হলো বমি। কারও দীর্ঘস্থায়ী বমি হলে, এমনকি সেটি ওষুধ খেয়েও না কমলে দ্রুত হাসপাতালে এসে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছু উপসর্গ হলো- ডায়রিয়া, পেটব্যথা, শরীরে পানি জমে যাওয়া, বুকে-পেটে পানি জমা, মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত সমস্যা, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।’

তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে বলব যে যখনই আপনি শরীরে অস্বাভাবিক কোনো সমস্যা দেখতে পাবেন, দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যে আপনি ডেঙ্গু আক্রান্ত নন।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দেখছি যে অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু তারা সময় মতো পরীক্ষা করছেন না। এতে করে তারা নিজেদেরই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। আর যে অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন, সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। এজন্য বলব, যারই ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তারই দ্রুততার সঙ্গে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘ছোট বাচ্চা, বয়স্ক এবং যাদের অন্যান্য রোগ আছে, ডেঙ্গুতে তাদের ঝুঁকিটা একটু বেশি। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, কিডনি, লিভার, স্ট্রোক ও ক্যান্সারের রোগী, তাদের একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কালক্ষেপণ না করে দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘ডেঙ্গু পরীক্ষাসহ ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমরা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করে দিয়েছি। গাইডলাইন অনুযায়ীই সবাইকে চিকিৎসা দিতে হবে। প্লাটিলেট ব্যবহার নিয়েও গাইডলাইনে নির্দেশনা রয়েছে। একইভাবে কোন পরীক্ষার ফি কত হবে সেটিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।’

সারাবাংলা/এসবি/ইআ

ডেঙ্গু আক্রান্ত ডেঙ্গু পরিস্থিতি ডেঙ্গু পরীক্ষা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর