গ্রামীণ কল্যাণের ১০৬ জনের মুনাফা নিয়ে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ
১১ জুলাই ২০২৩ ০০:০৪
ঢাকা: গ্রামীণ কল্যাণের সাবেক ১০৬ কর্মীকে মুনাফার অংশ দিতে নির্দেশ দিয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় অবৈধ ঘোষণা প্রশ্নে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। সেইসঙ্গে এই সময়ে ১০৬ শ্রমিককে মুনাফা দিতে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের ওপর হাইকোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থা স্থগিতই থাকবে বলে জানিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আবেদন নিষ্পত্তি করে সোমবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. গোলাম রাব্বানী শরীফ। গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।
আদেশের পর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, শ্রমিকদের মুনাফা দেওয়ার ট্রাইব্যুনালের রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থা স্থগিত করেছিলেন চেম্বার আদালত। সে স্থগিতাদেশ চলমান রেখে সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টকে দুই মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
গ্রামীণ কল্যাণ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ কোম্পানিভুক্ত একটি অলাভজনক সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান।
শ্রম আইনে বলা আছে, শ্রম আইন কার্যকর হওয়ার দিন থেকে কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণ ও অংশগ্রহণ তহবিল দিতে হবে। ১০৬ জন শ্রমিক ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বিভিন্ন পদে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। তাদের কেউ অবসরে গেছেন। আবার কাউকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। কিন্তু চাকরির পর প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার কোনো অংশ তারা পাননি। অথচ ২০২১ সাল থেকে গ্রামীণ কল্যাণের মুনাফার অংশ শ্রমমিকদের দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে এই শ্রমিকরা মুনাফার অংশ চেয়ে প্রথমে গ্রামীণ কল্যাণের কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ দেন। সাড়া না পেয়ে পরে গ্রামীণ কল্যাণের সাবেক ১০৬ কর্মী শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল থেকে মুনাফা (২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত) পেতে শ্রম আইনের ২৩১ ধারায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা (ব্যাখ্যামূলক) করেন। এর শুনানি নিয়ে গত ৩ এপ্রিল এ মামলার রায় দেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ট্রাইব্যুনাল আইন-বিধি অনুসারে ২০০৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সময়ের মুনাফার অংশ দিতে নির্দেশ দেন।
রায়ে গ্রামীণ কল্যাণের সাবেক ১০৬ কর্মী ‘শ্রমিক কল্যাণ তহবিল’ ও ‘শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল’ থেকে মুনাফা পাওয়ার অধিকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে ওই রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম মইন উদ্দিন চৌধুরী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩০ মে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। সেইসঙ্গে অন্তবর্তী আদেশে হিসেবে ট্রাইব্যুনালের রায়ের ওপর ছয় মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে শ্রমিকদের মুনাফার অংশ দিতে নির্দেশ দেওয়া শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়। ফলে ফলে ১০৬ শ্রমিকের মুনাফা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া আটকে যায়।
পরে ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন শ্রমিকেরা। শুনানির পর হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ গত ২২ জুন স্থগিত করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত। পাশাপাশি আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আজকের দিন (১০ জুলাই) ধার্য করে দেন।
পরে এর ধারাবাহিতকায় আবেদনটি আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। এদিন শুনানি শেষে দুই মাসের মধ্যে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম