মাঠে গড়াচ্ছে বিএনপির আন্দোলন, ভোটের পরেও ‘চলবে ৩ মাস’
১১ জুলাই ২০২৩ ২৩:৩১
ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘টার্গেট’ করে মাঠে গড়াচ্ছে বিএনপির আন্দোলন। বুধবার (১২ জুলাই) নয়াপল্টনে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। বিএনপিমনা জোট এবং রাজনৈতিক দলগুলোও একযোগে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তবে হরতাল-অবরোধ-ঘেরাও কর্মসূচিতে আপাতত যাচ্ছে না তারা। রোড মার্চ, লং মার্চ, পদযাত্রার মতো ‘জনসম্পৃক্তকরণ’ কর্মসূচিতে থাকছে সরকারবিরোধীরা।
জানা গেছে, সরকারবিরোধী এ আন্দোলন ভোট পর্যন্ত টেনে নিতে চায় বিএনপি। আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার লক্ষ্য তাদের। এ আন্দোলনে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও যুক্ত করার বিশেষ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তারা, যাতে চূড়ান্ত আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এমন চিন্তা থেকেই সব বিভাগে প্রথমে ‘বিভাগীয় সমাবেশ’, ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘পদযাত্রা’ এবং সব শেষ বিভাগে বিভাগে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করেছে বিএনপি। সমাবেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ ‘আশাবাদী’ করেছে দলটিকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন সারা দেশে ইউনিয়নগুলোতে পদযাত্রার পর জেলা ও মহানগরে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়, তখন রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে ‘লংমার্চ’ বা ‘ঘেরাও’ কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির। যেখান থেকে সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলন শুরু হতে পারে। পাঁচ মাস পরে এসে বুধবার (১৩ জুলাই) সেই কর্মসূচি ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, যে কর্মসূচি মাঠে গড়াচ্ছে দাবি আদায় না হয়ো পর্যন্ত সেটা অব্যাহত থাকবে। শুরু হতে যাওয়া এ আন্দোলন কর্মসুচি নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নেবে বিএনপি। প্রয়োজন হলে ভোটের পর টানা তিন মাস চলবে তাদের এই আন্দোলন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘অতীতে আমরা আন্দোলনে বিরতি দিয়েছিলাম। এবার আর বিরতি দেব না। যে আন্দোলন আমরা শুরু করতে যাচ্ছি, সেটা নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নেব। যদি তারা (আওয়ামী লীগ) অতীতের মতো এক তরফা নির্বাচন করে ফেলে, তাহলে ভোটের পর অন্তত টানা তিন মাস আমাদের আন্দোলন চলবে। এবার আর জোর করে ক্ষমতায় থাকবে পারবে না।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি, অংশগ্রহণ পরিস্থিতি বুঝে
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ‘এবারের আন্দোলনের একটা শেষ দেখতে চান বিএনপি নেতারা। গতবছর জুলাই মাস থেকে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে তারা। দলের কেন্দ্রীয় দফতরের তথ্যানুযায়ী, এসব কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে এবং ক্ষমতাসীন দলের হামলায় এ পর্যন্ত ১৭ জন নেতা-কর্মী মারা গেছেন।
গত বছরের ৩০ জুলাই থেকে এ বছর ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ হাজার ১১৩ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৫৪২টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় আরও ৭৮ হাজার ৮১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ২ হাজার ৫৫৫ নেতা-কর্মীকে। আর চলতি বছরের ১৯ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত পর্যন্ত সারাদেশে মোট মামলা হয়েছে ২১০টি, গ্রেফতার হয়েছে ৮৩০ জনের বেশি নেতা-কর্মী। এ ছাড়া আসামি করা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার তিনশ’র অধিক নেতা-কর্মীকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এমন পরিস্থিতিতে আর পিছু হটতে চান না বিএনপি নেতারা। সামনের কর্মসূচিগুলোতে দলটির সিনিয়র নেতারা মাঠে নামবেন, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হয়। তারা বলছেন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সবসময় একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রাখে। কিন্তু এবার আর সেই সুযোগ পাবে না তারা। কারণ, বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে। অধিকন্তু মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে প্রচণ্ড চাপে আছে সরকার। বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস- গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি তেল, চাল, ডাল, আটা, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনগণের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোনভাব এখন চরমে।
এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের একদফা দাবিতে বুধবার (১২ জুলাই) কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। তাদের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টিও আলাদা আলাদা প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘একদফা’ কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের দেওয়া তথ্যমতে, বুধবার (১২ জুলাই) দুপুর ২ টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি, বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিকেল ৩টায় ডিআরইউ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে ১২ দলীয় জোট, বিজয়নগর পানির ট্যাংকসংলগ্ন আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এফডিসিসংলগ্ন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এলডিপি, মতিঝিল নটরডেম কলেজের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে গণফোরাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে গণঅধিকার পরিষদ (নুর) ও গণঅধিকার পরিষদ (রেজা), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ‘একদফা’ কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
বিএনপি এবং জোট শরিকরা মনে করছেন, এখনই বড় আন্দোলন গড়ে তোলার উপযুক্ত সময়। দেশে বিদেশিদের আনা-গোনা বেড়ে গেছে, আর্থিক সংকটের কারণে সরকারও কিছুটা চাপে আছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে, সর্বোপরি আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে আছে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক নেতৃত্ব ও সময়পোযোগী কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকতে পারলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনগণের আন্দোলন কখনও ব্যর্থ হয় না। দেশে গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই— এগুলোর সঙ্গে জাতির অস্তিত্ব জড়িত। আমরা বিশ্বাস করি, আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হব। সরকার বাধ্য হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম