Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেন্দ্রের সহায়তা নেই, এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে সাদামাটা আয়োজন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুলাই ২০২৩ ২৩:৩৪

ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার (১৪ জুলাই)। তবে এবারও সাদামাটাভাবে পালন করা হচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রপতির মৃত্যুবার্ষিকী। কারণ, মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলাগুলোতে কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়নি কোনো আর্থিক সহায়তা। এমনকি এবারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো পোস্টার জেলাগুলোতে যায়নি।

এদিকে, বৃহত্তর রংপুরের প্রত্যেক জেলায় নেতাকর্মীদের সাধ্য মতো তাদের নেতা এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে তাদের এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা না দেওয়া ক্ষুব্ধ এরশাদের দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরের জাপা নেতারা।

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন প্রস্তুতি কমিটির সভায় পোস্টার ছাপানোর প্রস্তাব উঠলে তা বাতিল করে দেওয়া হয়। কারণ, সারাদেশের জন্য পোস্টার ছাপানোর টাকা জাপার তহবিল থেকে দিতে চায় না। তাদের যুক্তি, বৃষ্টির দিনে পোস্টার লাগানো হলে তা নষ্ট হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের এই দিনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দিনটি উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং স্মরণসভাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানকে স্মরণ করবে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।

তবে এবারের মৃত্যুবার্ষিকীতে উপস্থিত থাকছেন না তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ ও পুত্র সাদ এরশাদ এমপি। গত ১০ জুলাই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য থাইল্যান্ড গেছেন রওশন এরশাদ। আর তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পুত্র সাদ এরশাদ ও তার স্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

মৃত্যুবার্ষিকী পালন নিয়ে বৃহত্তর রংপুরের এক নেতা বলেন, ‘এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার জন্য বৃহত্তর রংপুরের প্রতিটি মসজিদের ইমামের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইমাম সাহেব জুম্মার নামাজের পর এরশাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করবেন।’

অপর এক নেতা বলেন, ‘এরশাদ সাহেব বৃহত্তর রংপুরের রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন করেছেন। তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি ঢাকায় গিয়ে, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেছি। অনেক স্মৃতি তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে এরশাদ সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করব।’

এদিকে, ঢাকা মহনগরের এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আস্তে আস্তে এরশাদ সাহেবকে জাতীয় পার্টির নেতারা ভুলে যাচ্ছে। তারা মুছে ফেলতে চাইছে এরশাদের নাম। অথচ এইসব নেতাদের এমপি-মন্ত্রী বানিয়েছেন এরশাদ সাহেব। এখনও তারা এমপি হচ্ছেন এরশাদের নামে। অথচ এরশাদ সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকীতে পোস্টার ছাপিয়ে সারাদেশে বিলি করার প্রস্তাবও বাতিল করে দেওয়া হয়।’ তবে ঢাকার জন্য মাত্র ১০ হাজার পোস্টার ছাপানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকায় জাতীয় পার্টির কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ৭টায় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মিলনায়তনে হবে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত। বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি।

এ ছাড়া এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর জাপার সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১০ হাজার দুঃস্থ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন। আর আ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়াও তার নির্বাচনি এলকায় ব্যক্তিগতভাবে গরীব-দুঃখী মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক রুবেল ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানিকগঞ্জ পৌরসভা ও সাটুরিয়া এলাকার ১০ হাজার গরীব মানুষের মাঝে খাবার বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে তার পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এরশাদ। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্টে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে এরশাদকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেফতার হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জেলে বন্দি অবস্থায় এরশাদ সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি করে আসনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন তিনি। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে জয়ী হয়। এরপর দশম ও চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। চলতি একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালনের মধ্যেই অসুস্থ হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে তাকে সিএমএইচে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

এরশাদ টপ নিউজ মৃত্যুবার্ষিকী সাদামাটা আয়োজন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর