Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুপ্রিম কোর্টে উদ্বোধনের অপেক্ষায় ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ’

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২৩ ১৯:১৫

ঢাকা: স্বাধীনতার ৫ দশক পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মারক স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। শিগগিরই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্তম্ভটি। ১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনের দিন বঙ্গবন্ধু যে স্থানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন ঠিক ওই স্থানেই তাকে নিবেদন করে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ’। স্তম্ভে স্থান পেয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৬৯ জন আইনজীবীর নামের তালিকা।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মারক স্তম্ভের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এরপর গত কয়েক মাস ধরে চলেছে এর নির্মাণ কাজ। স্মারক স্তম্ভ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্মারক স্তম্ভের কাজ দ্রুত শেষ করতে ঈদুল আজহার ছুটির সময়েও তারা কাজ করেছেন।

স্মারক স্তম্ভে ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর সংবিধানে স্বাক্ষররত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বক্তৃতারত ছবি মুর‌্যাল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত স্মারক স্তম্ভে সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং সংবিধানের ৯৪ এবং ৯৫ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করা হয়েছে।

এছাড়া স্মারক স্তম্ভে নাম থাকা মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ৬৯ আইনজীবী হলেন— যশোরের এম মশিউর রহমান, কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, পাবনার মুহাম্মদ আমিন উদ্দিন, ঢাকার আবদুল আহাদ, এ কে এম সিদ্দিক (হেনা মিঞা), খন্দকার আবু তালেব, দীনেশ চন্দ্র রায় মৌলিক, মো. মফিজুর রহমান, সৈয়দ আকবর হোসেন (বকুল মিয়া), দেওয়ান মাহবুব আলী, বাবু লাল মোহন শিকদার, মোহাম্মদ ইছহাক, চট্টগ্রামের রায় সাহেব কামিনী কুমার ঘোষ, আবুল হোসেন, নজমুল হক সরকার, বীরেন্দ্রনাথ সরকার, মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা খান, খুলনার আবদুল জব্বার, এস এম আইয়ুব হোসেন, আবদুর রহিম, সিলেটের মো. আব্দুল হাফিজ, রামরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, বরিশালের জিতেন্দ্রলাল দত্ত, সুধীর কুমার চক্রবর্তী, রংপুরের এ ওয়াই মাহফুজ আলী (জররেজ মিয়া), পূর্ণচন্দ্র সরকার, শিবেন্দ্রনাথ মুখার্জি, বিজয় চন্দ্র মিত্র, নারায়ণগঞ্জের অখিল চন্দ্র দাস, মো. ফজলুল হক, মুন্সিগঞ্জের অনিল চ্যাটার্জী, নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল, মন্মথ মুখার্জি, কেদার রায় চৌধুরী, ফরিদপুরের জিতেন্দ্রনাথ সেন, রাজবাড়ীর কালীশঙ্কর মৈত্র, কক্সবাজারের জ্ঞানেন্দ্রলাল চৌধুরী, বৌধেন্দ্র বিকাশ ভট্টাচার্য, নোয়াখালীর নরেন্দ্রনাথ ভৌমিক, রায় সাহেব নগেন্দ্র কুমার শূর, মনীন্দ্র কুমার সরকার, নরেন্দ্র কুমার নাথ, কুমিল্লার অতীন্দ্রনাথ ভদ্র, কাজী আবদুল মালেক, প্রসন্ন কুমার ভৌমিক, যতীন্দ্র কুমার ভদ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবু শামস জহুরুল আলম, নওগাঁর আবদুল জব্বার, মো. আবু ফারুক চৌধুরী, আবদুল জব্বার, নগেন্দ্রনাথ নন্দী, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার সফিউদ্দিন, যশোরের সুশীল কুমার রায়, সৈয়দ আমীর আলী, আবদুর রশিদ খাঁন, কুষ্টিয়ার আবদুল গণি, ঝিনাইদহের শেখ হাবিবুর রহমান, সাতক্ষীরার কাজী মোহাম্মদ মছরুর আহমেদ (ক্যাপ্টেন কাজী), নড়াইলের মামুনুর রশিদ, ঝালকাঠি মহিউদ্দিন খান, জাহাঙ্গীর হোসেন, পিরোজপুরের রায় বাহাদুর ললিতকুমার বল, সুনামগঞ্জের সুনাহার আলী, দিনাজপুরের সুমঙ্গল কুমার কুণ্ডু, মো. হাবিবুর রহমান, নেত্রকোণার অখিল চন্দ্র দাস, ফজলুল হক ও লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন নিজ দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। পরদিন ১১ জানুয়ারি ‘দি প্রভিশনাল কন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। ওই আদেশের অনুচ্ছেদ ৯-এ উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট থাকবে— যা একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতি যারা সময়ে সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে।

ওইদিনই রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাইকোর্ট।

রাষ্ট্রপতির ১১৪ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ’ (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) আদেশ দ্বারা রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশের কার্যকারিতা দেওয়া হয় ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আসেন বঙ্গবন্ধু। সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেন প্রাঙ্গণের যেখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানেই নির্মিত হয়েছে এই স্মারক স্তম্ভ।

সেদিন বঙ্গবন্ধু উদ্বোধনী ভাষণে বলেছিলেন, ‘আজ সত্যিই আনন্দ প্রকাশ করতে হয় এজন্য যে, স্বাধীন বাংলার মাটিতে আজ আমাদের স্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীন জাতি হিসেবে যদি স্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট না থাকে তাহলে সে জাতি পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না।’

উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমাদের সুপ্রিম কোর্ট, আজ আমাদের দেশে আইনের শাসন হতে চলেছে, তাদের আমাদের স্মরণ করা প্রয়োজন।’

কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে শহিদ আইনজীবীদের নামফলক দেখতে না পেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে, ‘আমি নিশ্চয়ই সুখী হতাম, যেমন পিজি হসপিটালে গিয়ে দেখি যে, এতজন ডাক্তারের নাম, যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের নাম লেখে ফলক করে রাখা হয়েছে। আমি সুখী হতাম বারের সদস্য ভাইয়েরা, যে যে সহকর্মীরা যারা শহীদ হয়েছেন— এই সুপ্রিম কোর্টের গেটে এসে দেখতে পেতাম যে শহীদের নাম সেখানে লেখা রয়েছে।’

এর দীর্ঘ পাঁচ দশক পর গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর (সুপ্রিম কোর্ট দিবস) ওই স্থানে (সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণ) বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোশিয়েশনের) সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক আব্দুন নূর দুলালসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলন।

স্মারক স্তম্ভ উদ্বোধন সম্পর্কে জানতে চাইলে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে বঙ্গবন্ধুর স্মারক স্তম্ভের নির্মাণকাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই এই স্মারক স্তম্ভের উদ্বোধন করা হবে। তবে উদ্বোধনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ তিনি জানাতে পারেননি।’

তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ উদ্বোধনের জন্য চলতি মাসের সম্ভাব্য ৩০/৩১ তারিখ দিন ঠিক করা হয়েছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও

বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ সুপ্রিম কোর্ট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর