বর্তমান রেজিমের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়— ইইউ কে বিএনপি
১৫ জুলাই ২০২৩ ১৩:৪২
ঢাকা: বর্তমান রেজিমের (বর্তমান সরকার) অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশনকে জানিয়েছে বিএনপি।
শনিবার (১৫ জুলাই) গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্লয়ে ইইউ’র ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশনের সঙ্গে সোয়া এক ঘণ্টা বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ, নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্য না, এটাই তো ভিত্তি। এই ভিত্তির ওপরে তো আজ সারাবিশ্ব বাংলাদেশের দিকে নজর দিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের কনসার্ন প্রকাশ করছে। এজন্য তারা (ইইউ) আসছেন, জানতে চাচ্ছেন আগামী দিনে বাংলাদেশের নির্বাচন জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কি হবে না।’
‘আমাদের পক্ষ থেকে যেটা আমরা সব সময় বলে এসেছি, আমরা শুধু বলছি না, দেশের জনগণ যেটা বলছে, বিশ্ব বিবেক যেটা বলছে- এই রেজিমের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না, সম্ভব না। কারণ বিশাল। এত কারণ আমি এখানে বলতে পারব না’— বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কারণগুলো আপনারাও (গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা) জানেন, বিশ্ববাসীও জানে। যে কারণে আজকে এখানে তারা (ইইউ দল) আসছেন।’
আমীর খসরু বলেন, ‘এই যে ডিসিদের পোস্টিং হচ্ছে, এসপিদের পোস্টিং হচ্ছে, টিএনওদের পোস্টিং হচ্ছে, বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার চলছে। এই দুই তিন দিনের মধ্যে আমাদের কর্মসূচিতে আক্রমণ হয়েছে, হাত কেটে ফেলছে, বিএনপির জনসভায় আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল দলের পদযাত্রায় আসা নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করে বাধা দেওয়া হয়েছে। এটা তো অব্যাহতভাবে চলছে। বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার বিচারকে তরান্বিত করে তাদের শাস্তি দিয়ে তারা যাতে নির্বাচন করতে না পারে, এসব কাজগুলো চলছে। অর্থাৎ ভোট চুরি বাংলাদেশের প্রত্যেক দিন চলছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা (সরকার) আগে এ রকম ভোট চুরির কাজ করেছে, এখনো চলছে এই ভোটচুরি। আগামীদিনেও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতায় যাবে। এই বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে আলোচনা হয়েছে। আমরা এগুলো তাদের (ইইউ) বলেছি। শেষ কথা হচ্ছে এই রেজিমের অধীনে বাংলাদেশের মানুষ ভোট প্রয়োগ করতে পারবে না, তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে না— এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এসব সকলেরই জানা আছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই আলোচনায় এসেছে।’
গত দুইটি নির্বাচনে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি এবার তারা পাঠাবে কি না— জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘সেটা তো তাদের (ইইউ) সিদ্ধান্ত। পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি পাঠাবে না সেটা তাদের বিষয়। এটার তো আমি উত্তর দিতে পারব না।’
‘আগে তো বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে। পর্যবেক্ষকের প্রশ্ন তখনই আসে যখন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। বাংলাদেশে তো নির্বাচনের সম্ভাবনা এই মুহূর্ত পর্যন্ত দেশের জনগণ, বিশ্বের জনগণ বিশ্বাস করে না। সুতরাং এই প্রেক্ষাপটে যে সিদ্ধান্ত তারা দেবে, সেটা তাদের ব্যাপার। তবে তারা এখানে আসার উদ্দেশ্যটা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয় না’— বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘তারা তো নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা কোথাও কিন্তু যাচ্ছেন না। কেন তারা বাংলাদেশে আসছে। বিষয়টা তো দিনের আলোর মতো পরিস্কার যে, বাংলাদেশে নির্বাচন হয় না। আগামী নির্বাচন যে হবে না এটার লক্ষণ তো প্রত্যেকদিনই আমরা দেখছি। আক্রমণ, জেল, মিথ্যা মামলা, ডিসি-এসপি-টিএনও পোস্টিং, কর্মীদের কব্জি ছিন্ন করে ফেলা, বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করা, দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবহার করা, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা— এসব তো প্রতিনিয়ত চলছে ‘
সংলাপের পরিবেশ যদি থাকে সেখানে বিএনপি যাবে কি না— জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘ যেখানে কোনো ডেমোক্রেটিক অর্ডার নাই। মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ, আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ, জীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে সংলাপ কীভাবে? সংলাপের জন্য একটা ডেমোক্রেটিক অর্ডার লাগে, সংলাপ তো ডেমোক্রেটিক অর্ডারের অংশ। বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকারহীন হয়ে আছে। পরিবেশ আগে ক্রিয়েট করতে হবে। তারপর সংলাপের প্রশ্ন আসবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশনের নেতৃত্ব দেন রিকার্ডো শেলেরি। বৈঠকে বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস